নিবন্ধন বই পাল্টে দিল কালীগঞ্জ ভূমি অফিসের চিত্র
লালমনিরহাট উপজেলার কালীগঞ্জের ভূমি অফিস। জমি-জমা সংক্রান্ত কাজে উপজেলার মানুষের নিত্য দিনের যাতায়াত ভূমি অফিসে। কিন্তু ভূমি অফিসে থাকা জমির দালালদের দৌড়াত্মে প্রায়শই দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। বিষয়টি নজরে আসে সেখানকার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদের।
গেল বছরের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ভূমি অফিসের বিভিন্ন সমস্যা সীমাবদ্ধতার খোঁজ খবর করে সমাধানের পথ খুঁজতে থাকেন। অবশেষে নতুন অর্থবছরে উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক গৃহীত ৪৭টি উদ্যোগ ও পরিকল্পনার গ্রহণ করেন তারা। সেই পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল ‘সেবাগ্রহীতা রেজিস্টার’ চালু করা।
জানা যায়, চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে কালীগঞ্জ ভূমি অফিসে চালু হয় ‘সেবাগ্রহীতা রেজিস্টার’। রেজিস্টার বইতে ছয়টি কলামে আছে- ক্রমিক নম্বর, সেবাগ্রহীতার নাম ঠিকানা ও ফোন নম্বর, আগমনের সময়, আগমনের উদ্দেশ্য (সুস্পষ্টভাবে), প্রস্থানের সময়, স্বাক্ষর। ভূমি অফিসে কেউ কোন কাজে নিয়ে এলে তাকে নিবন্ধন করতে হয়। এভাবে দিন দশের মধ্যে বেশ ‘লক্ষণীয়’ ফলাফল পায় কর্তৃপক্ষ। তারা দেখতে পায় ভূমি অফিসে ‘আগত ব্যক্তিদের সংখ্যা’ তুলনামূলক কমেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূমি অফিসের প্রাঙ্গণে নিবন্ধন বই নিয়ে বসেছেন অফিসের এক কর্মচারী। তিনি আগত ব্যক্তিদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেটি বইয়ে লিপিবদ্ধ করছে। সেবাগ্রহীতারা সারিবদ্ধভাবে বসে তথ্য নিবন্ধনে সহায়তা করছেন।
কয়েকজন সেবাগ্রহীতা বলেন, আগে দালালদের দৌড়াত্মে ভূমি অফিসে কাজ করতে এলে হয়রানির শিকার হতে হত। অনেক সময় দালালেরা দলিল দস্তাবেজ, জমির খাজনা, তফসীল কাটা বিভিন্ন নামে তালবাহানা করে অনেক বেশি টাকা নিত। বলত সেগুলোই সরকারি রেট। কাজ পার করার বিনিময়ে ঘুষ নিত। কিন্তু এখন নিজেরাই নিজেদের সমস্যা নিয়ে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে পারছি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদ বলেন, ‘এই বই চালু করার পেছনে উদ্দেশ্য হিসেবে ছিল ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ব্যক্তিদের আগমন দূর করা, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি দূর করা; (একই কাজে একই ব্যক্তি কতবার আসেন, কতক্ষণ অবস্থান করেন তার কারণ জেনে ব্যবস্থা নেয়া), সেবার ক্ষেত্রে অফিসে কর্মরতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিছু ব্যক্তির অযথা বেশি সময় অফিসে অবস্থানের ফলে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত ঘটানো বন্ধ করা।
তিনি আরো বলেন, নিবন্ধন বই চালু করার পর দেখলাম দিনকে দিন মানুষের ভীর কমতে শুরু করল। তবে কি সেবা নিতে লোকজনের অনীহা শুরু হলো? না; আগত ব্যক্তির সংখ্যা কমেছে, কিন্তু সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কমেনি। কারণ আগত ব্যক্তিদের মাঝে অনেক ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি’ ছিলেন, কমেছে তাদের সংখ্যা। অনেকে (যারা ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ব্যক্তি) নিবন্ধনের ভয়ে ভূমি অফিসে যেতেই চাইছেন না।