ভাড়ার প্লেন ঢাকায়, তবু হজ ফ্লাইট চলবে নিজস্ব বোয়িংয়ে
ঢাকা: হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতি বছরই উড়োজাহাজ ভাড়া করে থাকে এবং ভাড়ায় আনা সেই উড়োজাহাজ দিয়েই পরিবহন করা হয় হজযাত্রী।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এরই দু’টি উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়েছে। আরো উড়োজাহাজ ভাড়া করতে এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে।
ভাড়ার উড়োজাহাজ বিমানের বহরে যোগ দিলেও নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর দিয়ে হজযাত্রী পরিবহনের বিষয়টি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিমানের ভেতরের অনেকেই কৌতুহল দেখালেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খোলাসা করছে না। অনেকের মনেই প্রশ্ন, ভাড়া আনা হচ্ছে এক উদ্দেশে, আর কাজ চলবে অন্য উদ্দেশে। এর রহস্য কী?
এ বছর রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্সটি ৬৩, ৫৯৯ জন হজযাত্রী পরিবহন করবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হজের আগে বড় ধরনের উড়োজাহাজের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে ৪০০ কিংবা এর চেয়ে অধিক আসনের উড়োজাহাজের। যে কারণে এই আসনের উড়োজাহাজের ভাড়ার মূল্য সবচেয়ে বেশি থাকে।
বিষয়গুলো বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। হজ ফ্লাইট সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ (সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম) চারটি উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী এরই মধ্যে বিমানের বহরে যোগ হয়েছে একটি বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ও বোয়িং ৭৭৭ ২০০। মালয়েশিয়ার ফ্লাই গ্লোবাল কোম্পানি থেকে তিন মাসের জন্য উড়োজাহাজ দু’টি ওয়েট লিজে (ক্রুসহ) আনা হয়েছে। এছাড়া আরো দু’টি উড়োজাহাজ ভাড়া নিতে বিমান সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করেছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, হজযাত্রী পরিবহনে উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে কেলেঙ্কারি বিমানের জন্য নতুন ঘটনা নয়। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজের একটি হলো, সুষ্ঠুভাবে হজযাত্রীদের পবিত্র ভূমি সৌদি আরবে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু হজ এলেই বিমানেরই কিছু অসাধু শ্রেণি এ নিয়ে বাণিজ্য করতে চায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, অর্থ সাশ্রয় করতেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবার নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিমানের যুক্তি, বেশি আসনের উড়োজাহাজের ভাড়া বেশি আর তা দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা খরচও বেশি। তাই তুলনামূলক কম আসনের উড়োজাহাজ ভাড়া করে অর্থ সাশ্রয়ের চেষ্টা করেছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
লিজের উড়োজাহাজের ভাড়া বেশি হয়, তাহলে বিমান কেন আরো আগে হজের উড়োজাহাজ ভাড়া করতে উদ্যোগী হয়নি। যেহেতু বিমান বেশি আসনের উড়োজাহাজ ভাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই নিজস্ব উড়োজাহাজেই হজযাত্রী পরিবহন করতেই হবে। নতুবা নির্দিষ্ট সময়ে এত বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হজে বেশি আসনের উড়োজাহাজ প্রয়োজন, তা জানার পরেও আরো দু’টি উড়োজাহাজ ভাড়া করতে সম্প্রতি যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে সেখানেই ৩০০ আসনের উড়োজাহাজ চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ছোট আকারের চেয়ে বড় আকারের উড়োজাহাজ ভাড়া যদি হজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে কেন জেনেশুনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যে উদ্দেশে ভাড়া আনা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যই পূরণ হয়নি। এটি আসলে প্রতিষ্ঠানের দ্বিচারিতা।
এ প্রসঙ্গে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) শাকিল মেরাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের অর্থ সাশ্রয় করতেই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভাড়ার উড়োজাহাজের চেয়ে নিজস্ব বোয়িং দিয়ে হজযাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।