মানিকগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় যুবক খুন
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজনের আঘাতে হাবিনুর রহমান (২২) নামের এক যুবক খুন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম নাওডুবি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক বাল্লা ইউনিয়নের মাচাইন গ্রামের টুলু মিয়ার ছেলে।
থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা বলেন, কয়েকমাস আগে মাচাইন মাজার শরীফের ওরশে বাস্তা ও নাওডুবি এলাকার কয়কজন যুবকর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মাজার কমিটির লোকজন ও স্থানীয়রা তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দেয়।
সেই একই বিরোধকে কেন্দ্র করে দুপুরে কয়েকজন যুবক হাবিনুরের উপর হামলা করে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ নূর-এ আলম জানান, হাবিনুর খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি।
উপজেলা নির্বাচন
সিরাজগঞ্জে প্রচারণায় বাধা-মারপিটের অভিযোগ দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর
৮ মে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী অপর এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা ও কর্মী সমর্থকদের মারপিটের অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে শহরের একটি অভিজাত হোটেলে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ ও কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম অপর প্রার্থী কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজী ও তার বাহিনী প্রতিটি ইউনিয়নে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ গড়ে তুলেছেন। আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণায় নামলেই তাদেরকে মারপিট করছে। পোস্টার ও লিফলেট কেড়ে নিচ্ছেন এবং ছিঁড়ে ফেলছেন। সেইসঙ্গে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি প্রদান করছেন।
তারা জানান, ২৪ এপ্রিল প্রচারণা চালানোর সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে মারপিট করা হয়েছে। এ নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী থানায় চারটি জিডি করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৮ মে নির্বাচনের দিন খলিলুর রহমান প্রতিটি বুথে দুজন ক্যাডার রাখবেন। ভোটাররা চাপ বা টিপ দিয়ে ইভিএম ওপেন করে দিলে বুথের ভেতরে থাকা খলিলের কর্মীরা ভোট দিয়ে দেবেন বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকির কারণে ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কোনো নির্দেশনাই খলিলুর রহমান সিরাজী মানছেন না। তিনি প্রভাব বিস্তার করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণের চেষ্টা করছেন।
এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট ও ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও কাজিপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘উনারা ভোট পাবে না বলে ভোট প্রার্থনার জন্য ভোটারদের কাছে না গিয়ে শুধু অভিযোগ করে যাচ্ছেন’।
প্রসঙ্গত, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে এই কাজিপুর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় মোট ৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
অবৈধ রেশন বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা নেতা খুন, নেপথ্যে আরসা
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতিমাসে মাথাপিছু ১০ ডলার খাদ্য সহায়তা দেয় জাতিসংঘ। এই অর্থের বিনিময়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত ই ভাউচার আউটলেট থেকে চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী রেশন হিসেবে রোহিঙ্গারা সংগ্রহ করে।
নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা মানুষগুলোর জীবনযাপনের অন্যতম এই অবলম্বন নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে অবৈধ রেশন বাণিজ্য।
প্রতিমাসের নির্ধারিত দিনে রেশন সংগ্রহে যাওয়া সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে এসব রেশন ক্রয় করে অবৈধ এই বাণিজ্যে জড়িত অসাধু রোহিঙ্গারা, কেউ দিতে না চাইলে তার উপর শুরু হয় নির্যাতন।
সাধারণ রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, কথিত সশস্ত্র সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) এর সাথে জড়িত। আরসার সমর্থক ও সদস্যরা নিজেদের তহবিল সংগ্রহের নামে এধরণের কর্মকাণ্ড চালায়।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে উখিয়ার ২ ডব্লিউ ক্যাম্প থেকে সৈয়দুল আমিন (৪৫) নামে এক রোহিঙ্গার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রোহিঙ্গাদের সূত্র বলছে, এই হত্যাকান্ডের কারণ অবৈধ রেশন বাণিজ্য।
নিহত সৈয়দুল আমিন (৪৫), ২ ডব্লিউ ক্যাম্পের এ-১১ ব্লকের আশরাফ আলীর পুত্র এবং তিনি ঐ ব্লকে মাঝির (রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা) দায়িত্ব পালন করতেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামীম হোসেন জানিয়েছেন, ২ ডব্লিউ ক্যাম্পের একটি মসজিদের সামনে পেয়ে সৈয়দুল আমিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে উখিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান, রোহিঙ্গাদের মাঝে জনপ্রিয়তা শূণ্যের কোটায় নেমে আসা, প্রতিপক্ষ আরএসওর প্রতিরোধসহ নানা কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে আরসা।
মিয়ানমারের মংডু থেকে ২০১৭ সালে পালিয়ে আসার আগে থেকেই আরসার সাথে সখ্যতার কারণে সংগঠনটির হয়ে ২ ডব্লিউসহ কুতুপালংয়ের ৪টি ক্যাম্পে অবৈধ রেশন বাণিজ্য সামলানোর দায়িত্ব পান সৈয়দুল আমিন।
সম্প্রতি আরসার প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় সংগঠনটিকে নির্ধারিত চাঁদার অংশ দেয়া বন্ধ করে নিজের মতো ব্যবসা করছিলেন তিনি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে কৌশলে আরসার সদস্যরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের।
২ ডব্লিউ ক্যাম্পের এ ব্লকে বাস করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা জানান (অডিও সংরক্ষিত), " সৈয়দুল আমিন একসময় আরসা করতেন, আরসাকে প্রতিমাসে রেশন ব্যবসা থেকে মোটা অংকের টাকা দিতেন। শুনেছি আরসার নেতারা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ায় তিনি তাদের কে টাকা দিতেন না, ফলে আরসা তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলো।"
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী ব্লকের এক মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সৈয়দুল আমিন টাকা দেওয়া বন্ধ করায় ওই ক্যাম্পে নিজেদের পক্ষের লোকজনকে রেশন তোলার দায়িত্ব দেয় আরসা নেতা হালিম।
ঘটনার সময় রেশনের চাল নিয়ে হাতাহাতি হলে হালিমের লোকজন সৈয়দুল আমিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বরত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল (অতিরিক্ত ডিআইজি) এ প্রসঙ্গে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে। কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটলো সেই রহস্যও উদঘাটন করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে এপিবিএনের তৎপরতা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
মানিকগঞ্জে হাসপাতাল থেকে নারীসহ দালাল চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার
মানিকগঞ্জে সরকারি জেলা সদর হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া চক্রের (দালাল) নারীসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের ভেতরে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়ার পাঞ্জনখাড়া এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে পাপ্পু মিয়া (৩৫), একই উপজেলার পশ্চিম সেওতা এলাকার হযরত আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৩৮), জাগীর শেঘশিমুল এলাকার মনির মিয়ার স্ত্রী শিলা আক্তার (২৫), সাটুরিয়া উপজেলার পশ্চিম চর-তিল্লী এলাকার জহির আলীর মেয়ে বিউটি বেগম (৫০) ও ঘিওর উপজেলার হিজুলিয়া এলাকার মৃত মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪২)।
পুলিশ জানান, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সহজ-সরল রোগী ও স্বজনদের ফুসলিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতেন এবং বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকদের কাছ থেকে কশিমন পেতেন দালাল চক্রের সদস্যরা।
জেলা হাসপাতালের ভেতর থেকে রোগী ধরে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গত সোমবার জেলা সদর হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী দুলাল হোসেনের সাথে দালাল চক্রের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়।
এর এক পর্যায়ে সদর হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী দুলাল হোসেনকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে এবং দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জেলা সদর হাসপাতাল থেকে চলে যায় দালাল চক্রের ১০-১২জন সদস্য।
পরে এ ঘটনায় জেলা সদর হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী দুলাল হোসেনে ১৫ জনের নাম উল্লেখ্যসহ আরো ৫ জনকে অজ্ঞাতনামা করে গতকাল বুধবার মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন জানান, মামলার পর মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে অভিযান চালিযে দালাল চক্রের নারীসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।