ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন ‘ভরত রাজার দেউল’ থেকে



মো. আলকামা, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
খুলনা-যশোর সীমান্তবর্তী ভরত ভায়না গ্রামে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ১৮শ বছর পূর্বের এক পুরাকীর্তি, যার নাম ভরত রাজার দেউল

খুলনা-যশোর সীমান্তবর্তী ভরত ভায়না গ্রামে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ১৮শ বছর পূর্বের এক পুরাকীর্তি, যার নাম ভরত রাজার দেউল

  • Font increase
  • Font Decrease

খুলনা-যশোর সীমান্তে কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদীর পশ্চিম তীরে ভরত ভায়না গ্রাম। নদী আর সবুজ বৃক্ষ আবৃত্ত এই গ্রাম ও এলাকা যে কারো মন কেড়ে নিবে। তবে শুধু সবুজ গাছ আর নদী নয় ভ্রমণ প্রেয়সী মানুষদের জন্য এখানে রয়েছে আরো মূল্যবান একটি স্থান। যেখানে ভ্রমণকারীরা মহাস্থানগড়ের কিছুটা স্বাদ নিতেও পারেন। খুলনা-যশোর সীমান্তবর্তী ভরত ভায়না গ্রামে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ১৮শ বছর পূর্বের এক পুরাকীর্তি। শতবর্ষী বিরাট বটগাছের নিচে অবস্থিত এ পুরাকীর্তিটি স্থানীয় জনপদের কাছে ভরতের দেউল বা ভরত রাজার দেউল নামে পরিচিত।

প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক কাশীনাথ দীক্ষিত ভরত ভায়না ঢিবি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রাথমিক জরিপ কাজ চালান ১৯২২-২৩ সালে। পরবর্তীতে মোট তিন দফায় ১৯৮৪-৮৫, ১৯৯৬-২০০১ এবং সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খনন কাজ পরিচালনা করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565618089530.jpg

প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা এখানকার ব্যবহৃত ইট ও প্রাপ্ত বিভিন্ন পোড়ামাটির মূর্তি গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েছেন এটি খ্রিষ্টীয় সাত থেকে নয় শতকে নির্মিত একটি মন্দির। ক্রুশাকৃতির এই মন্দির খ্রিষ্টীয় সাত শতকের পরে পূর্ব ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যর বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। মন্দির স্থাপত্যর পরিভাষা অনুসারে এ ধরনের মন্দির সর্বতভদ্র শৈলীর বলে চিহ্নিত করেছেন তারা। সোমপুর, মহাবিহার, শালবন বিহার, ‍বিক্রমশীলা এবং মহাবিহারের কেন্দ্রীয় মন্দিরের ভূমি নকশা এই মন্দিরের অনুরূপ। পরবর্তী সমেয়ে এই মন্দির স্থাপত্য গঠন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ মন্দির স্থাপত্যকে প্রভাবিত করেছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ- পশ্চিমদিকের বদ্বীপ অঞ্চলে এটিই এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত একমাত্র সর্বোতভদ্র ধরনের মন্দির।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯২৩ সালে কাশীনাথ দীক্ষিত ঢিবি জরিপ পরিচালনা করেন এবং মন্তব্য করেন যে ঢিবির নিচে পাঁচ শতকের প্রাচীন একটি বৌদ্ধমন্দির আছে এবং এটি সম্ভবত হিউয়েন-সাং বর্ণিত সমতটের ৩০টি সংঘারামের একটি। সে সময় তিনি কিছু সীমানা পিলারও দেন। সুযোগসন্ধানী মানুষ বিভিন্ন সময়ে সেই সব মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে গেছে। প্রাচীন মন্দিরটি ভরত নামধারী এক প্রভাবশালী রাজা নির্মাণ করেছিলেন বলে প্রচলিত। অনুমিত মূল মন্দিরটি ১ একর ২৯ শতক জমির ওপর অবস্থিত। চারদফায় খননের ফলে স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে, যা থেকে অনুমান করা হয় যে স্থাপনাটির উপরিকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানের দৃশ্যমান অংশ সম্ভবত বিনষ্ট হওয়া অট্টালিকার ভিত্তি বা উঁচু মঞ্চ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের করা স্কেচ থেকে দেখা যায়, মোট ৮২টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ ধাপে ধাপে ওপরের দিকে উঠে গেছে। ঢিবির শীর্ষ ধাপটির দেয়াল ৯ ফুট প্রশস্ত। এর মধ্যে ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রস্থের বর্গাকৃতির চারটি প্রকোষ্ঠ আছে। মূল অট্টালিকার প্রধান কক্ষটি এই প্রকোষ্ঠের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565618115322.jpg

দ্বিতীয় ধাপের দেয়াল ৩ ফুট চওড়া, এখানে বিভিন্ন আকৃতির ১৯টি প্রকোষ্ঠ আছে। ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি চওড়া দেয়ালের তৃতীয় ধাপে প্রকোষ্ঠ ১৮টি। সাড়ে ৩ ফুট চওড়া দেয়ালের চতুর্থ ধাপটিতে ১৯টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ আছে। শেষ ধাপে ১০ থেকে ১৩ ফুট চওড়া দেয়ালের মধ্যে ২২টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ আছে। তার নিচে প্রায় ১০ ফুট চওড়া প্রদক্ষিণ পথ আছে। মূল মন্দিরের চারদিকে চারটি প্রবেশপথ। এগুলোর মধ্যেও এখন পর্যন্ত সাতটি প্রকোষ্ঠ দেখা গেছে। গঠনশৈলী বিবেচনায় পূর্ব দিকটাই এর মূল প্রবেশপথ ছিল বলে ধারণা করা হয়। এর নির্মাণে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তার পরিমাপ ৩৬ সেন্টিমিটার, ২৬ সেন্টিমিটার ও ৬ সেন্টিমিটার। এত বড় ইট এই অঞ্চলের কোনো পুরাকীর্তিতে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়নি।

 

স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও গুপ্তযুগের একটি পোড়ামাটির মাথা, পোড়ামাটির মানুষের হাত ও পায়ের কয়েকটি ভগ্ন টুকরা, কয়েকটি মাটির প্রদীপ, অলংকৃত ইটের টুকরা, পদচিহ্ন-সংবলিত দুটি ইটের টুকরা এবং একটি মাটির ক্ষুদ্র পাত্র সংগৃহীত হয়েছে, যা খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565618126950.jpg

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে যাওয়ার জন্য পানি পথে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। স্থল পথে যেতে হলে দুই মাধ্যমে যেতে পারেন ট্রেন অথবা বাসে। ট্রেনে যেতে হলে প্রথমে খুলনা যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলে বহুল চলিত মাহিন্দ্রা নিয়ে মহসিন মোড়ে নামতে হবে (ভাড়া ২৫ টাকা)। অথবা সরাসরি ঢাকা থেকে বাসে এসে মহসিন মোড় নামতে পারেন সেক্ষেত্রে বাড়তি রাস্তা এড়ানো যাবে। তারপর সেখান থেকে আবারো মাহিন্দ্রাতে শাহপুর বাজার আসতে হবে (ভাড়া ২৫ টাকা)। শাহপুর থেকে ভ্যান অথবা অটোতে যেতে হবে তবে মনে রাখা দরকার ভ্যান অথবা অটো চালকদেরকে ভরতের দেউল বললে না চিনতে পারে সেক্ষেত্রে ভর্তের দেল বলতে হবে। শাহপুর বাজার থেকে সরাসরি আপনাকে ভরতের দেউল বা ভরত রাজার দেউলে নামিয়ে দিবে (ভাড়া ২০ টাকা)।

আবার ঢাকা থেকে সাতক্ষীরাগামী বাসে করে খুব সহজে আসতে পারেন সেক্ষেত্রে চুকনগর বাজারে নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে মাহিন্দ্রা করে সরাসরি ভরতের দেউল (ভাড়া ২০ টাকা)।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565618177819.jpg

কোথায় খাবেন

পুরাকীর্তি ঘিরে এখনো তেমন কোন খাবার হোটেল গড়ে উঠেনি। এছাড়া গ্রাম্য এলাকা হওয়ার কারণে তেমন কোন হোটেল বা রেস্ট্রুরেন্ট নেই। তবে ফেরার পথে চুকনগরের বিখ্যাত আব্বাসের হোটেল থেকে চুইঝালের খাসির মাংশ খেয়ে আসতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

আশপাশে থাকার কোনো হোটেল নেই। সবচেয়ে ভালো হয় খুলনা ফিরে কোনো একটা হোটেলে রাতে থাকলে। সেই সাথে সন্ধ্যায় খানজাহান আলী সেতু থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এছাড়া খুলনার আরো বিখ্যাত স্থানসমুহে এক নজর ফেলে আসতে পারেন।

   

যশোরে নাশকতা মামলায় মুক্তি পেলেন বিএনিপির ৫১ নেতা-কর্মী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নাশকতা মামলায় মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুসহ ৫১ নেতা-কর্মী। জামিনে মুক্তি পেয়েই দলীয় নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন নেতৃবৃন্দ।

উচ্চ আদালতে জামিনে থাকা নেতাকর্মীদের বৃহস্পতিবার যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নেতা-কর্মীদের পক্ষে জামিন শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন, আইনজীবী দেবাশীষ দাস। শুনানি শেষে বিচারক শেখ নাজমুল আলম নেতাকর্মীদের জামিন মঞ্জুর করেন। পরে জামিনের কাগজপত্র যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের পাঠানো হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকাল ছয়টার দিকে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ নেতৃবৃন্দ মুক্তি লাভ করেন। মুক্তি পাওয়া অন্যান্য নেতাকর্মীরা হলেন, জেলা বিএনপির সদস্য মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।

এদিকে প্রিয় নেতার জামিনের সংবাদ পেয়েই বেলা তিনটা থেকে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষা করেন। যশোরে আটটি উপজেলা ও পৌরসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকেও দলীয় নেতা-কর্মীরা ছুটে আসেন। সেখানে উল্লেখ যোগ্য নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিলেন, যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য গোলাম রেজা দুলু, মো. মুছা, মিজানুর রহমান খান, একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, সিরাজুল ইসলাম, নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহম্মদ প্রমুখ।

অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তি পর দলীয় নেতাকর্মীরা কারাগারের প্রধান ফটকের বাইরে মিছিল স্লোগান দিতে থাকেন। সেখান থেকে মিছিল সহকারে নেতৃবৃন্দ অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাস ভবেন যান। সেখানে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমাদেরকে বারবার মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে জনগণের মুক্তির জন্য দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথের চলমান আন্দোলন স্তব্দ করা যাবে না। আমাদের অসংখ্য সহযোদ্ধা খুন, গুম শিকার এবং পঙ্গত্ব বরণ করেছেন। দলের ৫০ লাখ নেতাকর্মী মিথ্যায় মামলার শিকার হয়ে কারাবরণ করেছেন। কিন্ত আমাদের আন্দোলন স্তব্দ হয়নি। তিনি বলেন, কারাপ্রকষ্ঠে নতুন করেন শপথ নিয়েছি আগামীদের দিনের রাজপথের আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাব না ইনশা আল্লাহ। এসময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম বক্তব্য রাখেন।

এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের জামিন শুনানিতে অংশ নেন, অ্যাড. মো.ইসহক, আমিনুর রহমান, অ্যাড. এম এ গফুর, অ্যাড. নুরুজ্জামান খান, অ্যাড. মোস্তফা কামাল মিন্টু, অ্যাড. সুদিপ্ত কুমার ঘোষ প্রমুখ।

উল্লেখ্য দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ কর্মসূচি পুলিশি তান্ডবে পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে, দলটি শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। দেশব্যাপী সেই আন্দোলন তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন এক তরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সেই এক তরফা প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে দলটি দেশব্যাপী তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। সেই কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে। তারপরও দলীয় নেতাকর্মীর আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুলিশের দায়েরকৃত কথিত নাশকতা মামলার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। এরপর গেল ৩১ মার্চ তারা নি¤œআদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওই দিন আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে প্রেরণ করেন।

;

স্বস্তির ছুটির পর অস্বস্তির লোডশেডিংয়ে নাকাল চট্টগ্রামবাসী



রেদ্ওয়ান আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
স্বস্তির ছুটির পর অস্বস্তির লোডশেডিংয়ে নাকাল চট্টগ্রামবাসী

স্বস্তির ছুটির পর অস্বস্তির লোডশেডিংয়ে নাকাল চট্টগ্রামবাসী

  • Font increase
  • Font Decrease

‘রমজানে তীব্র লোডশেডিংয়ে নামাজ, ইফতার, বিশেষ করে সেহরি রান্নায় ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল। তবে ঈদের দিন এবং তার দুয়েকদিন পর পর্যন্ত সেভাবে লোডশেডিং হয়নি। কিন্তু গত দুইদিন ধরে তাপমাত্রা যেমন বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিংও। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সহজে আসছে না। দিনে কোনোরকম কাটানো গেলেও রাতে ভ্যাপসা গরমের সাথে যুক্ত হচ্ছে মশার উৎপাত। ফলে বিষণ্ন হয়ে উঠছে আমাদের জীবনযাত্রা।’

এভাবেই তীব্র লোডশেডিংয়ে গ্রামাঞ্চলের নেতিবাচক পরিস্থিতিতে নিজেদের বিপর্যস্ত দিনলিপির বিবরণ দিচ্ছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা তানভীর সিকদার।

কেবল সাতকানিয়া নয় ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই নগরসহ চট্টগ্রামের সকল উপজেলাতেই লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত গণমানুষ। অধিকাংশ এলাকায় দিনে আট থেকে দশবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। মধ্যরাতেও লোডশেডিং হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না। এ যেন চট্টগ্রামবাসীকে দেওয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ঈদ উপহার।

গত ৯ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারিভাবে ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটি থাকায় চট্টগ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল না। মানুষ স্বস্তিতে ঈদ ও নববর্ষ উদযাপন করেছেন। কিন্তু গত ১৫ এপ্রিল অফিস–আদালত খোলার সাথে সাথেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে আবার।

এদিকে বৈশাখের শুরুতেই চট্টগ্রামে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বৈশাখের কাঠফাটা রোদের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। রেহাই পাচ্ছে না প্রাণীকুলও। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমের মাঝে প্রকৃতিতে বাতাসের মাত্রা কমে যাওয়ায় অস্বস্তি আরো বাড়ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রামে দিনদিন লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বলেন, ‘সারাদিনে পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। দিনে-রাতে কম করে দশ-বারোবার বিদ্যুৎ যায়। একবার গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে আসে।’

লোডশেডিং নিয়ে দুর্ভাবনায় আছেন বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল গ্রামের সেচপাম্প মালিক মোহাম্মদ আশরাফ। তিনি বলেন, ‘১০ শতাংশ জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুতের জন্য পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এর মধ্যে আবার তিন-চারবার বিদ্যুৎ চলে যায়। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবো তা নিয়ে টেনশনে আছি।’

পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে নগরের বাকলিয়া ও কল্পলোক আবাসিক এলাকায়। এলাকাটি নগরের ঘনবসতিপূর্ণ জনপদগুলোর একটি। এর বাইরে পাথরঘাটা, স্টেডিয়াম, ষোলশহর, কালুরঘাট, বাকলিয়া, মাতারবাড়ি , আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, রামপুর, নিউমুরিং বিদ্যুৎ সরবরাহকেন্দ্রগুলোতেও বেশ লোডশেডিং হচ্ছে।

শহরের বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইউনিট- ফৌজদারহাট, হাটহাজারী, মোহরা, বাড়বকুণ্ড, সন্দ্বীপ, পটিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারীতে তিন-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ।

এদিকে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। ৮টি কেন্দ্রে নামমাত্র উৎপাদন হচ্ছে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। মাতারবাড়ি সহ হিসেব করলে চট্টগ্রামে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চট্টগ্রামে এখন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ১৩শ’ থেকে প্রায় ১৫শ’ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। গত ১৫ এপ্রিল অফিস খোলার দিন চট্টগ্রামে ১২০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং ছিল। এর আগে ১৪ এপ্রিল কোনো লোডশেডিং ছিল না।

অন্যদিকে বিদ্যুৎখাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। তাই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু এখন সরবরাহ করা হচ্ছে এর অনেক কম। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।

পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে উৎপাদন ভালো হচ্ছে। গত পরশুদিনও বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৭৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। চাহিদা ছিল ১৩৭৫ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে দুপুরে পাওয়া গেছে ১২৯৮ মেগাওয়াট। দিনে লোডশেডিং ছিল ৭৭ মেগাওয়াটের মতো।

প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী আরও বলেন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত পিজিসিবি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ মেঘনাঘাটে চলে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ এখনো আমরা রিসিভ করতে পারছি না। মাত্র ৩শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা রিসিভ করতে পারছি।

ভোক্তা-অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সরকারি তথ্যের চেয়ে বাস্তবে আরও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পাওয়া যাচ্ছে না, তবুও বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।’

;

ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নোয়াখালী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান (৫৫) নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিককে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিক এ হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ জানাতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬নং ক্লাস্টার থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এর আগে, সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ১১৬নং ক্লাস্টারে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮নং ক্লাস্টারের মৃত মো.আব্দুল আলীর ছেলে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ভাসানচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর হোসেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮নং ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬নং ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার তার ছেলে ১১৬নং ক্লাস্টারে বাবাকে সকালের নাশতা দিয়ে যান। এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে একই স্থানে তার ছেলে বাবার জন্য দুপুরের ভাত নিয়ে যান। ভাত নিয়ে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তখন ছেলে তার বাবাকে ১১৬নং ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে সে তার বাবার গলা কাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিলে অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

এসআই নুর হোসেন আরও বলেন, পিছনের দিক থেকে গলা কেটে তাকে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

;

চট্টগ্রামে পত্রিকা সম্পাদকের বাড়িতে ডাকাতি, নগদ টাকা-স্বর্ণালংকার লুট



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় একটি আঞ্চলিক পত্রিকার সম্পাদকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ডাকাত দল ওই বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলার মাদার্শা এলাকায় দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখারের বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

তৌফিক ইফতিখার জানান, আমি দুই দিন আগে বাড়ি থেকে শহরে চলে আসি। বাড়িতে শুধু কেয়ারটেকার ছিল। ঘটনার দিন রাত আড়াইটার দিকে বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে জানালার গ্রিল কেটে ৬ জনের মুখোশধারী সশস্ত্র ডাকাত দল ঘরে প্রবেশ করে।

ডাকাতরা ঘরে প্রবেশের পর প্রথমে বাড়ির কেয়ারটেকারকে মারধরের পর হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। এরপর ঘরের প্রত্যেকটি কক্ষের জিনিসপত্র তছনছ করে লুটপাট চালায়। এসময় ডাকাতরা নগদ ৪০ হাজার টাকা, ১ ভরি স্বর্ণ ও মূল্যবান জিনিসপত্রসহ ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয়। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার জানান, ঘরে কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ না থাকায় সংঘবদ্ধ চোরের দল জানালা কেটে ঘরে প্রবেশ করে ১ ভরি স্বর্ণ ও সামান্য কিছু নগদ টাকা নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া এ ঘটনায় অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;