বাগেরহাটের পান যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
বাগেরহাট: সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১১ গ্রামের মানুষ পান চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এ এলাকার উৎপাদিত পান দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
কিছু দিন আগেও ওই সব গ্রামের জমিতে ধান, পাট বা অন্যান্য ফসলের চাষ করে সংসারের খরচ চালাতে পারত না চাষিরা। বর্তমানে এসব জমিতে ব্যাপক হারে পানের বরজ করে এ এলাকার চাষিরা নিজেদের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। যাদের নিজেদের পানের বরজ নেই তারা অন্যের বরজ তৈরি, চারা রোপণ, পরিচর্যা, পান সংগ্রহসহ বিভিন্ন কাজ করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করেছে। এছাড়া হাট ও আড়তে পান ক্রয় এবং বাজারজাতকরণের কাজেও অনেক শ্রমিকের বেকারত্ব দূর হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পানের আড়ত। এসব আড়তে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পান ব্যবসায়ীরা পান ক্রয় করে থাকে। এসব আড়তে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ট্রাক পান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের শিংড়াই গ্রামের পান চাষি ইদ্দিস মোল্লা (৬২) বলেন, ‘পান চাষ আমাদের একমাত্র আয়ের মাধ্যম। গতবছর বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় বরজের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। ঋণ করে এবারও বরজ তুলেছি। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা না হওয়ায় বরজ ভালো আছে। আশা রাখছি গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
পাশের গ্রাম দেওয়ালবাটির হালিমা আক্তার জানান, গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা পান চাষ। সারা বছর পরিবারের সবাই মিলে বরজের পরিচর্যা করে। পান বিক্রির টাকা দিয়েই সংসার চলে তাদের। এবার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন ও বরজ দুটোই ভালো আছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস জানান, সদরে মোট ৪৮৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। দিন দিন এ অঞ্চলে পান চাষে জমি ও চাষির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
তিনি আরও জানান, বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া, শিংড়াই, দেওয়ালবাটি, যাত্রপুর, বারুইপাড়া, বিষ্ণুপুর, পাটরপাড়া, ষাটগুম্বুজ, বাগমারা ছাড়াও জেলার ফকিরহাট, কচুয়া, চিতলমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে পান চাষ হচ্ছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আফতাব উদ্দিন জানান, পান বাগেরহাটের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ, বিয়েতে পানের ব্যাপক চাহিদা আছে। বাগেরহাটের পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে। এটি বাগেরহাটের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় পান চাষিদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ স্বল্প সুদে কৃষি ঋণের ব্যবস্থাও করা হবে।