বিদেশ ভ্রমণেই ব্যয় প্রকল্পের শত কোটি টাকা!



শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
জাতীয় সংসদ ভবন

জাতীয় সংসদ ভবন

  • Font increase
  • Font Decrease

দক্ষতা অর্জনের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের মহোৎসব! কেউ ১১ বার, কেউবা ১০ বার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের টাকা খরচের ক্ষেত্রে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গত ১০ বছরে যারা দক্ষতা অর্জনের জন্য বিদেশ ভ্রমণ করেছেন তাদের অধিকাংশই আবার অবসরে গেছেন। যে ‍দুই-একজন প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তারাও অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে গেছেন। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরকারেরও কোন কাজে আসেনি।

অথচ প্রকল্পের পুরো ২৮৪ কোটি ৭৮ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে ২২১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়েছে কিন্তু দৃশ্যমান কিছুই দেখাতে পারেনি। প্রকল্পের ১৮২ কোটি টাকাই দেখানো হয়েছে কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাবদ। আর মিডিয়া ক্যাম্পেইনে গেছে ৩৩ কোটি টাকা, কর্মকর্তাদের কাপড় ধুতে গেছে ১ লাখ টাকা। বিদেশ ভ্রমণে বাদ যাননি কেউই। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন থেকে শুরু করে কাউন্সিলর, পুলিশের টিআই; সবাই মিলে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

এ নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকল্পটি পুনঃযাচাইয়ের জন্য আইএমইডিতে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

দেখা গেছে প্রকল্পের মেয়াদ ১০ বছর পার না হলেও এরইমধ্যে ৯টি গাড়ি বিকল হয়ে গেছে। আর প্রকল্প পরিচালক মুঞ্জুরুল হান্নান একাই ব্যবহার করেন তিনটি গাড়ি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও গাড়ি ফেরত দেননি ওই প্রকল্প পরিচালক। পুনরায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অজুহাত দিয়ে তিনি গাড়ি দখলে রেখেছেন।

প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুনে শেষ হলেও নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর আগে একদফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। অর্থাৎ এ প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয় ২০০৯ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের জুনে। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ হয়।

দক্ষতা অর্জনের জন্য গেছেন সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তার পিএস ও এপিএস। কিন্ত মন্ত্রী, পিএস এর নাম বাদ রেখেই তালিকা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কার্যপত্রে দেখা গেছে পুলিশের টিআই, স্যাম্পল কালেক্টরসহ অনেকেই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ট্রাভেল বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা, আর মিডিয়া ক্যাম্পেইনে খরচ ৩৪ কোটি টাকা, মেলা বাবদ খরচ ১০ লাখ টাকা, কালাচারাল প্রোগ্রামে গেছে ৯ লাখ, কানসালটেন্সিতে গেছে ৩৩ কোটি, কর্মকর্তাদের কাপড় ধোয়াতে গেছে ১ লাখ।

বিগত প্রায় ১০ বছরে বিদেশ ভ্রমণে পাঠানো ব্যক্তির সংখ্যা ২৯৩ জন। প্রকল্পের বড় কর্তারা আমেরিকা, নরওয়ের মতো দেশে গেলেও ছোট কর্মকর্তাদের ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে পাঠানো হয়েছে। লক্ষ্য একটাই মিলেমিশে অর্থ লুটপাট করা!

প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে যেমন অনিয়ম করা হয়েছে, একইভাবে এর অধীনে নেওয়া প্রশিক্ষকদের বেশির ভাগ প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই চলে যান অবসরে। এমনকি, প্রকল্পের নীতি-নির্ধারকেরা নিজেদের অনিয়মকে হালাল করতে নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্তদের অবৈধভাবে পাঠিয়েছেন বিদেশ ভ্রমণে।

এছাড়া একই ব্যক্তি ঘুরে ফিরে প্রশিক্ষণের নামে গেছেন বিদেশ ভ্রমণে। কোন কোন কর্মকর্তা প্রায় এক ডজন বার গেছেন বিদেশ ভ্রমণে। এই প্রকল্পে কর্মকর্তাদের পাহারায় থাকা পুলিশ কর্মকর্তাও বাদ যাননি বিদেশ ভ্রমণ থেকে। আর পুরো প্রকল্পের অর্ধেক টাকা ব্যয় করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পেছনে। যার পরিমাণ ১৮২ কোটি টাকা।

কেইস প্রকল্পের এই অনিয়ম দেখে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ক্ষোভ জানিয়ে বলেছে, এভাবে প্রকল্প নিলে সরকারের যে মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, প্রশিক্ষণের নামে ঢালাওভাবে লোকজন পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণের সুফলটা আমাদের পাওয়া দরকার সেটা তো আমরা পাচ্ছি না। আসলে এর কোন নীতিমালা ছিল না। আমরা তাই নীতিমালার ওপর জোর দিয়েছি। নীতিমালা থাকলে কারো পছন্দ অপছন্দের বিষয় থাকবে না। যারা যোগ্য তারাই প্রশিক্ষণে যাবে। তাছাড়া যারা ১০-১৫ বছর সার্ভিস দিতে পারবে তারাই যাবে।

তিনি বলেন, যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগই অবসরে গেছেন। যারা ছিলেন তারা অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে গেছেন। ফলে প্রশিক্ষণের সুফল পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়। দেখা গেছে একই পরামর্শককে একাধিকার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরার্শকরা কেউ কাজ শেষ করতে পারেননি। কেউ ১০ শতাংশ কেউ ২০ শতাংশ কাজ করেছেন। তাহলে এ ধরনের পরামর্শক কেন নিয়োগ দেওয়া হলো?

সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, এ প্রকল্পে যারা পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন না তাদেরও যুক্ত করা হয়েছে। এগুলো প্রকারান্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে প্রশয় দেওয়ার সামিল। তাই প্রকল্পের প্রকৃত কাজের মূল্যায়ন হয়েছে কিনা তা পুনঃমূল্যায়নের জন্য পুনরায় আইএমইডিকে দিয়ে যাচাই করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ জানানো হয়েছে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণের নামে একই ব্যক্তি ঘুরে ফিরে গেছেন বিদেশে। প্রকল্পের উপ-পরিচালক শাহ রেজোয়ান হায়াত সর্বাধিক ১১ বার বিদেশ গেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই প্রশিক্ষণের নামে তিনি বিদেশ ভ্রমণে যান। কম যাননি প্রকল্প পরিচালক নাসিরুদ্দিনও। তিনিও প্রশিক্ষণের নামে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন। এছাড়া শামসুর রহমান খানও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কয়েকবার গেছেন বিদেশে। তাদের সঙ্গে প্রতিবারই ভ্রমণের সুবিধা নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মঞ্জুরুল হান্নান। একই সঙ্গে পিডি হিসেবে তিনি প্রকল্পের তিনটি গাড়ি একাই ব্যবহার করেছেন। এছাড়া কাজী মনিরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, শাহানাজ রহমান, নীল রতন সরকারসহ ২৯৩ জন ব্যক্তি অবৈধভাবে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

এতে সরকারের যতটা লাভ হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তার চেয়ে বেশি পকেট ভারী হয়েছে বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি। এর মধ্যে সিটি মেয়র, কাউন্সিলর, সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ওসি, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা এ তালিকায় রয়েছেন।

এদিকে প্রকল্পের অধীন ৩১টির সব গাড়ি নতুন কেনা হলেও বেশির ভাগ মেয়াদের আগেই অচল দেখানো হয়েছে। অথচ ১০ বছরে ৯টি গাড়ি বিকল হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এসব গাড়ির মধ্যে মাইক্রোবাস, পিক আপ, মোবাইল মনিটরিং ভ্যান ও জিপ রয়েছে। আবার সচল গাড়ির অবস্থাও শোচনীয়।

এদিকে, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যে বেশির ভাগ কর্মকর্তা মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই অবসরে গেছেন। এমন কর্মকর্তাদের মধ্যে মো. আনছার আলী খান, ব্রি. জে. মো. আবদুল কাদির, ব্রি. জে. মো. আহসানুল হক মিয়া, মো. নুরুল্লাহ, মো. আবদুস সালাম, মো. সেহাব উল্লাহ, মো. মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।

   

গৌরীপুরে আগুনে পুড়ে মরল চার গরু



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আগুনে পুড়ে কৃষক আব্দুল লতিফের চারটি গরু মারা গেছে।

বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বৃবড়ভাগ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল লতিফের বাড়ি উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বৃবড়ভাগ গ্রামে। তিনি পার্শ্ববর্তী অচিন্তপুর ইউনিয়নের স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। বাড়িতে তার গরুগুলো পরিবারের লোকজন দেখাশোনা করতো। বুধবার রাতে আব্দুল লতিফের ভাই আব্দুল মতিন গোয়ালঘরে সেচ পাম্প চালু করে ঘুমাতে যান। কিছুক্ষণ পর গোয়ালঘরে আগুনের লেলিহান দেখে প্রতিবেশীরা ডাক-চিৎকার শুরু করে। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এসময় একটি ষাঁড়, একটি গাভি, দুইটি বাছুরসহ চারটি গরু মারা যায়।

আব্দুল লতিফ বলেন, আমি মসজিদে ইমামতি করি। বাড়িতে আমার অনুপস্থিতিতে পরিবারের লোকজন গরুগুলো দেখাশোনা করতো। কিন্তু আগুনে আমার সব শেষ করে দিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই লাখ টাকার মতো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে কৃষকের গোয়াল ঘর পুড়ে গরু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে পাঠানো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;

ইসলামপুরে দুই শ কৃষক পেল উন্নত মানের ধানের বীজ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর
ইসলামপুরে দুই শ কৃষক পেল উন্নত মানের ধানের বীজ

ইসলামপুরে দুই শ কৃষক পেল উন্নত মানের ধানের বীজ

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় ক্লাস্টারভিত্তিক আউশ আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আয়োজনে উপজেলার পলবান্ধা ইউনিয়নের উত্তর সিরাজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দুইশ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে উন্নত মানের ধানের বীজ বিতরণ করা হয়।

এর আগে একই মাঠে স্থানীয় কৃষকদের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়। সভায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক এনায়েত উল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ির মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ শাহজাহান কবীর, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানাসহ আরও অনেকেই।

;

কালিয়াকৈরে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের কালিয়াকৈর সম্প্রতি শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করলেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক (এমপি)। এসময় শিলে ক্ষতি হওয়া কৃষিজমি ও বসতবাড়ি পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে জেলার কালিয়াকৈর উপজেলাধীন বোয়ালী ইউনিয়নের গাছবাড়ি, চাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে খলিশাজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হন মন্ত্রী।

এসময় তিনি বলেন, শিলাবৃষ্টিতে কালিয়াকৈরে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসল, ফলের বাগান, অনেক পরিবারের বসতবাড়ীর টিনের চাল ভেঙে গেছে। কৃষকরা যাতে তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেই জন্য তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সমান ভাবে সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৫ মার্চ ওই এলাকা পরিদর্শনে আসেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবু ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। সেসময় তিনি শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তার আওতায় আনার ঘোষণা দেন।

জানা যায়, গত শনিবার (২৩ মার্চ) রাত নয়টার দিকে ঝড় বৃষ্টির সাথে কয়েক মিনিট মুশলধারে শিলাবৃষ্টি হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত হয় কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম। নষ্ট হয় ধানের জমি, ফলের বাগান ও বসতবাড়ির টিনের চাল। ফলে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েন এসব এলাকার শতশত মানুষ।

বিষয়টি নজরে এলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ওই এলাকা পরিদর্শনে যান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবু ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ, কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন শিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবির, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ।

;

সরকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি টার্গেট করে প্রতারণা, পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
সরকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি টার্গেট করে প্রতারণা, পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি

সরকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি টার্গেট করে প্রতারণা, পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি

  • Font increase
  • Font Decrease

রেলপথ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কারা অধিদপ্তর, পররাষ্ট্র অধিদপ্তর, বিআরটিসি, বিএডিসি, সচিবালয়, ব্যাংক, মেট্রোরেল, এয়ারপোর্ট, তিতাস গ্যাস এবং সেনাবাহিনীর সিভিল পদে চাকরির বিজ্ঞাপন বিভিন্ন পত্রিকায় আসার পরে একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। পরীক্ষা ছাড়াই সহজেই সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাকরির নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করত একটি চক্র। চক্রটি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে চাকরি দিতে পারেনি তারা। এভাবে গত কয়েক বছরে তারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে অর্থ আত্মসাৎকারী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. ফরিদুল ইসলাম (২৯), মো. নাসির চৌধুরী (৪৫), মো. নাসিম মাহমুদ (৪৩) ও জুয়েল রানা (৪৫)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন ও বেশকিছু ভুয়া নিয়োগপত্র, চেক ও স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।


তিনি বলেন, গ্রেফতাররা বেশ কিছুদিন ধরে ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। অনুসন্ধানে এই চক্রের বিভিন্ন ধাপ লক্ষ্য করা যায়।

যেভাবে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণা-

প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেই এই চক্রের মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে যেয়ে বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে যেকোনো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মতো তাদের হাতে লোক রয়েছে বলে আশস্থ করতো। চাকরিপ্রার্থী তাদের প্রস্তাবে রাজি হলে তাদের কাছ থেকে ব্লু ব্যাংক চেক, ব্ল‍্যাংক স্ট্যাম্প ও সিভি সংগ্রহ করার পাশাপাশি মাঠকর্মী তাদের কাছ থেকে এডভান্স হিসেবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা গ্রহণ করে।

ডিবি প্রধান বলেন, মাঠকর্মী তার কমিশনের নির্দিষ্ট টাকা রেখে বাকি টাকা ও সিভি ফিল্ড পর্যায়ের সাব এজেন্টের কাছে প্রেরণ করে। এরপর সাব এজেন্ট এই টাকা ও সিভি গ্রহণ করে সকল চাকরি প্রার্থীকে নির্দিষ্ট একটা দিনে ভাইভার কথা বলে ঢাকাস্থ এজেন্টের কাছে পাঠায়। পরবর্তীতে ঢাকাস্থ এজেন্ট আবাসিক হোটেলের রুমে বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশপাশের কোনো একটি চায়ের দোকানে চাকরি প্রার্থীদের ভাইভা পরীক্ষা গ্রহণ করে। ভাইভাতে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে প্রার্থীর কাছ থেকে এইদিন চুক্তির ৫০ শতাংশ টাকা গ্রহণ করে।

এরপর চক্রের আরেক সদস্য চুক্তির বাকি টাকা গ্রহণ করে প্রার্থীকে নির্দিষ্ট একটা দিনে যোগদানের কথা উল্লেখ করে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি ভুয়া আইডি কার্ড প্রদান করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায়।

চাকরিতে যোগদান করতে গেলে জানতে পারে নিয়োগপত্র ভুয়া-

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে চাকরি প্রার্থীরা নিয়োগপত্রে উল্লেখিত তারিখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগদান করতে গেলে প্রার্থীরা জানতে পারে, প্রতারক চক্রের দেওয়া নিয়োগপত্র আর আইডি কার্ডটি ভুয়া। ততোদিনে প্রত্যেক চাকরি প্রত্যাশিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় দশ থেকে বিশ লাখ টাকার মতো। পরে চক্রটি নিজেদের মধ্যে চুক্তির টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, চক্রটি দুই/তিন বছর ধরে এভাবে চাকরি প্রত্যাশিদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের ব্যবহৃত হোয়্যান্সঅ্যাপ/মেসেঞ্জারে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা বিভিন্ন চাকরি প্রত্যাশীদের বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কারা অধিদপ্তর, পররাষ্ট্র অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিআরটিসি, বিএডিসি, এলজিইডি, সচিবালয়, বিভিন্ন ব্যাংক, প্রাথমিকের পিয়ন, মেট্রোরেল, এয়ারপোর্ট, তিতাস গ্যাস ও ওয়াসার আউটসোর্সিং এবং সেনাবাহিনীর সিভিল পদে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

গ্রেফতারদের যার যে দায়িত্ব ছিল প্রতারণার কাজে-

গ্রেফতার এ চক্রে জুয়েল রানা ফিল্ড পর্যায়ে মাঠ কর্মী হিসেবে, নাসিম মাহমুদ ফিল্ড পর্যায়ের সাব এজেন্ট হিসেবে ও নাসির চৌধুরী ঢাকাস্থ সাব এজেন্ট হিসেবে এবং চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মো. ফরিদুল ইসলামের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

একজন ভুক্তভোগীর কাছে ১২ লাখ টাকা হাতিয়েছে চক্রটি এরপর মামলা করেন তিনি-

মামলার বাদীকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এমএলএসএস পদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে একটি নিয়োগপত্র প্রদান করে এ নিয়োগপত্র নিয়ে তিন মাস পরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের জন্য গেলে জানতে পারেন যে নিয়োগপত্রটি ভুয়া। পরবর্তী সময়ে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের ব্যবহৃত সকল যোগাযোগ নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার বাদী প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে চকবাজার থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

ডিবি-সাইবারের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক জাগো নিউজকে বলেন, চক্রটি গত কয়েক বছরে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা কারে নিলেও কারো চাকরি দিতে পারেনি তারা। পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দপপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কোনো লেনদেন করা যাবে না।

তিনি বলেন, গ্রেফতারদের বিরূদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আসামিদের ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

ডিবির পরামর্শ-

১. যে কোনো চাকরিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। অনৈতিক উপায়ে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা না করা।

২. অনেক প্রতারক চক্র রয়েছে যারা ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়েও প্রতারণা করে থাকে। তাই বিজ্ঞপ্তিগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ওয়েবসাইটের সহায়তা নেওয়া।

৩. সরকারি চাকরিতে কেবলমাত্র সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত নির্দেশনা মোতাবেক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা।

৪. প্রতারিত হলে নিকটস্থ থানা পুলিশকে তাৎক্ষনিক অবহিত করতে হবে।

;