স্বামীকে ছাড়াই দেশে ফিরলেন পাবনার কামরুনেচ্ছা
সৌদি আরব (মক্কা)থেকে: কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে।চিৎকার করে কাঁদবার মতোন অবশিষ্ট শক্তিটুকুও নেই পাবনার কামরুনেচ্ছার(৬০)। বুকফাটা বোবা আর্তনাদ নিয়ে শেষ পর্যন্ত স্বামীকে ছাড়াই দেশে ফিরতে হলো তাকে।
স্বামী হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ। স্বামী বেঁচে আছে কি' নেই সেই শঙ্কায় এক করতে পারছেন না চোখের পাতা। দেশে ফিরেও স্বজন আর প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। "শেষ কবে এক সঙ্গে ছিলেন, কি করে স্বামী হারালো, দেখার কি কেউ ছিলো না"- নানা জনের নানান প্রশ্নের উত্তর ঝাপসা দৃষ্টিতে অসহায় চেয়ে থাকা ছাড়া উত্তর দেবার কোন ভাষা নেই তার।
রহমতের নগরী মদীনায় গিয়েও আশায় বুক বেঁধেছিলেন,হয়তো মক্কা থেকে স্বামীর খোঁজ মিলবে। কিন্তু কোনো খোঁজ নেই তার।
ওমরাহ পালনের জন্যে স্ত্রী কামরুনেচ্ছাকে নিয়ে গত ৯ জুন সৌদি আরব গিয়েছিলেন পাবনার ইশ্বরদী থানার পূর্ব টেংরী জিগাতলা রোড এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন (৬৬)।
সস্ত্রীক পরদিন ওমরাহ্ পালন শেষে যথারীতি হোটেলেও ফিরে আসেন। গত ১১ জুন স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে যান ইব্রাহিম হোসেন। তারপর থেকেই আর কোন খোঁজ মেলে নি তার।
ইব্রাহিম হোসেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর ছুপগাছা এলাকার মৃত বরকত আলী চাকলাদারের ছেলে।বয়সের ভারে কিছুটা ভারসাম্যহীন। কানে কম শোনেন। চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক এই প্রকৌশলী থাকতেন স্ত্রীকে নিয়েই থাকতেন পাবনায়।
কামরুনেচ্ছা জানান, স্বামী নিখোঁজের পর থেকেই তার ট্রাভেল এজেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দিনরাত মসজিদ আল হারামের আশেপাশে খুঁজে ফিরেছেন। স্বামীর জন্যে মদীনায় নির্ধারিত সফর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, মদীনা থেকে মক্কায় খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে- তবে আজ অবধি খোঁজ মেলেনি তার।
যে মোয়াল্লেমের অধীনে এই দম্পতি ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন সেই এম আর বি ট্যুরস্ এন্ড ট্রাভেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মোকাররেবুর রহমান নাসিম জানান, নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে তারা ইব্রাহিম হোসেনের খোঁজ করেছেন।
ভেবেছিলেন ঈদের পর হয়তো মক্কায় ওমরাহ হাজীদের চাপ কমে গেলে তাকে পাওয়া যাবে। কিংবা অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবেও পুলিশ বা হাসপাতালে খোঁজ মিলবে।
কিন্তু শেষ অবধি হাসপাতাল, থানা থেকে নানা জায়গায় খুঁজেও সন্ধান মেলে নি তার।
তিনি জানান, এই কাফেলার কেউ স্বস্তিতে দেশে ফেরেন নি। একজনকে হারিয়ে সবাই ছিলেন ব্যথাতুর। আর মক্বায় গিয়ে স্বামী হারানো কামরুনেচ্ছার বোবা আর্তনাদে গোটা কাফেলাজুড়েই ছিলো বিষাদের আবহ। ঈদের দিনটি পর্যন্ত ছিলো না আনন্দের।
"আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন হদিস পাইনি"- জানান এ এস এম মোকাররেবুর রহমান নাসিম।
গত ২২ জুন স্বামীকে ছাড়াই দেশে ফিরেছেন কামরুন্নাহার। প্লেনে ওঠার আগে তার দিকে তাকানোর মতো অবস্থা ছিলো না তা- বলছিলেন কামরুন্নাহারের এক সহযাত্রী।
২০১০ সালে স্বামীকে নিয়েই হজ করেছেন তিনি। এ বার স্বামীকে ছাড়া দেশে ফিরে আসাটাকে মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
"আমার স্বামীকে আপনারা খুঁজে এনে দিন। উনি জীবিত না মৃত- আমি জানতে চাই। এভাবে নিখোঁজ হয়ে থাকলে বাকী জীবন আমি কিভাবে কাটাবো। কারণ সে ছাড়া যে আমার কেউ নেই"- এভাবে বিলাপ করেই প্রতি মুহূর্ত কাটছে কামরুন্নাহারের।