র্যাবের টার্গেট ১০'র অধিক মামলার মাদক ব্যবসায়ী
ঢাকা: সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে র্যাব পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা দু'শো ছাড়িয়ে গেছে। র্যাব সদর দফতরের দেওয়া তথ্য বলছে, ৪ মে থেকে এখন পর্যন্ত র্যাবের হাতে নিহত হয়েছে ৪৫ জন মাদক কারবারি। যাদের বেশির ভাগের নামেই ১০টির অধিক মামলা রয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুর ভাতুড়িয়া র্যাব ৬'র চেকপোষ্টে গোলাগুলির এক পর্যায়ে আমিরুল ইসলাম পঁচা (৪৩) নামের এক ডাকাত সদস্য নিহত হন।
এ ঘটনায় ঝিনাইদহ র্যাব-৬’র কোম্পানি কমান্ডার গোলাম মোর্শেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমিরুল ইসলাম পঁচা বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদকসহ ১৩টি মামলা আছে।
এর আগে ১১ (জুলাই) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই মাদক ব্যবসায়ীকে, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করে র্যাব। নিহতরা কুষ্টিয়া পৌর এলাকার রাজারহাট এলাকার ফুটু ওরফে মুন্না (৩৫) ও রাসেল আহম্মেদ (৩০)।
র্যাব–১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশীদ বার্তা২৪.কমকে জানায়, মাদক ব্যবসায়ী ফুটু ও রাসেল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও এনএসআইয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। নিহত এই দুই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি করে মামলা আছে।
র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাদক কারবারিদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, র্যাব ১- সঙ্গে ১ জন, র্যাব-২ সঙ্গে ২ জন, র্যাব- ৪ সঙ্গে ৪ জন, র্যাব-৫ সঙ্গে ৮ জন, র্যাব ৬ সঙ্গে ৭ জন, র্যাব ৭ সঙ্গে ১০ জন, র্যাব-৮ সঙ্গে ১ জন, র্যাব-১০ সঙ্গে ১ জন, র্যাব -১১ সঙ্গে ২ জন, র্যাব ১২ সঙ্গে ৭ জন, এবং র্যাব ১৩ সঙ্গে ২ জন সহ মোট ৪৫ জন নিহত হয়। সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বলছেন, তাদের সঙ্গে নিহত মাদককারবারি বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টির অধিক মামলা রয়েছে।
শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব, এমন প্রশ্নে উত্তরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, র্যাব সব ধরনের মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। তবে মাদক বিরোধী অভিযানের সময় যারা সামনে থেকে গোলাবর্ষণ করছে তারাই আসলে হতাহতের ঘটনায় পড়ছে।
চলমান এই মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাব শুধু বন্দুকযুদ্ধেই অংশ নেয়নি, ৪ মে থেকে মাদক সংক্রান্ত গ্রেফতার করেছে ৩ হাজার ১৮৫ জনকে। উদ্ধার করেছে ৯২ কোটি টাকা সমমূল্যের মাদক দ্রব্য।
এদিকে সরকারিভাবে মোট কোন হিসেব না পাওয়া গেলেও মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে গত ১৫ মে থেকে ১৬ জুলাই রোববার পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে ২০২ জন।
মাদক বিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ্য করে আসকের (আইন ও সালিশ কেন্দ্র) সাবেক ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বার্তা২৪.কমকে বলেন, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলুন আর চুনোপুঁটি ব্যবসায়ী বলুন। একটি মানুষকেও বিচার বহির্ভূত হত্যা করা যাবে।
এই মানবাধিকারকর্মী আরও বলেন, অল্প কয়েকদিনে ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হবার পরও মাদকের বিস্তার অব্যাহত রয়েছে। তাহলে এ অভিযানের লক্ষ্য শুধুই কি মানুষ হত্যা করা। এই হত্যাকাণ্ড এখনই বন্ধ করা উচিত।
তবে মাদক বিরোধী অভিযান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি করা তালিকায় যাদের নাম মিলে যাচ্ছে তাদেরই কেবল আটক করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।