চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেট কারা!



ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
কোরবানির পশুর চামড়া

কোরবানির পশুর চামড়া

  • Font increase
  • Font Decrease

চামড়া শিল্পই দেশের অর্থনীতির জন্য দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সম্ভাবনাময় এ খাতের প্রধান কাঁচামাল চামড়ার দাম বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। কিন্তু কেন চামড়ার বাজার এমন অস্থিতিশীল, তার সমীকরণ কিছুটা জটিল। একে অপরকে দোষারোপ, সিন্ডিকেটসহ রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। আর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়তে হয় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তাদের অভিযোগ, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের তৈরি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন প্রশ্ন উঠেছে চামড়ার বাজারের সিন্ডিকেট কারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া দর অনুযায়ী লবণ মিশ্রিত চামড়া ২০ বর্গফুটের একটি চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছয়শ থেকে সাতশ টাকা। সেখানে লাভের আশায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বাসা-বাড়ি থেকে চামড়া কিনেছেন তিনশ থেকে চারশ টাকা দরে। কিন্তু মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তারা। আড়তদাররা চামড়া কেনার টাকার অভাব আর সংরক্ষণের কথা বলে জটিল সমীকরণে ফেলে দেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ফলে আড়তদাররা সরাসরি চামড়া না কেনায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় চামড়া নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করে। পরে চামড়া নষ্ট হওয়ার আতঙ্কে নামমাত্র মূল্যে লোকসানে বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আর কম দামে কিনে মধ্যসত্ত্বভোগীরা মুনাফা রেখেই সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারদের কাছে। যা পরে আড়তদাররা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে ট্যানারি মালিকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে কিংবা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করেন। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা মধ্যসত্ত্বভোগী তৈরি করে মাঝখান থেকে বেশি লাভবান হয় বলে জানা যায়।  

আরও পড়ুন: সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লবণের দাম, বিক্রি হয়নি অর্ধেকও

সূত্র বলছে, অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়ার ব্যবসা সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে তারা অল্পতেই হতাশ হয়ে লোকসানে পড়েন। কারণ প্রথম দিনেই তারা চামড়া বিক্রি করতে না পারলে অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন, এবং পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়ে যান। কিন্তু এই চামড়া তারা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে ১৫ দিন রাখতে পারলেই লাভবান হতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাজারের পুঁজি নেই এমন অজুহাতে মধ্যসত্ত্বভোগীরা তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা এসব চামড়া কম দামে কিনে বাড়তি মুনাফা অর্জন করছে। আর সার্বিকভাবে যারা পশু কোরাবানি করেন, তারা দাম কম পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা থাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। কারণ তারাই তৃণমূল পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন। তারা যখন আড়তদারদের কাছ থেকে দাম পান না, তখন তার প্রভাব পড়ে গোটা দেশের চামড়ার বাজারে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565693215249.jpg

জানা গেছে, ঢাকায় ২০১৩ সালে যেখানে গরুর চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, সেখানে এ বছর এই চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সময় খাসির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। দুই ভাগ কমে এ বছরে এর দাম নেমে এসেছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। অনেক ক্ষেত্রে খাসির চামড়া বিনামূল্যেও দেওয়া হয়। এ বছর এক কোটি পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল সোয়া এক কোটি পিস। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় অন্তত ১৫ লাখ পিস চামড়া কম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন তারা ব্যবসায়ীরা।

লালবাগের পোস্তায় চামড়ার পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ দেয়ার কাজ চলছে আড়তগুলোতে। সব মিলিয়ে এবার ৭ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে পোস্তায়। আড়তে চামড়া লবণজাত অবস্থায় থাকবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এরপর এখান থেকে চামড়া নেবেন ট্যানারি মালিকরা।

তবে সাইন্সল্যাব এলাকায় গড়ে ওঠা বাজারের অর্ধেক চামড়া আজ রাতের মধ্যে সাভারের হেমায়েতপুরে চলে গেছে। সেখানে গিয়ে লবণ লাগানো হবে। বাকি ৩০ শতাংশ চামড়া যাবে হাজারীবাগে। আর সাধারণত ২০ শতাংশ চামড়া যায় পোস্তায়। পরে হাজারীবাগ ও পোস্তা থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে নিয়ে যাওয়া হবে।

আরও পড়ুন:  চিরচেনা রূপ হারিয়েছে পোস্তা!

চামড়ার বাজারের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দাউদকান্দি থেকে আসা মেম্বার রহম আলি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, '১২ বছর যাবত এই ব্যবসা করি, কিন্তু এমন লস কোনদিন হয় নাই। কেউ চামড়া নিতে চায়না, দামও কয় না। আড়তদাররা কয় হেগো কাছে টাকা নাই। এহন আমি সব চামড়া ফেরত নিয়া যামু, লবণ দিয়া রাইখা দিমু। পরে ভালো দাম পাইলে বেচুঁম, নইলে সব লস হইবো।'

আর আড়তদাররা জানান, পুঁজি না থাকায় তারা চামড়া কিনতে পারছেন না। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করলে সমস্যা থাকবে না। বাজারও আগের মতোই চাঙা হয়ে যাবে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা বাজারে এই সংকট তৈরি করছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565693243497.jpg

তবে ট্যানারি মালিকরা মনে করেন চামড়ার আড়তদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে। ফলে সংকটে পড়ছে চামড়ার বাজার। কিন্তু চামড়ার বাজারে কোনও সিন্ডিকেট আছে বলে মনে করেন না আড়তদার ও ফড়িয়ারা। তাদের দাবি শুধুমাত্র ট্যানারি মালিকরা পাওনা অর্থ পরিশোধ করলেই সমস্যার সামাধান সম্ভব।

কারা চামড়ার বাজারের সিন্ডিকেট জানতে চাইলে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, চামড়ার বাজার অস্থিতিশীল করছে পোস্তার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন আমাদের কাছে ২৫০ কোটি টাকা পাওনা আছেন, এটি একদমই সত্য নয়। তারা আমাদের কাছে ১৫০ কোটি টাকার মতো পাওনা আছেন। অধিকাংশ ট্যানারি মালিকই ইতোমধ্যর তাদের অর্থ পরিশোধ করেছেন। সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারিগুলোও প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছে। আমাদের ব্যবসা ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার, সেখানে এমন সমস্যা কিছুটা হবেই। তবে কাঁচা চামড়ার বাজারটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে আমাদের কোন হাত নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যখন পোস্তায় চামড়া বিক্রি করতে যান, তখন তারা সেটি তিনশ' কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি টাকা দিয়ে চামড়া কেনেন। কিন্তু আমাদের কাছে বিক্রির সময় তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেন। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পোস্তার ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়টি সঠিক নয়। এখানে সিন্ডিকেটও কাজ করে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিভাবে লাভবান হতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসয়ীরা অনেক সময় না বুঝে কম দামে চামড়া বিক্রি করে দেন। কিন্তু তারা যদি ট্যানারিগুলো যখন চামড়া কিনে, তখন বিক্রি করে তাহলে কিন্তু তাদের কোন লোকসান হবে না। এই সময় পর্যন্ত তারা চামড়া লবণ দিয়ে রাখলেই সমস্যা হয় না। কিন্তু সাধারণত চামড়া অনেক হাত বদল হওয়ার কারণে সংকট হয় বেশি। কারণ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফড়িয়ারা চামড়া কিনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন, তারা আবার আমাদের কাছে অনেক বেশি দামে চামড়া বিক্রি করেন। ফলে অনেক হাত ঘুরে চামড়ার দামও বাড়তে থাকে। কিন্তু বঞ্চিত হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন:  চামড়ায় নিঃস্ব ফড়িয়ারা, লাভবান আড়তদাররা

আর চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেট আছে, তা মানতে নারাজ বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, চামড়ার বাজারে কোনও সিন্ডিকেট হয় না। প্রতিবছর ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেটের কথা বলেন, কিন্তু এটি সঠিক নয়। সমস্যা হয় তাদের কাছে পাওনা টাকা যখন আমরা পাই না তখনই। তারা প্রচুর টাকা বকেয়া রেখেছেন। তাদের কাছে ৩৫০ কোটি টাকার মতো আমরা পাওনা রয়েছেন আমাদের আড়ৎদাররা। কিন্তু আমরা একেবারেই চামড়া কিনছি না বিষয়টি তেমন নয়, কিন্তু আমরা যে পরিমাণ কিনতে চাচ্ছি তা পুঁজির অভাবে কিন্তু পারছি না। সবার কাছে টাকা থাকলে বাজারে প্রতিযোগিতা থাকত, ফলে চামড়ার দামও বাড়ত।

তিনি বলেন, বাজারে কম দাম হলেও চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে। আর জেলা পর্যায়ের যারা এখনও চামড়া আনতে পারেননি, তারা কিন্তু লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। ফলে চামড়া পচে যাচ্ছে বিষয়টি তাও নয়। ৮০ ভাগ ফড়িয়ারাও কিন্তু এখন লোকসানে আছেন। ফলে ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

প্রসঙ্গত, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম অনুযায়ী ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতিটি ২০ থেকে ৩৫ বর্গফুটের চামড়া লবণ দেওয়ার পরে ৯০০ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। আর রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে চামড়া বেচা-কেনা হচ্ছে আরও কম দামে।

আরও পড়ুন:  রংপুরে চামড়ার সরবরাহ কম, হতাশ ব্যবসায়ীরা

চামড়া পাচার রোধে বেনাপোল সীমান্তে সতর্কতা

   

বাংলাদেশ-মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশ-মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা

বাংলাদেশ-মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা

  • Font increase
  • Font Decrease

মরিশাসের পররাষ্ট্র, আঞ্চলিক সংহতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী মনিশ গোবিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) মরিশাসের স্থানীয় সময় সকালে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে মরিশাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য মরিশাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে উল্লেখ করে দুই দেশের সম্পর্ককে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন মর্মে মরিশাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে অবহিত করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে মরিশাসে আরও বেশি শ্রমিক ও পেশাজীবীদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এছাড়া মরিশাসে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা যাতে দ্রুত দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারে সে ব্যাপারে মরিশাস সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।

যেহেতু মরিশাস আফ্রিকা মহাদেশের প্রবেশদ্বার তাই মরিশাসে বাংলাদেশের বিনিয়োগের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বৈঠকে তুলে ধরেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে মরিশাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মনিশ গোবিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার নিয়ে প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে মরিশাস অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

;

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল



নিউজ ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে একটি বিশেষ পেশেন্ট ফোরামের আয়োজন করেছে বাংলাদেশের প্রথম জেসিআই-স্বীকৃত হাসপাতাল এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই কোলোরেক্টাল ক্যান্সার। আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, হাসপাতালটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণ এবং ক্যান্সারের সাথে লড়াকু সাহসী রোগীরা তাদের নিজেদের অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণ, স্ক্রীনিং নির্দেশিকা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির উপর বিশেষ জোর প্রদান করেন।

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং হেপাটোলজি বিভাগের কোঅর্ডিনেটর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ লুৎফুল এল. চৌধুরী নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল বজায় রাখার বিষয়ে জোর দেন। তিনি বলেন, “একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট হিসেবে আমরা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার ভয়াবহ আকার ধারণের আগেই তা সনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমি মনে করি, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইতে সচেতনতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমাদের উচিৎ ক্যান্সার নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্যসম্মত লাইফস্টাইল বজায় রাখা। আমাদের মনে রাখা উচিত যে উপযুক্ত জ্ঞান হলো প্রতিরোধের অন্যতম ভিত্তি।”

মেডিকেল অনকোলজির কোঅর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ ফেরদৌস শাহরিয়ার সাইদ বলেন, “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার মোকাবেলায় রোগীদের সার্বিক সহযোগীতার পাশাপাশি যথাযোগ্য চিকিৎসার ধাপগুলো নিশ্চিত করতে আমরা স্বচেষ্ট। তবে সাধারণ মানুষকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।”

জেনারেল অ্যান্ড ল্যাপ সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, “কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রোগীর জীবন বাঁচাতে সময়মত পদক্ষেপ ও উন্নত অস্ত্রোপচারের কৌশলগুলো গ্রহণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ।”

এভারকেয়ার হসপিটাল, বাংলাদেশের সিইও ও এমডি ডাঃ রত্নদীপ চাষ্কার বলেন, “এভারকেয়ার হসপিটালের মূল লক্ষ্য স্বাস্থ্যজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখা। আমাদের দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকমন্ডলী গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিতকরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে ।”

এভারকেয়ার হসপিটাল, বাংলাদেশের মেডিকেল সার্ভিসেসের পরিচালক ডাঃ আরিফ মাহমুদ বলেন, “কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার প্রচার এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি রোগীকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও সহায়তায় এভারকেয়ার হসপিটাল সর্বদা স্বচেষ্ট।”

আয়োজিত এই পেশেন্ট ফোরামে বিশেষজ্ঞরা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। দেশের প্রথম জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) স্বীকৃতি পাওয়া এভারকেয়ার হসপিটালের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অঙ্গীকারগুলোসহ ক্যান্সার মোকাবেলায় দক্ষতা ও রোগীদের স্বাস্থ্য উন্নতি প্রদর্শনে এই ফোরামটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

অনুষ্ঠানটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ ইকবাল মুর্শেদ কবির ও সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রফেসর ডাঃ শায়লা পারভীন, এভারকেয়ার হসপিটাল, বাংলাদেশের সিইও ও এমডি ডাঃ রত্নদীপ চাষ্কার, মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের ডিরেক্টর ডাঃ আরিফ মাহমুদ, চিফ মার্কেটিং অফিসার ভিনয় কাউল- সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন ক্যান্সার-সারভাইভার, যারা তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো সবার সাথে শেয়ার করেন।

;

মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আরাফাতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মরিশাসের পররাষ্ট্র, আঞ্চলিক সংহতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী মনিশ গোবিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) মরিশাসের স্থানীয় সময় সকালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে উল্লেখ করে দুই দেশের সম্পর্ককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন মর্মে মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে মরিশাসে আরও বেশি শ্রমিক ও পেশাজীবীদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এছাড়া মরিশাসে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে দ্রুত দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারে সে ব্যাপারে মরিশাস সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন প্রতিমন্ত্রী।

যেহেতু মরিশাস আফ্রিকা মহাদেশের প্রবেশদ্বার তাই মরিশাসে বাংলাদেশের বিনিয়োগের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বৈঠকে তুলে ধরেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনিশ গোবিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার নিয়ে প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে মরিশাস অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

;

ঈদযাত্রার ৬ বছরে সড়কে ১৬৭৪ প্রাণহানি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ৬ বছরে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৪ ও আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৭৬৫ জন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সংস্থাটি রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য তুলে ধরেন।

২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৬ বছরে ঈদযাত্রায় মোট ৮৩ দিনের তথ্য তুলে ধরে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, ২০১৯ সালে ঈদযাত্রার ১৪ দিনে ১৪৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৯৪ জন ও আহত হয় ৪০২ জন। ২০২০ সালে ১২ দিনে ১২৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৪৭ জন ও আহত ৩১৮ জন। ২০২১ সালে ১৪ দিনে ২৩৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩১৪ জন ও আহত ২৯১ জন। ২০২২ সালে ১৪ দিনে ২৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৬ জন ও আহত ১৮০০ জন। ২০২৩ সালে ১৪ দিনে ২৪০টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৫ জন ও আহত ৪৫৪ জন। ২০২৪ সালে ১৫ দিনের ঈদযাত্রায় ৩৫৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৬২ জন ও আহত হয়েছেন ১৫০০ জনের বেশি।

চলতি বছরের তথ্য তুলে ধরে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৫ দিনে (৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল) দেশে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ১৫০০ জনের বেশি। যদিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যা ৪৯৩ জন। শুধু ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালেই (পঙ্গু হাসপাতালে) ঈদের তিনদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪৫৪ জন, যার অধিকাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এই বাস্তবতায় ১৫ দিনে সারা দেশের হাসপাতালে আহত মানুষের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি হবে।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহতের মধ্যে নারী ৬৩ জন, শিশু ৭৪ জন।এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫১ দশমিক ১১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছেন ৬৮ জন, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪১ জন, অর্থাৎ ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

একই সময়ে ৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৮ আহত হয়েছেন। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১০৪টি দুর্ঘটনায় ১১৩ জন নিহত এবং সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২৩টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত।

এবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছরে ঈদুল ফিতরে ২৪০টি দুর্ঘটনায় ২৮৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। প্রতিদিন গড়ে ১৭ দশমিক ১৪টি দুর্ঘটনায় ২০ দশমিক ৩৫ জন নিহত হয়েছিল। এ বছরে ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে ২৩ দশমিক ৮৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ দশমিক ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এই হিসেবে এবছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

;