রংপুর এক্সপ্রেসের দেরি, আসন বিন্যাসে গড়মিল
ঈদে রংপুরগামী যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ‘স্পেশাল রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি শনিবারও (১ জুন) সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর ছেড়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৩১ মে) ট্রেনটি কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছিল।
শুধু তাই নয়, দেড় ঘণ্টা পর ট্রেনের দেখা পেলেও টিকিটে আসন উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, রংপুর এক্সপ্রেস সোয়া এক ঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ১০টার দিকে। ট্রেনটির ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৯টা। কমলাপুর স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর এক্সপ্রেসের নিয়মিত যে ট্রেন সেটি নির্ধারিত সময়ের পরও কমলাপুর এসে না পৌঁছানোয় শেষ পর্যন্ত এ ট্রেনের যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনার একটি বগি যুক্ত করা হয়। ফলে আসন বিন্যাসেও আনা হয় পরিবর্তন।
এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। সকাল ১০টার দিকে এ ট্রেনের যাত্রী ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমি টিকিট কেটেছি এসি রুমের। কিন্তু এসি বগিতে আমি আমার আসন খুঁজে পাচ্ছি না। এমনিতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি, তার ওপর সিটের ঠিক নেই। ট্রেনে যারা আছেন, তারাও কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।
এই ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে ট্রেন ব্যবস্থাপনা, সময়সূচি কোনো দিনও ঠিক হবে না। নির্ধারিত আসন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ট্রেনেরই আরেক যাত্রী মো. আবুল বাশার।
তিনি বলেন, আমি কোনো আসনই পাইনি। সঙ্গে আমার স্ত্রীও আছেন। কীভাবে যাব আল্লাহই জানেন। স্টেশন ম্যানেজারকে পর্যন্ত বললাম, তারপরও কিছু হয়নি।
পরে ট্রেন ছাড়ার সময়ও এই যাত্রীকে ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবুল বাশারের মতো অনেক যাত্রীকে এ অভিযোগ করতে দেখা গেছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকাল থেকে সারাদিনে ৫২টি ট্রেন আমরা চালাব। এর মধ্যে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন মিলে (সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ) ১৭টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়তে শুক্রবার সাত ঘণ্টা দেরি হয়েছিল। মন্ত্রীর নির্দেশনায় শনিবার আমরা বিকল্প রেক (একটি ইঞ্জিন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বগি জোড়া দিয়ে তৈরি হয় একটি রেক) দিয়ে চালাচ্ছি।
আসন বিন্যাসে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি ম্যানেজার আমিনুল হকও স্বীকার করেন। এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ট্রেনটিতে আমরা সাধ্যমত আসন রিপ্লেস করেছি। দু’টি এসি চেয়ারকোচ কম থাকায় ফার্স্টক্লাস চেয়ারে বা ফার্স্টক্লাস কেবিনে আসন দিয়েছি। সবগুলো আসনই আমরা বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসন সংকুলান করতে না পারায় কিছু আসন সাধারণ শ্রেণিতে দিতে হয়েছে।
রংপুর এক্সপ্রেসের সূচি পরিবর্তনের কারণ বলতে গিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৩০ মে আমরা ট্রেনটি রাইট টাইমে ছেড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেতুতে যাওয়ার পর ট্রেনটির একটি কোচ ড্যামেজ হয়ে যায়। ফলে ওইখানেই প্রায় তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগেছিল। এজন্য শনিবারও সেটি ছাড়তে দেরি হয়েছে। আশা করছি, রোববার থেকে দেরি হবে না।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৩১ মে) দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের তিন নম্বর প্লাটফর্ম থেকে রংপুরের উদ্দেশে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায় রংপুর এক্সপ্রেস। ওই দিন সকালে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করে সিডিউল বিপর্যয়সহ যাত্রী দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে যাত্রীদের কাছে ক্ষমাও চান। সমস্যা সমাধানের জন্য রোববার রংপুরে নতুন আরেক জোড়া ট্রেন যুক্ত হবে। এর ফলে যথাসময়ে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলবে এবং সিডিউল বিপর্যয় আর হবে না।