লালমনি এক্সপ্রেস বিপর্যয়ের নেপথ্যে…
ঢাকা: পুরাতন ইরানিয়ান একেকটি কোচে ৭০ লাখ টাকা ঢেলে এবারের ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ‘লালমনি এক্সপ্রেস’। কিন্তু চলা শুরুর এক সপ্তাহ পেরোনোর আগে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কোচগুলো। যাত্রী টানতে না পেরে অকার্যকর অবস্থায় কোচগুলো লাইনে আটকে পড়ে থাকে। উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর এখনও এসব কোচ আর যাত্রী টানার সক্ষমতায় ফিরতে পারেনি।
সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষ বলছে, কোচ ড্যামেজ হয়নি, কোচগুলোর এয়ার ব্রেকের এ্যালার্ম সিগনাল পাইপ পুরাতন রয়ে যাওয়ায় বিপর্যয় ঘটেছিলো।
এবারের ঈদে রেলওয়ের চমক হিসেবে হাজির করা হয়েছিলো লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন। পুরাতন এই ট্রেনের সবগুলো কোচ মেরামত করে এক ধরণের নতুন রুপ দেয়া হয়েছিলো। প্রতিটি ইরানিয়ান কোচ মেরামতে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে রেলওয়ে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে কোচগুলো সচল করে তোলেন। এরপর ট্রায়াল রান সফল ভাবে সম্পন্ন হয়।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সৈয়দপুর নিজে হাজির হয়ে এসব ঘুরে দেখে আসেন। কিন্তু যখন ঈদে যাত্রী টানতে বের হলো লালমনি তখনই বিপত্তি শুরু হয়। কোচগুলো একে একে বিকল হয়ে পড়েছিলো যাত্রাপথে। শেষতক সবগুলো কোচ চলাচল অযোগ্য ঘোষণা করে ঈদ যাত্রা বাতিল করা হয়।
এর মধ্যে অনেক যাত্রী এই ট্রেনের টিকিট কিনে প্রত্যাশিত সিট পাননি। অতিরিক্ত ভাড়া গুণে শীতাতপ আসনের টিকিট কেটেও মেলনি সিট।
ঈদ যাত্রায় লালমনির যাত্রীদের এ অভিযোগ প্রতিদিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে শোনা যায়।কিন্তু স্টেশন থেকে এর সদুত্তর দিতে পারে নি।
রেলস্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পুরাতন লালমনি রেক দিয়ে চালানো হয়েছে। এতে যাত্রীরা অন্তত বাড়ি যেতে পেরেছেন।
এছাড়া ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জন নিহত ও উঠতে গিয়ে ট্রেন চাকায় হাত পা হারিয়েছেন একজন। এসব ঘটনা এবারের রেলের ঈদ যাত্রা স্বস্তি দিতে পারেনি বলে মনে করেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
অতিরিক্ত যাত্রী লোড নিয়ে অক্ষম হয়ে পড়ে লালমনিকে কেন তড়িঘড়ি করে চালানো হল এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? চালানোর পর এর টিকেট বিক্রি করা হল কেন? আর বিক্রি করে তা বাতিল করা হল কেন? এসব প্রশ্নবানে জর্জরিত এখন রেলওয়ে।
জবাবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই খুদা জানান, ‘‘অতিরিক্ত যাত্রী লোডে নতুন লালমনি রেকের কোন সমস্যা নেই। পুনর্বাসিত কোচগুলির এয়ার ব্রেকের এলার্ম সিগনাল পাইপ নতুনভাবে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। যেটা পুনর্বাসনের সময় পরিবর্তন করা হয়নি। এখন আর কোন সমস্যা থাকবে না। আর ঈদুল আজহার আগে সৈয়দপুর কারখানা থেকে আরও ৪টি পুনর্বাসিত ইরানিয়ান কোচ স্পেয়ার হিসেবে যুক্ত হবে।
তিনি আরও জানান, গত ১৫ জুন সৈয়দপুর কারখানার বিশেষ টিম লালমনিরহাট গিয়ে ইরানিয়ান রেক পর্যবেক্ষণ করেছে। ছুটির মধ্যেও কারখানায় এয়ার ব্রেকের বিশেষ যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ চলছে। খুব শিগগিরই নতুন লালমনি রেক ট্রেন সার্ভিসে কাজ করবে।