রমেক হাসপাতালে অনুসন্ধান ডেস্ক আছে, নেই সেবা
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান ডেস্ক থাকার পরও মিলছে না সেবা। বেশিরভাগ সময়ই ডেস্কের দায়িত্বে থাক কর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগী ও স্বজনদের পড়তে হয় নানা দুর্ভোগে।
এছাড়া রোগী ভর্তি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফেরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে হাসপাতালের কর্মচারীদের খুশি রাখতে হয়।
রমেক হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, ছয় তলা বিশিষ্ট রমেক হাসপাতালটিকে ‘এ’ থেকে ‘জে’ ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। হাসপাতালের পূর্ব-পশ্চিম মিলে দশটি ব্লকে মোট ৪০টি বিভাগ রয়েছে। বিশাল আয়তনের এই হাসপাতালটিতে হঠাৎ করে কোনো রোগীকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই হাসপাতালের নিচ তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের সম্মুখে রয়েছে অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান ডেস্ক। কিন্তু এসব ডেস্কে বেশির ভাগ সময়ই সেবা মিলে না। কোনো কোনো সময় রোগী বা স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণকরতে দেখা যায় ডেস্কে থাকা কর্মচারীদের।
হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় সুমন মিয়া নামে এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমি হৃদরোগ বিভাগের অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে হাসপাতালের কোনো লোকজন ছিল না। কার কাছ থেকে আমার রোগীর তথ্য নিব, তা জানতে এক আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসা করে কোনো সহায়তা পাইনি। বরং ওই আনসার সদস্য আমাকে ডেস্কের সামন থেকে সরিয়ে দেয়।’
আরও পড়ুন: রমেকে বিড়ালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ রোগীরা!
দিনাজপুর থেকে আসা রানু আকতার নামে এক রোগীর স্বজন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমার কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় আমি পুরো হৃদরোগ বিভাগের তিনটি ইউনিট ঘুরে আমার রোগীকে খুঁজে বের করি। অথচ অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান ডেস্ক থেকে এই সহায়তা পেলে হয়তো আমার দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
হৃদরোগ বিভাগের মতোই হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগ, শিশু বিভাগ, প্লাস্টিক ও বার্ণ ইউনিট বিভাগসহ বেশিরভাগ বিভাগে রোগীকে খুঁজতে আসা স্বজনদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ উঠে এসেছে।
রোগীর স্বজনদের দাবি, অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান ডেস্কে বসে থাকা নার্স ও আয়াদের কাছ থেকে সহসাই কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। আর যারা সকালে ঝাড়ু দিয়ে দুপুর থেকে কেবিনের আশপাশে ঘুরঘুর করে তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পেতে হলে টাকা দিতে হয়। যেন টাকা ছাড়া হাসপাতালে সেবা মিলে না।
এ ব্যাপারে রমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল গফুর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমার বিভাগের আইসিসিইউ ইউনিটে অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান ডেস্ক আছে। তবে এই বিভাগের প্রবেশ পথে থাকা ডেস্কটি এখন ব্যবহার না করায় সেখান থেকে কেউ কোনো তথ্য সেবা পাচ্ছেন না। সম্ভব হলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ডেস্কটি চালু করার ব্যবস্থা করা হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর বিভাগের আট জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান রমেক হাসপাতাল। প্রতি বছর গড়ে চার লাখের মতো মানুষ এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নেন। আর প্রতিদিন গড়ে প্রতি বিভাগে ভর্তি থাকেন পাঁচ শতাধিক রোগী। দিনে ২০০-৩০০ রোগী নেন জরুরি চিকিৎসা সেবা।