‘রাজউক সৃষ্টি ছিল আহাম্মকি সিদ্ধান্ত’
নগর পরিকল্পনা স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব কিন্তু কোনো এক সময় আহাম্মকি করে আমরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক করে তার হাতে দায়িত্ব দিয়েছি। অথচ নগরের জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা সিটি করপোরেশনের কোনো ক্ষমতা নেই। তাই রাজউক ভেঙে নগর সরকার বা সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দেওয়া হোক। তাদের লোকবল, অর্থ, অন্যান্য সম্পদ সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হোক।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক সেবা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিবে এসব কথা বলেন। ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক মশিউর রহমান খান।
ডুরা’র সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, বিআইপি সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান প্রমুখ।
জলজট ও কঠিন তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০১৭ সালে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সভাপতিত্বে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ওয়াসাকে দ্বিখণ্ডিত করে সিটি করপোরেশনের হাতে দিতে।
সেই সিদ্ধান্তের কোনো অগ্রগতি নেই উল্লেখ করে মন্ত্রীর কাছে এর কারণ জানতে চেয়েছেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ‘সেদিনের সেই পরিকল্পনা কেন বাস্তবায়ন হলো না?’
তিনি আরও বলেন, ‘পানি সরবরাহ নিয়ে মশকরা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানির দিকে যেতে হবে। কেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি?’
রাস্তা কাটার মহৎসব থেকে রেহাই পেতে ১৯৯৮ সালে ধানমন্ডি ৩২ নং সড়কের ডাক সিস্টেমকে ফলো করার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, ‘১৯৯৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ধানমন্ডি ৩২ নং সড়কে জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস পয়ঃনিষ্কাশন পুরো সড়কে উত্তর প্রান্তের ফুটপাত জুড়ে কৌতূহল প্রকোষ্টের মধ্য দিয়ে একটা ডাক সিস্টিমে করে ফেলেছিলাম। যে কারণে ওই সড়কে ১৯৯৮ সালের পর আর কাটতে হয়নি। কাজেই সমস্ত কার্যক্রম একটি ডাকটিং সিস্টেমের মাধ্যমে করা উচিত। সড়ক কাটার মহোসৎব আর বছর শেষে জুন মাসে টাকা করা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।’
নগরের নিরাপত্তায় মেট্রোপলিটন পুলিশকে নগর সরকারের অধীনে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএমপি নগরীর জন্য করা হয়েছে। কিন্তু কেন তা স্থানীয় সরকারের অধীনে থাকবে না? পুলিশ সরকারের বা তাদের সংস্থার অধীনে থাকুক কিন্তু ডিএমপিকে সিটি করপোরেশনের অধীনে দিয়ে দেওয়া হোক।’
সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা নিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, ‘মৌচক-মগবাজার ফ্লাইওভারে ছিনতাই হয়, বিদ্যুতের পোস্ট লাগোনো যাচ্ছে না, কেন? সমন্বয়ের অভাব। কাজেই সমন্বিত নগর ব্যবস্থাপনায় কমিটি হোক আর ব্যবস্থা হোক সেটা নগর সরকার হোক বা অন্য কোন আদলে হোক।’
যত্রতত্র ময়লা ফেললে আইনের প্রয়োগ:
পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে জনসচেতনতাকেই প্রথম কাজ বলে দাবি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিইও আব্দুল হাই বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের একটি সংস্থা সিটি করপোরেশন। এখানে কাজ করতে বড় সমস্যা জনসেচতনতা ও সমন্বয়হীনতা। আমরা ড্রেন পরিষ্কার করতে যেয়ে দেখেছি ড্রেনের ভেতর বিশাল আকারের মেট্রেস। যেটা ২০-৩০ জন লোক দিয়েও উঠাতে পারি নাই। অনেক স্টিলের আলমারি পেয়েছি। যারা এটা ফেলেছেন তাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই? শুধু সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করে দিয়ে আসবে। দুই জনকেই সচেতন হতে হবে। জনসচেতন হলে প্রত্যেকের নাগরিক সেবা দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডিস মশা রোধে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন করতে আমরা চিরুনি অভিযান করছি। গত পাঁচদিনে ১ লাখ ৫২ হাজার বাড়ি পরিদর্শন করেছি। তাতে দেখা গেছে ২০ শতাংশ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা। দুই বাড়ির মাঝখানে খালি জায়গা ময়লা এটা কি নগরবাসীর দায়িত্বের মধ্যে পরে না? আমরা প্রাথমিকভাবে সচেতন করছি। আসলে আইনের প্রয়োগ ছাড়া এটা সম্ভব না। বহির্বিশ্বে দেখা যায় যত্রতত্র ময়লা ফেললে আইন প্রয়োগ করা হয়। আমরা এখন প্রাথমিকভাবে সচেতন করছি। পরবর্তীতে আইন প্রয়োগ করে হলেও আমরা বাস্তবায়ন করব। এ ব্যাপারে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’