সুন্দরবনে শান্তি ফেরাল র্যাব
ঢাকা: ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে কয়েক দশক ধরে রাজত্ব করছে জলদস্যুরা। শুধু সুন্দরবনেই না, কক্সবাজার, পাথরঘাটা, মংলা বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। চাঁদা আদায়, জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ, ট্রলার আটকে অর্থ দাবি, গাছ কাটা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি ছিল তাদের নিত্যদিনের কাজ।
জলদস্যুদের উপদ্রবে ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবনে যখন ত্রাহি অবস্থা, তখন সরকার কিছুটা বাধ্য হয়েই র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে র্যাব। সভাপতি হিসেবে কাজ করছে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
সম্প্রতি র্যাব সদর দফতরের থেকে পাওয়া এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, র্যাবের প্রতিষ্ঠা হতে জুন ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনে জলদস্যুদের অপতৎপরতা রুখতে ২১৫ টি সফল অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। ২৩০টি মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। উদ্ধার করেছে ১ হাজার ৫৪২ টি অস্ত্র, জব্দ করেছে হরিণ ও বাঘের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চামড়া।
র্যাব সদরদফতরের এই তথ্য সুত্র আরও বলছে, ২০১৬ সালের মে থেকে র্যাবের কঠোর তৎপরতার কারণে সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু মাস্টার বাহিনীর ১০ জন জলদস্যু ৫২ টি দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৯০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। মাস্টার বাহিনীর প্রধানের আসল নাম মোস্তফা শেখ। ছদ্মনাম ছিল কাদের মাস্টার। বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। পশুর ও শিবসা নদীর মাঝের জায়গা ছিল মাস্টার বাহিনীর এলাকা।
মাস্টার বাহিনীর অর্থের উৎস ছিল চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আর অপহরণ। দলের বার্ষিক আয় ছিল আনুমানিক ৬ কোটি টাকা।
এদিকে র্যাব ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের দেওয়া তথ্য বলছে, আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে অনেক জলদস্যু প্রভাববিস্তার করে আসছে। এদের মধ্যে উল্লেযোগ্য বাহিনীগুলো হচ্ছে, শীর্ষ বাহিনী, ফেরাউন বেল্লাল, কাসেম বাহিনী, মাস্টার বাহিনী, রাজু বাহিনী। বড় বড় জলদস্যু বাহিনী গুলোর মাসিক আয় গড়ে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা। আর ছোট বাহিনীগুলোর ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা। সময়ের পরিবর্তনে নেতৃত্ব বদল হলেও বাহিনী চলেছে তার নিজস্ব গতিতেই।
সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে র্যাবের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা লে. কর্নেল মুফতি মাহমুদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানের মুখে জলদস্যুদের অপতৎপরতার জায়গা ক্রমশই সংকুচিত হয়ে গেছে।
বিপুল সংখ্যক অস্ত্র গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে মাস্টার বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, আলম বাহিনী, শান্ত বাহিনী, সাগর বাহিনী, খোকাবাবু বাহিনীসহ বেশ কয়েকটি জলদস্যু বাহিনী। বড় বড় দস্যুদলগুলোর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনে শেষ পথে হাঁটছে জলদস্যুরদের অধ্যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে বলেন, দু-তিনটি ছোট বাহিনী এখনো সুন্দরবনে দস্যুতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারাও অতিদ্রুত আত্মসমর্পণ করবে বলে আশা করি। আর যদি না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের আওতায় আসবে জলদস্যুরা।
সর্বশেষ চলছি বছরের প্রথমের দিকে সুন্দরবনের ‘বড়ভাই, ভাইভাই এবং সুমন’ নামের জলদস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৩৮ জন আত্মসমর্পণ করেছে। এ সময় তাঁরা ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ হাজার ৯৬৮টি গুলি জমা দেন।
বরিশালের র্যাব-৮-এর কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন এই তিন বাহিনীর জলদস্যুরা।