অগ্রিম বৃষ্টিতে বিলম্বিত হতে পারে বর্ষা
চট্টগ্রাম: এবার বিলম্বিত হতে পারে বর্ষা। প্রতিবছর জুনের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমী বায়ু প্রবেশের পর মূলত শুরু হয় বর্ষার আনাগোনা এবং মধ্য জুন থেকে বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতা। আর চূড়ান্ত রুপ পায় জুলাই মাসে।
কিন্তু বর্ষার আগে গ্রীস্মে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য) অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে বিলম্বিত হতে পারে এবারের বর্ষা। গতমাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চাইতে ৩৭ শতাংশ ও চলতি মাসে (২১ মে পর্যন্ত) ১৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, গত মাসে সারাদেশে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারাদেশে ৫ হাজার ৪৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও রেকর্ড হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৮ মিলিমিটার। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে বেশি হয়েছে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, খুলনায় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি মাসেও (২১ মে পর্যন্ত) সারাদেশে ১৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এসময়ে সারাদেশে ৮ হাজার ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৯ হাজার ৩৪১ মিলিমিটার। এরমধ্যে ঢাকায় বেশি হয়েছে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ, খুলনায় ৪৩ শতাংশ, ময়মনসিংয়েহ ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে বছরের এসময়ে এতো বৃষ্টিপাত সাধারণত হয় না জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক কারণে হয়তো বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে জলাবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে তা বলার সময় এখনো আসেনি।
কিন্তু আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করবে। আর সেসময় থেকে শুরু হতে পারে বর্ষাকাল। এখন বেশি বৃষ্টি হওয়ায় তখন কি বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আগামী ২৬ মে এর পর থেকে চলমান বর্ষণ কমে আসতে পারে। সেই হিসেবে মৌসুমী বায়ু শুরুর সাথে সাথে বর্ষাকালের প্রভাব দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে বর্ষা বিলম্বিত হতে পারে।’
আবহাওয়াবিদদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর জুন মাসের দুই তারিখে মৌসুমী বায়ু টেকনাফ প্রান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বায়ু আসার সাথে সাথে গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড দাবদাহ কমে যায় এবং জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু প্রবেশ করে। আর তা ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সাগর থেকে অধিক পরিমাণে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু নিয়ে প্রবেশের কারণে দেশে ধীরে ধীরে বৃষ্টি শুরু হয়, যা চলে প্রায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মূলত এটিই বর্ষাকাল। কিন্তু এবার গ্রীষ্মে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্বাভাবিক বর্ষণ কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিতে পারে।
উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখি ঝড় ছাড়াও বর্ষার আদলে বৃষ্টি হচ্ছে। এসময় সাধারণত দমকা বাতাসের সাথে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।