মাদক নির্মূলে যুক্ত হতে চায় আনসার-ভিডিপি
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের পাশাপাশি আনসার-ভিডিপিকে যুক্ত করার কথা ভাবছে সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে হলেও আনসার-ভিডিপিকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে আনসার বাহিনীর সুপারিশ আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য সরবরাহ ও চাহিদা হ্রাস, অপব্যবহার ও চোরাচালান প্রতিরোধ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ এ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও উক্ত আইনের ২৩(১) ধারায় পুলিশ, কাস্টমস, বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জননিরাপত্তাকল্পে সৃষ্ট শৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যাটালিয়ন আনসার, প্যারা মিলিটারি ফোর্স হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ আনসার বাহিনী ও ব্যাটালিয়ান আনসারকে উক্ত আইনের খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়ার পরও তা করা হয়নি।
বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনো মাদকের ভয়াবহতা থেকে দেশ রক্ষা পায়নি। তাই কিভাবে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে সে বিষয়ে সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে।
যেখানে র্যাব-পুলিশ মাদক নির্মূলে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আনসার ভিডিপিকে সম্পৃক্ত করে কতটুক কার্যকর হবে- তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্য মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার নজিরও রয়েছে। তাই বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমাধানে আসা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে আনসার ভিডিপিতে নিয়মিত সদস্য রয়েছে ২০ হাজার ৭৩৩ জন। তার মধ্যে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী তিন হাজার ৪৮৯ জন, ৩৯টি ব্যাটালিয়নে মোট ব্যাটালিয়ন আনসার (পুরুষ) রয়েছেন ১৫ হাজার ৭৫৬ জন, দুটি মহিলা ব্যাটালিয়ন আনসারে রয়েছেন ৮১৬ জন, আর মহিলা আনসার ৬৭২ জন।
এছাড়া অঙ্গীকারভুত সাধারণ আনসার রয়েছে ৪৮ হাজার ৭৪৭ জন, প্লাটুনভুক্ত সাধারণ আনসার এক লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৪ জন, ভিডিপি সদস্য রয়েছে ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮১৭ জন, হিল আনসার ৬০০ জন, হিল ভিডিপি সাত হাজার ৮৮৭ জন, বিশেষ আনসার (আত্মসমপর্ণকৃত) ৪৮০ জন, টিডিপি শহর প্রতিরক্ষা দলের সদস্য রয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৪০০ জন। অর্থাৎ অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০ লাখ ৩৬ হাজার দুই জন আনসার ভিডিপির সদস্য রয়েছে।
আনসার বাহিনীর পক্ষ থেকে বিদ্যমান আইন সংশোধন করার প্রস্তাব করে সুপারিশ করা হয়েছে। ঐ সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে- মাদকের ভয়াবহতা রোধকল্পে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮’ এর ২৩ ধারা সংশোধন করে সেখানে পুলিশ, কাস্টমস, বিজিব ও কোস্টগার্ডের পাশাপাশি তাদের নির্ধারিত বিভিন্ন পদবীর ন্যায় ব্যাটালিয়ন আনসার ফোর্সের ন্যূনতম পদবী উল্লেখ করে সংশোধন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘প্রস্তাব দিয়েছি, সংসদীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে আনসার-ভিডিপি মাদক নির্মূলে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামে আমাদের ৬০ জন সদস্য আছে। তারা সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন কে মাদক ব্যবসা করে এবং মাদক নির্মূলে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
গত ১৭ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধেও আনসারের ভূমিকা রয়েছে। এত বড় একটি ফোর্স আছে, সেটাকে আমরা সহজেই কাজে লাগাতে পারি। নেতিবাচক দিক না দেখে যদি দেখি, একজন আনসার সদস্য গ্রামের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন। কাজেই তার কাজ করার ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই মনে করি আইন সংশোধন না করেও চাইলে আনসার বাহিনীকে মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যবহার করা যেতে পারে।’