শুরুতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দায়িত্বহীনতা ছিল
সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা ও ব্যক্তিরা ডেঙ্গু নির্মূলে শুরুতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক এম আবু সাঈদ।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাজধানীর শিশুকল্যাণ পরিষদে সংগঠনটির আয়োজনে ‘ডেঙ্গু জ্বরের বর্তমান অবস্থা: আতঙ্ক, সংকট, বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এম আবু সাঈদ বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা ও ব্যক্তিরা ডেঙ্গু নির্মূলে তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা যদি সারা দেশের এডিস মশার প্রজননগুলো সময়মতো ধ্বংস করত তা হলে এ মশার বংশবিস্তার নষ্ট হয়ে যেত। সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার উচিত পলিও খাওয়ানোর আদলে ডেঙ্গু নিধনের কিট ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের কথা মাথায় রেখে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাছাড়া সঠিক চিকিৎসাসেবার বিষয়টি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এডিস মশা নিধন কার্যক্রম অভিযান পরিচালনা করার এখনই সময়।
মশক নিধনে ব্যর্থতা এবং ওষুধ ক্রয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান অধ্যাপক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে ব্লেম গেমের আশ্রয় নিয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়। দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক মোজাহারুল হক বলেন, স্বাস্থ্যের পরিবেশ নিশ্চিত ও প্রয়োজনীয় মশক নিধন উপকরণ সময়মতো সরবরাহ করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তারা সে কাজটি করতে পারেনি। যার ফলে সারা দেশে ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বর্ষার আগে পরে প্রতিনিয়ত মশার ওষুধ ছিটাতে হবে এবং সেই ওষুধ কার্যকর হতে হবে।
আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা রোগ এবং রোগীদের নিয়ে অবহেলা এবং অবজ্ঞা করেছেন, যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রোগীদের সথেষ্ট প্রোটেকশনে রাখতে হবে। কারণ, জ্বর কমে যাওয়ার পরেও এর ঝুঁকি থেকে যায়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. এমএইচ লেলিন চৌধুরী বলেন, মেয়রদের দায়ীত্বহীনতার কারণে সারা দেশে এ রোগের বিস্তার লাভ করেছে। সারা দেশ আজ আতঙ্কগ্রস্ত ডেঙ্গুর ভয়ে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যাও গোপন করা হচ্ছে।
আগামী তিনদিনের মধ্যে মশার জীবাণু ও লার্ভা ধংস করার কার্যকরী ওষুধ আমদানি করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মশার স্থান পরিষ্কার করা এখন জরুরি।
স্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা সরকারের মানায় না। তাদের অবহেলার কারণে এত লোকের প্রাণ গেল। এর দায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রকে নিতে হবে। এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক ডা. হারুন-অর রশিদ, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাংগঠনিক সদস্য ডা. দেবাশীষ গাঙ্গুলী, নির্বাহী সদস্য ইকবাল হাসান শোভন প্রমুখ।