আমেরিকায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ
আলতাফ হোসেন (৪৮) নামের এক ব্যক্তি নিজেকে আমেরিকান প্রবাসী হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু তিনি কখনো দেশের বাইরেই যাননি। আমেরিকায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে দেশজুড়ে পেতেছেন প্রতারণার ফাঁদ। এই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে গত কয়েক বছরে অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলতাফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. কামরুজ্জামান।
এর আগে বুধবার (৩ জুলাই) রাজধানী বাড্ডার সাতারকুল এলাকা থেকে সহযোগী শরীফুল ইসলামসহ (৫৮) আলতাফ হোসেনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
মো. কামরুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রতারণার প্রথম ধাপে আমেরিকা যেতে কোনো আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে দামি হোটেল বা রেস্টুরেন্টে দেখা করতেন আলতাফ। চলাচল করতেন কোটি টাকা গাড়িতে। আমেরিকায় নিজের অসংখ্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং সেখানে চাকরি দেবেন বলে মানুষদের আশ্বাস দিতেন। এছাড়া আমেরিকার রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথাও বলতেন অবলীলায়।
তিনি বলেন, 'এসব মিথ্যা ও লোক দেখানো পরিচয় দেখিয়ে আমেরিকায় যেতে ইচ্ছুক মানুষদের কাছে টানতেন আলতাফ। পরে আমেরিকায় নিজস্ব বেসরকারি বিমান সংস্থা, নিজের কথিত প্রতিষ্ঠান ভেলা এসোসিয়েটসে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আলতাফ হোসেন।'
এসএসপি কামরুজ্জামান বলেন, 'আলতাফ আমেরিকা যেতে আগ্রহীদের সঙ্গে সাধারণত দুপুর বেলা দেখা করতেন। এ সময় ঘুমানোর ভান ধরে বলতেন, আমেরিকায় এখন রাত, তাই বাংলাদেশে এসে ম্যাচিং হচ্ছে না। এ দেশের আবহাওয়া তার সহ্য হচ্ছে না। রেস্টুরেন্টে গিয়ে ১০ হাজার টাকা বিল হলে হোটেল বয়কে আরও ১০ হাজার টাকা টিপস দিতেন। এর ফলে সাধারণরা আকৃষ্ট হতেন সহজেই।'
তিনি বলেন, 'আলতাফ হোসেন কোনো ব্র্যান্ডে জুতার দোকানে ৪০-৫০ জোড়া জুতার প্রায় ২০-৩০ লাখ টাকার অর্ডার করতেন। এর ফলে দোকানের কর্মীরাও তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। বিভিন্ন দোকানের কর্মীরাও প্রলুব্ধ হয়ে টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছেন। এ চক্রে আলতাফের অন্যতম সহযোগী শরীফুল মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকদের প্রলুব্ধ করে আলতাফের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতেন। এরপর অবস্থা বুঝে ৩-৫ লাখ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকাও আদায় করতেন তারা।'
তিনি আরও বলেন, 'এ চক্রে আমরা আরও চারজনের নাম পেয়েছি। তবে অন্তত ১০ জন এ চক্রে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করছি। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে চক্রের সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আলতাফ হোসেন নিজের মায়ের নামে গাজীপুরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বৃদ্ধাশ্রম করছেন। সেখানে বিনিয়োগ এবং মালামাল সাপ্লাইয়ের কথা বলে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।'
দুইজন গ্রেফতারের খবর শুনেই অন্তত ২০-৩০ জন ভুক্তভোগী পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন আইন অনুযায়ী ভুক্তভোগীদেরকে সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
গত ২০ জানুয়ারি শামীম বাসার নামে একজন ভুক্তভোগী কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় এই দুইজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।