নতুন কাপড়ের বদলে পরতে হল কাফনের কাপড়
মৌলভীবাজার: জাহাঙ্গীর তালুকদার এসেছিলেন দুবাই থেকে। এ কারণে শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা শহরে তিনি মেয়ে, বোন, ভাই ও ভাগিনাকে নিয়ে মার্কেটে যান কেনাকাটা করতে। কিন্তু কে জানতো এটাই তাদের জীবনের শেষ কেনাকাটা হবে? নতুন কাপড়ের বদলে পরতে হবে কাফনের কাপড়।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার নাদামপুর এলাকার ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে। দ্রুতগামী প্রাইভেট কারের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারান শেরপুর এলাকার প্রবাসী জাহাঙ্গীর তালুকদারসহ একই পরিবারের চারজন। এ দুর্ঘটনায় প্রাইভেট কার চালক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকও প্রাণ হারান। এছাড়া গুরুতর আহত ৩ জন সিলেট হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
রোববার সকাল ১১টায় শেরপুরে একই পরিবারের নিহত চারজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নিহত সাজনা বেগম ও সাইফ আহমদের মরদেহ নিয়ে আসা হয় খালিশপুরে। সেখানে ২য় জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়। অপর নিহত সিএনজি চালক লায়েছ মিয়ার জানাজাও সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুলাই শুক্রবার দুবাই থেকে দেশে ফেরেন শেরপুর এলাকার জাহাঙ্গীর তালুকদার (৩৮)। ভাই দেশে আসবেন বলে দুই ছেলে সাইফ ও সায়েমকে নিয়ে বাবার বাড়ি যান জাহাঙ্গীরের ছোট বোন সদর উপজেলার খালিশপুর এলাকার মশাহিদ আহমদের স্ত্রী সাজনা বেগম (২৮)। শনিবার ভাই, বোন, মেয়ে ও ছোট ভাগিনা সাইফকে (১২) নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা শহরে মার্কেটে কেনাকাটা করতে যান জাহাঙ্গীর। কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফেরার পথে সদর উপজেলার নাদামপুর এলাকায় বিপরীতমুখী একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কারের সাথে তাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি ও প্রাইভেটকার দুমরে মুচড়ে যায়।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির ছাত্র নাহিদ তালুকদার (২২) ও সিএনজি চালক সিলেটের ওসমানীনগর থানার লায়েছ মিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহত আরও ৭ জনকে। সেখানে যাওয়ার পর জাহাঙ্গীর তালুকদার, তার বোন সাজনা বেগম, ভাগিনা সাইফ আহমদ ও কার চালক শাহাদাৎ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। গুরুতর আহত অবস্থায় তার মেয়ে নুরজাহান, বোন নুজা বেগমসহ আরও ৩ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহতরা এখনো শঙ্কামুক্ত নন জানিয়ে জাহাঙ্গীর তালুকদারের চাচা নূরুল ইসলাম জানান, জাহাঙ্গীরের মেয়ে নুরজাহান হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এদিকে মা, ভাই ও দুই মামাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে নিহত সাজনা বেগমের বড় ছেলে সায়েম আহমদ। আত্মীয়-স্বজনের শত চেষ্টাই যেন তাকে শান্ত করতে হার মানছে।
খালিশপুর রাহমানিয়া আলিম মডেল মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্র সায়েম মা, মামাদের সাথে কেনাকাটা করতে না গিয়ে নানা বাড়িতে থেকে যায়। এ কারণেই হয়তো এখনও বেঁচে আছে সে। সায়েমের বাবা মশাহিদ আহমদ স্থানীয় একটি মবিল কোম্পানিতে কাজ করেন। স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে হারিয়ে এখন দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।
সায়েমের চাচা ইসমাইল হোসেন জানান, সায়েমের মা, ভাই ও দুই মামা কেনাকাটা করে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় নাদামপুর এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা প্রাইভেট কারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তারা সবাই নিহত হন। এসময় পরিবারের সঙ্গে সায়েমের থাকার কথা থাকলেও সে নানা বাড়িতে থেকে যায়। যার জন্য আজ বেঁচে আছে সায়েম।
শনিবার রাতেই নিহত চারজনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় শেরপুরে। সেখানে রোববার সকাল ১১টায় তাদের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সে সময় এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। জানাজা শেষে নিহত ছেলে সাইফ ও সাজনা বেগমের লাশ নিয়ে আসা হয় স্বামীর বাড়ি খালিশপুরে। সেখানে দুপুর ২টায় জানাজা শেষে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়।
অপরদিকে একই দুর্ঘটনায় নিহত সিএনজি অটোরিকশা চালক লায়েছ আহমদকে সকাল ১০টায় ওসমানীনগর থানার তাজপুরে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। অপর নিহত প্রাইভেটকার চালক শাহাদাৎ হোসেনের দাফন তার পরিবারের লোকজন লন্ডন থেকে আসার পর হবে বলে জানা গেছে।