ফিরে এলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল
ঢাকা: আন্তর্জাতিক পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল আবার ফিরে এলো। এদেশে এই হোটেল চেইনটির দ্বিতীয় দফায় ফিরে আসা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু স্মৃতিবহুল ঘটনার সাক্ষী এই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলটি।
মধ্য আশির দশকে হোটেল চেইনটি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে। এখানে চালু হয় শেরাটন। এরপর রূপসী বাংলা।
প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অভিজাত ‘রূপসী বাংলা’ হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’ নামে ২০১৮ সালের আগস্টে চালু হতে যাচ্ছে। সংস্কার শেষে আরো উন্নত মানের সেবা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অতিথিদের জন্য খুলে দেওয়া হবে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন এই হোটেলটি।
সূত্র জানায়, হোটেলের অবকাঠামোগত কাজ এক কথায় শেষ। এখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষে আগস্টে হোটেলের অপারেশন শুরু করা যাবে।
নাম না প্রকাশের শর্তে হোটেলের এ কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগস্টে হোটেলের ‘‘সফট লঞ্চিং” হচ্ছে। পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে শুরু করতে আরো কয়েকমাস সময় লাগবে।
তিনি বলেন, হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে সফট লঞ্চিং বলে এটি টার্ম রয়েছে। এটিকে বলা হয় আন-অফিসিয়াল লঞ্চিং। সাধারণত পুরোপুরি কার্যক্রম শুরুর মাস খানেক আগে এ ধরনের লঞ্চিং করা হয়। এর মাধ্যমে হোটেলের স্টাফদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষিত করা হয়।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে হোটেলের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। এর আগে হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জেমস পি. ম্যাকডোনাল্ড এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক আসবাবপত্র, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড, অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দীর্ঘ আতিথেয়তা পরিসেবা উত্তরাধিকার ইন্টানকন্টিনেন্টালকে করবে ব্যবসায়ী এবং অবকাশ ভ্রমণকারীদের জন্য হবে কাঙ্খিত গন্তব্য।”
হোটেল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হোটেলের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জে কর্মরত রয়েছে। তবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল চালুর আগেই তারা বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে ফিরে আসবে। কিছু কর্মী ওই দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সেখানে থেকে যাবেন।
আগের সূচি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের প্রথম দিকেই এর সংস্কার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দুই বছর পিছিয়ে কাজটি শেষ হতে যাচ্ছে। হোটেলটির মালিক বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল) ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হোটেলের সংস্কার কাজে হাত দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হোটেলটিকে অতিথিদের জন্য আরামদায়ক করতে এর রুম সংখ্যা ২৭২টি থেকে কমিয়ে ২২৬ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১টি এক্সিকিউটিভ রুম, পাঁচটি সুপিরিয়র স্যুইট, ১০টি ডিলাক্স স্যুইট, পাঁচটি ডিপ্লোম্যাটিক স্যুইট এবং পাঁচটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট থাকছে। এক্সিকিউটিভ রুমের আয়তন ৪০ বর্গমিটার এবং প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটের আয়তন ১৫০ বর্গমিটার।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল আশা করেছিল, ফেব্রুয়ারিতে হোটেল চালু করা সম্ভব হবে। কিন্তু সংস্কার কাজের দেরিতে তা সম্ভব হয়নি।
প্রকল্পের কাজ চলাকালে ২০১৬ সালের আগস্টে হংকং ভিত্তিক প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (পিএমসি) বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। এটিও হোটেলের কাজ শেষ হতে সময় লাগার অন্যতম কারণ। পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষকদের নেতৃত্বে প্রজেক্ট ইভাল্যুশন ও নেগোসিয়েশন কমিটি প্রকল্প কাজ চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হোটেলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিএসএল এর সঙ্গে ইন্টারকন্টিনেন্টালের এ সংক্রান্ত চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে হোটেলটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে চালু হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী ২০১৩ জুড়ে চলার কথা ছিল হোটেলের সংস্কার কাজ। বড় ধরনের সংস্কার কাজ হওয়ার কারণেই হোটেলের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কিন্তু পরবর্তীতে এই সময়সূচি ঠিক থাকেনি। ২০১২ সালে টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কারণে সরকারের অনুরোধে হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিএসএল।
বাংলাদেশে ২৭ বছর হোটেল পরিচালনা শেষে শেরাটন ২০১০ সালের ১ মে বিএসএলকে হোটেলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়। এরপর বিএসএল ‘রূপসী বাংলা’ নামে হোটেলটি পরিচালনা করে আসছিল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইন্টারন্যাশনাল হোটেল চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টাল রূপসী বাংলা হোটেল ৩০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে। এর মাধ্যমে ৩০ বছর পর ঢাকায় আবার ফিরে আসছে ইন্টারন্যাশনাল হোটেল চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ইন্টারকন্টিনেন্টাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৭০টি হোটেল পরিচালনা করছে।