রেলের তিন হাজার একর জমি বেদখল
বাংলাদেশের পুরানো রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে রেলওয়ের অনেক ভূ-সম্পদ রয়েছে। তবে বেদখল হওয়ায় দিন দিন এই সম্পদের পরিমাণ কমে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষ এই জমি উদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সারাদেশে বাংলাদেশ রেলের প্রায় তিন হাজার ২১৩ দশমিক ৭৮ একর জমি বেদখল হয়ে আছে। যার মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৭৫০ একর এবং পশ্চিমাঞ্চলে দুই হাজার ৭১৫ দশমিক ৯১ একর জমি বেদখল হয়ে আছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগে বেদখল হয়ে আছে ৫৩৫ দশমিক ৩১ একর জমি।
রেলওয়ে ভূ-সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত রেলের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮২০ দশমিক ৩৫ একর। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে জমি আছে ৩৭ হাজার ৪১৯ দশমিক ৩৫ একর এবং পূর্বাঞ্চলে আছে ২৪ হাজার ৪০ দশমিক ১ একর।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালী, নাখালপাড়া, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ঘুরে দেখা গেছে, রেল লাইনের পাশে ১০ ফুট জায়গা খালি রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। রেললাইনের পাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে বাজার, বস্তি, দোকানপাট এবং নানা ধরনের স্থাপনা। এর মাধ্যমে রেলের জমি বেদখলের চিত্র স্পষ্টতই চোখে পড়ে।
রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকার দু’পাশে গড়ে উঠেছে বস্তি। ওই বস্তির বাসিন্দা মো. আয়নাল হক জানান, রেললাইনের পাশের বস্তিতে তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে থাকেন। তবে কোনো প্রভাবশালীকে চাঁদা দিতে হয় না। নিজেরাই ঘর বানিয়ে সেখানে থাকেন এবং ঘর ভাড়া দেন।
তিনি আরও জানান, তারা জোর করে রেলের জমি দখলে রাখেননি। কর্তৃপক্ষ যেদিন তাদের উঠিয়ে দেবে সেদিনই তারা চলে যাবেন।
তেজগাঁও রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার এমএ আজিজ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'তেজগাঁও স্টেশনের পাশে অনেক জমি প্রভাবশালীদের দখলে আছে। অনেকবার উচ্ছেদ করেও তাদেরকে সরানো যায়নি। খুব শিগগিরই ঢাকা টু টঙ্গী চার লেনের কাজ শুরু হবে। তখন এমনিতেই রেললাইনের পাশের এই বস্তি উচ্ছেদ করা হবে।'
রেল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রতিমাসেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেলের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
রেলের ভূ-সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে ২০১৯ এর জুলাই মাস পর্যন্ত এক বছরে পশ্চিমাঞ্চলে থেকে বেদখল জমি উদ্ধার হয়েছে ৯৬ দশমিক ২৩ একর। একই সঙ্গে পূর্বাঞ্চলে উদ্ধার হয়েছে ৭৭ দশমিক ৪৪ একর জমি। পূর্বাঞ্চলের চেয়ে পশ্চিমাঞ্চলে বেদখল হওয়া বেশি জমি উদ্ধার হয়েছে।
বেদখল জমি উদ্ধার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন খাতে রেলের জমি বেহাত হয়ে আছে। বেহাত হওয়া এসব জমি উদ্ধার করার জন্য প্রতি মাসেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আগের চেয়ে এখন বেদখল হওয়া জমির পরিমাণ অনেক কমে এসেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য বিশেষ কোনো বাজেট না থাকায় আমরা পুরোপুরি কাজ করতে পারছি না। এজন্য বিশেষ বাজেটের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত অর্থ পেলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে নিজেরাই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারব। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ভাড়া করে নিয়ে আসতে হয় মেশিন। যাতে বেশি অর্থ খরচ হয়, ফলে বেদখল জমি উচ্ছেদে অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়।'