যেভাবে নির্ধারিত হয় ওষুধের মেয়াদ
হঠাৎ করেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফার্মেসিগুলো থেকে সংরক্ষিত মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত নিয়ে আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে সঠিক নিয়মে ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে ঢাকার ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয় বলে তথ্য উঠে এসেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক রিপোর্টে। গত ছয়মাস নিয়মিত বাজার তদারকি করে তারা এ রিপোর্ট তৈরি করে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১০০টি ফার্মেসির মধ্যে ৯৩টি ফার্মেসিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এমন বক্তব্যে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। ভোক্তারাও ভাবছেন, আসলে রোগ নিরাময়ের জন্য যে ওষুধ সেবন করছেন, সেটা উল্টা ক্ষতি করছে নাতো?
আলোচনায় রয়েছে, ওষুধের মেয়াদ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াও। কীভাবে নির্ধারিত হয় ওষুধের মেয়াদ? বার্তা২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য ওষুধের মেয়াদ নির্ণয়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে যা বলছেন ঢাবির দুই শিক্ষক
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের (ঢাবি) ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি এন্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসর মনিরুদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে জানান, ১৯৭৯ সালের আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের একটি আইন অনুযায়ী, এই তারিখ দেওয়ার সিস্টেম চালু হয়। অর্থাৎ ওষুধ কোম্পানিগুলো, ল্যাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিছু জটিল পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়-জলীয়বাষ্পে ও আলোর ভেতরে রাখাসহ অনেক পরিস্থিতিতে ওষুধগুলোকে পরীক্ষা করতে হয়। সেক্ষেত্রে আবার ওই তাপমাত্রা বা পরিস্থিতির ওষুধের অবস্থানের ডাটা সংগ্রহ করার প্রয়োজন পড়ে।
তিনি বলেন, 'এমন পরিস্থিতিতে, সময়ে সময়ে ওষুধের কার্যকারিতা দেখতে হয়। মানব শরীরে কেমন কাজ করছে ওষুধটি। তিনদিন, পাঁচদিন, একমাস, সাতমাস, একবছর, তিনবছর এইভাবে দেখতে হয়। একটা সময় এসে দেখা যায়, ওই ওষুধের গুণগত মান কমে গেছে। কমে যখন ৫০ শতাংশের পর্যায়ে আসবে তখন মার্ক করে রাখতে হয়। তবে গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, কতদিন পর একই পরিস্থিতিতে ওষুধের কার্যকারিতা শূন্য শতাংশে নেমে আসে। যেদিন নেমে আসবে সেদিন হবে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ।'
মনিরুদ্দিন বলেন, 'মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের অর্থ হলো, এই সময়ের মধ্যে ওষুধটি সেবন করলে কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা শতভাগ থাকবে। এর পরে যদি কেউ ওই ওষুধ সেবন করেন তার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা শতভাগ পাওয়া যাবে না।'
ওষুধ নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পড়াশোনা করা এই প্রফেসর বলেন, 'তবে এটা ভাবার কোন দরকার নেই যে, কয়েকটি সংবেদনশীল ওষুধ ছাড়া, অন্য কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সেবন করলে কেউ মারা যাবে। তবে ওষুধের কার্যকারিতা পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ অসুখ ভাল হবে না। আবার তরল জাতীয় এমন অনেক ওষুধই আছে, যা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কার্যকারিতা হারাতে পারে।'
অন্যদিকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের বেশকিছু ওষুধ কোম্পানি আন্তর্জাতিক মানের ওই পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না। যার ফলে ওষুধের কার্যকারিতা শুরু থেকেই শতভাগ থাকে না।'