বিদেশি কর্মী নিয়োগে সৌদির কঠোর নীতি, বিপাকে পেশাজীবীরাও



জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরব (জেদ্দা) থেকে: দীর্ঘ ১৪ বছরের প্রবাস জীবনকে ‘গুডবাই’ জানিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছেন শেখ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (৩৭)। চলছে দেশে ফেরার দিনক্ষণ গণনা। বিদেশের সব হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে শিগগির ঢাকার প্লেন ধরবেন তিনি।

শেখ মোহাম্মদ নজরুল বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন বুক ভরা হতাশা নিয়ে। সঙ্গি এখানে গাড়ি চালনা থেকে শুরু করে আরবি ভাষা শেখার মতো আরও অনেক অভিজ্ঞতা। যা হয়তো দেশে তেমন কোনো কাজেই আসবে না তার।

তিনি সাধারণ শ্রমিক হিসেবে নয়, সৌদি আরব এসেছিলেন পেশাজীবি হিসেবে। কাজ করতেন রিটেইল চেইন সুপার মার্কেট "আল আজিজিয়া পান্ডা’ নামের প্রতিষ্ঠানের এরিয়া কোচ হিসেবে। বাংলাদেশের স্বপ্ন, আগোরা বা মিনাবাজারের তুলনায় বহুগুণ বড় এই প্রতিষ্ঠানের ৩শ’ ৪০টি ষ্টোর রয়েছে গোটা সৌদিজুড়ে।

শেখ নজরুল দেশে ফিরছেন অনিশ্চয়তা আর অস্বস্তি নিয়ে, বলা চলে ফেরা নয়, ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।

সৌদি আরবজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা, সেই সঙ্গে আয়ের সঙ্গে জীবন ধারণের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ক্রমেই হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি। আর পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ইস্তফা দিয়ে প্রথম কর্মজীবনের সব স্মৃতিকে পেছনে ফেলে দেশে ফিরছেন তিনি।

কিন্তু কেন?

সৌদি আরবজুড়ে এখন কাজের ক্ষেত্রগুলোতে চলছে স্থানীয় নাগরিকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠিন শর্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বোঝা চাপানো হচ্ছে বাড়তি করের। ফলাফল কর্মি ছাঁটাই। তিনজনের কাজ একজনকে দিয়ে করাতে হচ্ছে, এতেই বিপত্তি। আর এ কারণে নিজ থেকেই দেশ ছাড়ছেন ঢাকার সাভারের শেখ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

কেবল নজরুল একা নন, ওই প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে সিনিয়র সিষ্টেম এনালিষ্ট হিসেবে কাজ করা উদ্ধর্তন দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেও জানা গেলো চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার শঙ্কা। সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ।

আলাপচারিতায় নিজেরাও জানালেন চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কথা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যায় মাষ্টার্স করা নারায়ণগঞ্জের আইন উদ্দিন শ্যামল (৪২)। ১৬ বছর ধরে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। তিনিও জানালেন চাকরির বাজারের অস্থিরতার কথা। তার মতে, আগে আয়ের ৫০ ভাগ অর্থ সঞ্চয় করা যেত, এখন ভারসাম্যহীন সবকিছু। সঞ্চয় কমছে, খরচ বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। নিত্যপণ্যে বেড়েছে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর। স্থানীয়দের জন্যে ভর্তুকি থাকলে ভিনদেশিদের ওপর রয়েছে বাড়তি চাপ।

একই পদে কর্মরত ফেনীর জহিরুল হক (৪০) জানালেন আরও ভয়ানক তথ্য।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় মাষ্টার্স শেষে আইটিতে উচ্চতর ডিপ্লোমা নিয়ে ১৬ বছর আগে যোগ দিয়েছিলেন একই প্রতিষ্ঠানে। "গত সপ্তাহেই আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আড়াই শ' বিদেশি কর্মি একযোগে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছাঁটাইয়ের তালিকা দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে।

কে কখন বাদ পড়ে,তা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে চলছে চরম অনিশ্চয়তা। চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ঠিকমতো ঘুমুতেও পারছেন না অনেকে।’

সৌদি সরকার বিদেশি কর্মি নিয়োগে কড়া শর্ত দিয়েছে। কর্মি প্রতি বছরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি ২ হাজার ৪শ' রিয়াল সরকারকে দিতে হবে। তার মানে জনপ্রতি বাংলাদেশি কর্মির জন্যে বর্তমান মুদ্রা মূল্যমান অনুযায়ী কোম্পানীকে বাড়তি গুনতে হবে ৫৩ হাজার ৬২০ টাকা।

হাজার হাজার কর্মির বিপরীতে সেটা যেমন বোঝা, তার বিপরীতে বিদেশি কর্মির স্থলে স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়া হলে উল্টো ভর্তুকির ব্যবস্থাও রেখেছে সরকার। যে কারণে ব্যয় সঙ্কোচন নীতিতে চলছে ছাঁটাই কার্যক্রম।

‘কর্মক্ষেত্রে শারিরীক ও মানসিক চাপেই আমরা এখন দিশেহারা। এমন পরিস্থিতি যে, এখন দেশে ফিরেও যথাযথ কাজ মিলবে না, বয়সও ফুরিয়ে যাচ্ছে। এমন অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ঢেকে গেছে আমাদের ভবিষ্যত’- যোগ করেন জহিরুল হক।

   

‘২৮৫ জন বিজিপি ও সেনাসদস্যকে ২২ এপ্রিল ফেরত পাঠানো হবে’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৫ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর সদস্যকে ২২ এপ্রিল নৌপথে ফেরত পাঠানো হবে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে বিশ্ব জোড়া শেখ হাসিনার আসন খানি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নিতে আশ্বস্ত হয়েছে দেশটি। আগামী ২২ এপ্রিল আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্য ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের জাহাজ যোগে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে। এবিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। যে জাহাজটি তাদের নিতে আসবে। সে জাহাজে মিয়ানমারে আটকে থাকা ১৫০ জন বাঙালিকে নিয়ে আসা হবে।

;

‘২৮৫ বিজিপি ও সেনাসদস্যকে ২২ এপ্রিল ফেরত পাঠানো হবে’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৫ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর সদস্যকে ২২ এপ্রিল নৌপথে ফেরত পাঠানো হবে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে বিশ্ব জোড়া শেখ হাসিনার আসন খানি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নিতে আশ্বস্ত হয়েছে দেশটি। আগামী ২২ এপ্রিল আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্য ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের জাহাজ যোগে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে। এবিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। যে জাহাজটি তাদের নিতে আসবে। সে জাহাজে মিয়ানমারে আটকে থাকা ১৫০ জন বাঙালিকে নিয়ে আসা হবে।

;

বার্তা২৪.কম-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. সাহাব এনাম খান

‘মধ্যপ্রাচ্য সংকটে প্রথম ভিকটিম বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসরায়েল-হামাস এর সংঘাতের পথ ধরে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার কোন কিনারা না হতেই ফের ইসরায়েল-ইরান সংঘাত গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার প্রথম ভিকটিম হবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। চলমান এই সংকটকে ‘দীর্ঘমেয়াদী’ উল্লেখ করে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে শুধুমাত্র গার্মেন্টস আর রেমিটেন্স নির্ভর হয়ে না থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কুটনীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে। বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক সাহাব। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক উত্তেজনকর পরিস্থিতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? এটি কি ধরণের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, বিশেষ করে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য?

ড. সাহাব এনাম খান: মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি পুরোই আনপ্রেডিকটেবল এবং এই আনপ্রেডিকটেবিলিটি অনেক লম্বা সময় ধরে থাকবে। এই আনপ্রেডিকটেবিলিটি শুধু ইসরায়েল বা ইরান ক’দিন লাফালাফি করলো এরপর আবার বন্ধ হয়ে গেল এরকম না। এই আনপ্রেডিকটেবিলিটি অনেকটা লম্বা সময় ধরে চলতে থাকবে এবং এর মূল কেন্দ্রবিন্দু থাকবে ইসরায়েল। ইসরায়েলেকে ঘিরেই আরব ও পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক। সুতরাং এখানে ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে ভোলাটাইলিটি। আর এর মূল দিকটা হল পশ্চিমা বিশ্বই এটাকে হ্যান্ডেল করে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে এখানে আরববিশ্বের কোন রোল নেই বাক্-যুদ্ধ করা ছাড়া। আরেকটা পয়েন্ট আছে তা হচ্ছে-এই ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে এখন একটি বড় মেরুকরণ হয়ে গেছে রাশিয়া-চীন-তুরস্ক-ইরান, এদেরকে কেন্দ্র করে। অন্যদিকে ইসরায়েলকে ঘিরে পশ্চিমা বিশ্বেও একটা মেরুকরণ হয়ে গেছে। এই মেরুকরণ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এরা চাইবে ওয়েস্ট এটা করতে না পারুক, যে কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থার ওপর একটা বড় রকমের চাপ পড়বে। যার প্রথম ভিকটিম হবে উন্নয়নশীল দেশগুলি।

বার্তা২৪.কম: তার মানে কি এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে বিশ্বব্যবস্থায় পশ্চিমা মনোপলি ভেঙে পড়েছে?

ড. সাহাব এনাম খান: একদমই। এজন্যই তো বিশ্বে মোটাদাগে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের মনোপলিতে ইসরায়েল রয়েছে কিন্তু ইরান নেই। তবে পশ্চিমাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কটা কি হবে, তারা এই সম্পর্ককে কিভাবে হ্যান্ডেল করবে তার ওপর নির্ভর করবে সামনের দিনগুলি কি রকম হবে। আরবদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক কেমন হবে সেটা এখানে ম্যাটার করবে না।

বার্তা২৪.কম: পশ্চিমাদেশসমূহ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে যে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয় আর তাদের ভেতরকার যে স্ট্যান্ড তার মাঝে কি এক ধরণের বৈপরিত্য লক্ষ্য করা যায় না…অন্ততঃ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করলে?

ড. সাহাব এনাম খান: তা তো বটেই। আরও একটি বিষয় যোগ করব, তা হচ্ছে-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কারণে ইসরায়েল-পশ্চিমা সংযোগটি একটা লম্বা সময় ধরে অস্থিরই থাকবে। ঠিক এ কারণেই বিশ্ব অর্থনীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থায় বড় রকমের চাপ তৈরি হচ্ছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে হবেই।

বার্তা২৪.কম: কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন আপনি?

ড. সাহাব এনাম খান: প্রথমতঃ বিভিন্ন রকমের স্যাংশন, অলটারনেটিভ কারেন্সির প্রেশার আসবে। দ্বিতীয়তঃ কৌশলগত কুটনৈতিক চাপও প্রচুর আসবে এই সময়ে। ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আমাদের এক ধরণের সাংবিধানিক অঙ্গীকারও আছে, আমরা তা দেখিয়েও আসছি। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও আমরা একই অবস্থান নিয়েছি। বিপন্ন মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো।

বার্তা২৪.কম: বাস্তবতার নিরিখে আমাদের কি ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

ড. সাহাব এনাম খান: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে আমাদের সম্পর্ণ নতুন করে চিন্তা ভাবনা করা দরকার। শুধুই গার্মেন্টস আর রেমিটেন্স নির্ভর হয়ে থাকলে হবে না। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আমরা যতটা না হিট হব বা ইউক্রেন সংকটে যতটা হয়েছি-ভারত কিন্তু ততটা হয়নি এর কারণ ভারতের অর্রথনীতির ডাইভার্সিটি আছে। আমি মনে করি-চারটি জায়গায় আমাদের খুব জোর দিয়ে কাজ করতে হবে। প্রথমতঃ এনার্জি সিকিউরিটি, আরও স্পষ্ট করে বললে স্বনির্ভর এনার্জি অর্জন করতে হবে আমাদের, যা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের দেশের জাতীয় স্বার্থকে অনেকে ব্যকিক্তগত স্বার্থের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। জাতীয় স্বার্থে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা ইন্ডিজেনাস সোর্স থেকে করতে হবে। অদক্ষ এনার্জি ইনস্টিটিউশনস দিয়ে আমাদের হবে না। পুরো জ্বালানি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ আমাদের বাণিজ্য কুটনীতিতে কেবল মৌখিকভাবে বললে হবে না, প্রায়োগিক অর্থে বাণিজ্য কুটনীতি জোরদার করতে হবে। এর মধ্যে নম্বার ওয়ান প্রায়োরিটি থাকবে, ‘ডাইভার্সিটি’। অর্থাৎ অর্থনীতির নানা খাত চাঙা করে তুলতে হবে।   

তৃতীয়তঃ আরব দেশগুলির সঙ্গে বিদ্যমান যে সম্পর্কে আছে, তাকে আরও গভীর করতে হবে। সেইসঙ্গে বৈশ্বিক এই উত্তেজনা ও সংঘাতে উন্নয়নশীল আরও যেসব দেশ আক্রান্ত হবে তাদের সঙ্গেও শক্তিশালী জোটবদ্ধতা তৈরি করা জরুরি। আমরা ব্রিকসে যেতে আগ্রহী না হয়ে নিজেরা একটা কিছু করতে চেষ্টা করতে পারি, যেখানে নিজেদের স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে। যেখানে বাংলাদেশের মত এমন অনেক দেশ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শঙ্কায় আছে। যদি বাংলাদেশ অনেকগুলি ইকনমিকে একসঙ্গে নিয়ে একটি কালেক্টিভ ভয়েস তৈরি করতে পারে তবেও তা কার্যকর ফল বয়ে আনবে।

অনেক দেশই আমাদের অনেক কথা বলবে, কিন্তু তা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কতটা ফলপ্রুসু হবে তা আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে। অন্ততঃ এক দশক ধরে বাংলাদেশ বাণিজ্য বহুমূখিকরণের কথা বলে আসছে, কিন্তু কি রপ্তানি করবে, কি আছে-তা নিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। এখানে ইন্ডিজেনাস কোন ইন্ডাষ্ট্রি সৃষ্টি করছে না, সম্ভাবনাময় পাটকে নিয়ে সেভাবে বড় রকম কিছু করা গেল না। তার মানে কেবল কথা নয়, প্রায়োগিক অর্থে বাস্তবভিত্তিক প্রচেষ্টা নেওয়া দরকার।

চতুর্থ হচ্ছে-অভ্যন্তরীণ বাজারকে আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ করা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বহুলাংশে পরনির্ভরশীল হয়ে আছে। ভারতে একটি ক্যাডবেরি চকলেট ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডে নিজেরা উৎপাদন করে ভোক্তাদের দেয়। তাতে ফরেন কারেন্সি নিয়ে আর ঝামেলা থাকে না। বাংলাদেশে পুরনো গাড়ি কিনতে মানুষজন একেবারে উদগ্রিব। এতবড় মার্কেট থাকতে কেন এখানে ইন্ডিজেনাস কার ইন্ডাষ্ট্রি হচ্ছে না? এটা যদি ভুটান বা মালদ্বীপের মতো স্বল্প জনসংখ্যার দেশ হতো তাহলে চিন্তা করা যেত, কিন্তু ব্যাপারটি তো আসলে তা নয়। আমরা পুরনো গাড়িতে চড়তে পারলেই খুব স্বস্তি পাই, কারণ বাস্তবতা হচ্ছে গাড়ি একটি প্রয়োজন। যেখানে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বেড়েছে, স্কেল বেড়েছে; স্বাভাবিকভাবে মানুষের মবিলিটি বাড়বে। কিন্তু এখানে ২০০-৪০০% ট্যাক্স দিয়ে আমদানি করে মানুষের প্রোডাক্টিভিটি ও সেফটিকে ছোট করে ফেলা হচ্ছে।

২০২৬-এ উন্নয়নশীল দেশ হিসবে রূপান্তর নিয়ে অনেক হইচই হচ্ছে, কিন্তু এখানকার ওষুধশিল্প নিয়ে কি হবে? সরকার সাবসিডি দিয়ে এপিআই তৈরি করুক, তা দিয়ে কমোডিটিজগুলো তৈরি করা হোক-কিন্তু এসব বাদ দিয়ে সব হাতি-ঘোড়া মারার চিন্তাভাবনা আমাদের ভর করছে, যা মোটেও উচিত নয়।

বার্তা২৪.কম: সম্ভাবনা ও বৈচিত্রকে নিরুৎসাহিত করার অন্তরায় কি তবে বাড়তি আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতা?

ড. সাহাব এনাম খান: অবশ্যই, অর্থনীতি কখনো আমলানির্ভর হতে পারে না। এখানে প্রাইভেট সেক্টরকে আরও নীতিনির্ধারণে আনা দরকার। প্রাইভেট সেক্টর মুনাফায় বিশ্বাস করে। সুতরাং তারা সব সময় বৈচিত্র চাইবে। আমলারা যদি এক্সপোর্ট ডাইভার্সিফিকেশন বুঝতে পারতেন তবে পাট শিল্প কেন মুখ থুবড়ে পড়ল? আমি মনে করি, এক্সটেন্সিভ প্রাইভেটাইজেশনে গিয়ে আমলা নির্ভরতাকে কমিয়ে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাষ্ট্রিকে এখানে ঢুকাতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে এটি দেশের অর্থনীতিকে অনেক সহায়তা করবে।

বার্তা২৪.কম: মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা তো থামছেই না, কোন টেকসই সমাধানের পথ কি দেখেন আপনি?

ড. সাহাব এনাম খান: টেকসই সমাধান তখনই হবে যখন আরাকান স্থিতিশীল হবে। আরাকানকে স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশের একটি সন্মুখ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। অনেকভাবেই তা হতে পারে-একক সহায়তা হতে পারে বা অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যেতে পারে। ওদের সিভিল সোসাইটি, পলিটিক্যাল সোসাইটিকে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। দেখা যাবে আমেরিকানরা আললান্টিকের ওপার থেকে এসে ঠিকই করে ফেলছে। বাংলাদেশ তো গণতন্ত্রের কথা বলছে, তাহলে সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ কাজ করতেই পারে। এখানে শুধু আরাকান আর্মি নয়-যেসব অ্যাক্টরগুলো সেখানে সক্রিয় তাদের সঙ্গে আমাদের এনগেজ হতে হবে। কারণ এদের ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে না। তাতমাদো (মিয়ানমারের সরকারি সামরিক বাহিনী) এটি সমাধান করবে না। কিংবা তাতমাদো রাখাইনে গেড়ে বসলেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হবে না। তাতমাদো যদি না থাকতে পারে, আরাকান আর্মি আসে, তাতেও সমাধান আসবে না, যদি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা হয়। যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত এক বছরে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে, তার আগে কিছু হয়নি।

সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, এডিটর-অ্যাট্-লার্জ, বার্তা২৪.কম

;

সাড়ে ৪ লাখ টাকার গাঁজাসহ কারবারী আটক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরগুনা
সাড়ে ৪ লাখ টাকার গাঁজাসহ কারবারী আটক

সাড়ে ৪ লাখ টাকার গাঁজাসহ কারবারী আটক

  • Font increase
  • Font Decrease

কুমিল্লা থেকে গাঁজা বিক্রি করতে এসে সাড়ে ৪ লাখ টাকার ৬ কেজি গাঁজাসহ আটক হয়েছে সোহেল নামে এক মাদক কারবারি।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমতলী উপজেলার সীমান্ত এলাকা শাখারিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি ব্যাগের ভিতর থেকে ওই গাঁজাগুলো উদ্ধার করে জব্দ করে। ওই সময় তারা গাঁজা বহনকারী কারবারী সোহেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাদের জন্য বরগুনা জেলা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

আটককৃত মাদক কারবারি সোহেল কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ধর্মপুর এলাকার বশিরুল্লাহর ছেলে। পেশায় সে একজন স্যানিটারী মিস্ত্রি। ভারত থেকে চোরাইপথে আসা গাঁজা আখাউড়া থেকে সংগ্রহ করে সড়ক পথে বরগুনার আমতলীতে বিক্রি করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি)'র অভিযানে ধরা পড়ে যায়।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ বশির আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমার নেতৃত্বে উপ- পরিদর্শক জ্ঞান কুমার দাস, মোঃ বশির আহমেদ, সহকারী পরিদর্শক রুবেল হাওলাদার, ডিবি সদস্য প্রিন্স সিমলাই, মাহমুদসহ গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম গভীর রাত থেকে আমতলীর সীমান্ত এলাকা শাখারিয়া বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করি।

চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কুয়াকাটাগামী হানিফ পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে ৬ কেজি গাঁজাসহ সোহেল নামে ওই মাদক কারবারীকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হই। আটক কারবারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

;