ওরাও পারে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে
পাবনা: পাবনার ১৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। রাজশাহী বোর্ড থেকে তারা পাবনার বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় নরসিংদী জেলার শিহাবুদ্দিন ভূঁইয়া-৪.৮৩, টাঙ্গাইল জেলার আবদুল্লাহ আল আমিন-৪.০৮, পাবনার মনিরুল ইসলাম-৫.০০(এ-প্লাস), গোপালগঞ্জের ইখতেয়ার মৃধা-৪.০৮, জামালপুরের গোলাপ মল্লিক-৪.৬৭, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহাদত হোসেন-৩.৯২, পঞ্চগড় জেলার রোকনুজ্জামান-৩.৫০, দিনাজপুরের আব্দুল আজিজ-৪.২৫, কুড়িগ্রামের ইমরান হোসেন-৩.৫০, টাঙ্গাইল জেলার আবুল কালাম আজাদ-৪.১৭, রাজশাহীর মনিরুজ্জামান-৪.১৭, ময়মনসিংহ জেলার মোজাম্মেল হক-৪.৪২, নরসিংদীর মো. আব্দুল্লাহ-৪.০৮, জয়পুরহাটের মোহাম্মদ আলী-৪.৮৩ এবং বরিশালের হুমায়ুন কবির-৪.২৫ জিপিএ পেয়েছেন।
এই ১৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যুবক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার জন্য শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ ও জাগির হোসেন একাডেমি কেন্দ্র থেকে এবার এইসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এসব পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখে বলে শ্রুতি লেখকদের শোনান এবং শ্রুতি লেখকরা সেটি লিখে আবার তাদের পড়ে শোনান। এ কারণে তাদের জন্য তিনঘণ্টার অতিরিক্ত মাত্র ২৫ মিনিট বেশি সময় বরাদ্দ আছে। এসময় যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেন ওই শিক্ষার্থীরা।
এদিকে দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি যোগ হয়েছে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রতিকূলতা। সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন।
মানব কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শ্রুতি লেখক সম্মানী তো দূরের কথা লেখাপড়া করার নূন্যতম আর্থিক ব্যয় করারও সক্ষমতা নেই। তারপরেও থেমে থাকেনি এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা।
সূত্র বলছে, ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মতো পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে আরও প্রায় ৭২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা পড়া করছে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১২ জন পথশিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা, ৮ জন ৯ম শ্রেণিতে, ১০ম শ্রেণিতে ৭ জন, একাদশে ৯ জন, ২ জন এমএসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে এই প্রতিষ্ঠান সারা দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।