ফেঁসে যাচ্ছেন বিমানের এমডি জামিল
পাইলট নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্যাপ্টেন ফরহাত জামিল।
সদ্য বিদায়ী বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোসাদ্দিক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল পাইলট নিয়োগে দুর্নীতি। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত ৩০ এপ্রিল তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিমানের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম পরিচালনা পর্ষদ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ওইদিনই কার্যকর হয়।
মোসাদ্দিক আহমেদের বিরুদ্ধে পাইলট নিয়োগে অনিয়ম ছাড়াও বিমানের কার্গো পরিবহনে অনিয়ম, বিনামূল্যের টিকিট বিক্রির টাকার অনিয়মের অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা, মিশর থেকে লিজে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭ ২০০ ইআর উড়োজাহাজে এরই মধ্যে এয়ারলাইন্সকে ৩০০ কোটি টাকা লোকসান দেওয়া- ছিল অন্যতম।
বিমানের মোট ৫৮ জন পাইলট নিয়োগের কেলেঙ্কারি আলোচিত ঘটনা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুটি নিয়োগেই অন্যতম মূল ভূমিকায় ছিলেন ক্যাপ্টেন ফরহাত জামিল। কারণ তৎকালীন বিমানের ফ্লাইট অপারেশন (ডিরেক্টর) হিসেবে তিনিই ছিলেন নিয়োগ কমিটির প্রধান। দুদকের অনুসন্ধান ছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেও বর্তমান এমডি ক্যাপ্টেন জামিলসহ একাধিক ব্যক্তির পাইলট নিয়োগের অনিয়মে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে অনিয়মের অভিযোগ মাথায় নিয়ে মোসাদ্দিক আহমেদ বিদায় নিয়েছিলেন সেই একই অভিযোগ ক্যাপ্টেন জামিলের বিরুদ্ধে। তাই আগের এমডিকে যদি এই অভিযোগে চাকরি হারাতে হয়, তাহলে বর্তমান এমডি কেন চাকরি হারাবেন না - এমন আলোচনা চলছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এই আলোচনার সত্যতাও মিলতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। যার প্রমাণ ক্যাপ্টেন জামিল ভারপ্রাপ্ত এমডির পাশাপাশি ফ্লাইট অপারেশন (ডিরেক্টর) এর দায়িত্বও পালন করছিলেন। গেল সপ্তাহে ফ্লাইট অপারেশন (ডিরেক্টর) পদে ক্যাপ্টেন মাহতাবকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান এমডির বিদায় ঘণ্টা শিগগিরই বাজতে পারে - এমন আভাস সব মহল থেকেই মিলছে।
মোসাদ্দিক আহমেদ ও ফরহাত জামিল তাদের খুশিমত পাইলট নিয়োগ দিতে নিয়োগ কমিটির সদস্যদের পাশ কাটানো হয়েছে। মোসাদ্দিক তার ভাজিতাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পাইলট নিয়োগ ১৩ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধনী এনে শিক্ষাগত যোগ্যতা হ্রাস করা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিমানের পরিচালনা পর্ষদকে উপেক্ষা করা, নিয়োগ পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা রাখা (মৌখিক পরীক্ষায় কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার নজির নেই), বিমানের অপারেশনাল ম্যানুয়েল পার্ট-এ অনুসারে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৭৫ নম্বরের লিখিত এবং ২৫ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার বিধান থাকলেও তা না মানা, ৩০ জন প্রার্থীর ডিগ্রি এইচএসসি (বিজ্ঞান) সমমান কি না, তা যাচাই বাছাই না করেই গ্রহণের সুপারিশ করা, ক্যাডেট পাইলটের জন্য সম্পূর্ণ লিখিত পরীক্ষায় পাস করা ৭৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানো।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের অপারেশনাল ম্যানুয়েল অনুসারে ক্যাডেট পাইলট পদের জন্য বয়স ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর রাখা হয়। এখানেও বয়সসীমা ৪০ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে অনিয়ম করা হয়েছিল।