লাইসেন্স ছিল না কিশোরগঞ্জে চার নিহত মোটর সাইকেল আরোহীর!
কিশোরগঞ্জ: সবার বয়স ১৭ বছরের কোঠায়। কারোই চালক হিসাবে লাইসেন্স ছিল না। মাথায় ছিল না হেলমেট। একটি মোটর সাইকেলে রাতের বেলা চাপাচাপি করে চেপেছিল ৪ জন। দুর্ঘটনায় যাদের সবারই মৃত্যু হয়েছে।
চরম অনিয়মও বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় জেলার কটিয়াদী উপজেলায় কলেজ ছাত্রসহ চারজন নিহত হন। বুধবার (২৫ জুলাই) রাত ১০ টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কের দড়িয়াকোণা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর সরেজমিন পরিদর্শন কালে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এতে নিহত হন সাব্বির (১৭), দিপু (১৭), মাসুম (১৭) ও অন্তর (১৭)। নিহতরা সবাই পৌরসভার মন্ডলভোগ এলাকার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বার্তা২৪.কমকে জানান, চারজন একই মোটর সাইকেল দিয়ে বোয়ালিয়া থেকে কটিয়াদী সদরে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তার পাশে গাছের সাথে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে তিনজন মারা যান। আহত অন্তরকে বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাশাপাশি কিশোর-তরুণদের বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালনার হিড়িক নিয়ে নানা মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'একটি মোটর সাইকেলে চারজন কি করে আরোহণ করে? তাদের নিজেদেরই তো এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। সামাজিকভাবে পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের দায়িত্ব ছিল বেপরোয়া তরুণদের নিবৃত্ত করা। সবাই সতর্ক হলে এমন দুঃখজনক মৃত্যু হয়ত ঘটতো না।'
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'সড়কে যানবাহন চালানোর কিছু আইন ও নিয়ম আছে। এর মধ্যে চালকের লাইসেন্স থাকা এবং হেলমেট পরিধান করা বাধ্যতামূলক। তদুপরি একটি মোটর সাইকেলে একাধিক ব্যক্তির আরোহণ করার বিষয়টিও আইন এবং বাস্তবসম্মত নয়। সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির পেছনে এসব অনিয়ম অনেকাংশে দায়ী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে এসব অনিয়ম প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।'
স্থানীয় ঈশা খাঁ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বদরুল হুদা সোহেল বার্তা২৪.কমকে জানান, 'অভিভাবকদের উদাসীনতা ও আইন প্রয়োগের শৈথিল্যের কারণে রাস্তাঘাটে কিশোর-তরুণরা বেপরোয়া চালনায় অংশ নিচ্ছে এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের একাধিক সূত্র বার্তা২৪.কমকে জানায়, অধিকাংশ তরুণ ও যুবক এখন নিজস্ব মোটর সাইকেলে চলাচল করে। যাদের যান চালনার বয়স হয় নি এবং লাইসেন্সও নেই। বেশির ভাগ সময়ই তারা নিয়ম বা আইনের তোয়াক্কা করে না। এদের মধ্যে প্রবাসী পরিবারের সন্তানই বেশি। পিতার অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বহীনতার অভিযোগও করেছেন অনেকেই। বলেছেন, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে প্রকাশ্যে তীব্র গতিতে শত শত কিশোর-তরুণ মোটর সাইকেল চালনা করে। তাদের কারণে রাস্তায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এইসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের লাইসেন্স, হেলমেট থাকে না। ট্রাফিক আইনের প্রতিও এরা শ্রদ্ধাশীল নয়। এদের কারণে শুধু তারাই নয়, সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে যে, এদের প্রকাশ্য ও বেপরোয়া চালনার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন নীরব। লাইসেন্স, হেলমেট না থাকার পরেও পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোনও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।