অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে ঝুঁকিতে আলমপুর সেতু
মেহেরপুর: সদর উপজেলার আলমপুর সেতুর বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই সেতুর উপর দিয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের ফলে সেতু ভেঙে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে পাকিস্তান আমলে সেতুটি তৈরি হয়। এর দৈর্ঘ্য ২১ মিটার। মাঝে দুটি গার্ডার। এতে পূর্ণাঙ্গ সেতুর সুবিধা নেই। কিন্তু রডের পরিমাণ বেশি থাকায় সেতুটি এতদিন ধরে ব্যবহার করা যাচ্ছে।
জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার আলমপুরে কাজলা নদীর উপরে সেতুটির অবস্থান। এই সেতুর উপর দিয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই সড়কে মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করে। গত ১০ বছরে ছোট ছোট যানবাহনের পাশাপাশি ভারি যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে রড সিমেন্ট, বালু ও পাথর বোঝাই করা ট্রাক চলাচল এখন স্বাভাবিক বিষয়। এতে সড়কের ক্ষতির পাশাপাশি আলমপুর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সেতুর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেতুর উত্তর পাশের সড়কের সংযোগ অংশ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কংক্রিট খুলে রড দেখা যাচ্ছে। সেতুর উপরে যানবাহন চলাচলের অংশেও দেখা দিয়েছে ফাটল। দেবে গেছে মাঝের অংশ থেকে। মাঝখানের গার্ডার দুটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন সেতুর উপর উঠলে সেটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গাড়াডোব গ্রামের ট্রাক চালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিয়মিত পণ্য নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছি। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড চোখে পড়েছে। কিন্তু অন্য সড়ক দিয়ে চলাচল করলে অনেক সময় ব্যয় হবে তাই এই সড়ক দিয়েই যাচ্ছি।’
গাংনী থানাপাড়ার শ্যামলী বাস চালক নাছির উদ্দীন জানান, এই সড়কটি জেলার মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন সেতু তৈরি করতে হবে। তা না হলে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় দুর্গতি নেমে আসবে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে ৬ চাকা বিশিষ্ট যানবাহনে ২২ মে.টন, ১০ চাকায় ৩০ মে.টন এবং ১৪ চাকার পরিবহনে ৪০ মেট্রিক টন মালামাল বহন করা যাবে। তবে অনুমোদিত এই মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণ পণ্য পরিবহনের ফলে সেতুর পাশাপাশি সড়কেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
জানা গেছে, নির্মাণ খাতের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই উত্তরবঙ্গ থেকে মেহেরপুর জেলায় আনা হচ্ছে পাথর। ১০ চাকার একটি ট্রাকে অন্তত ৩৮-৪০ মে.টন পাথর বোঝাই করে চলাচল করে। অথচ ওই ট্রাকের পণ্য পরিবহনের অনুমোদিত মাত্রা হচ্ছে ৩০ মে.টন। এভাবে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে অতিরিক্ত বোঝাই করে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। তাই আলমপুর সেতু ভেঙে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন নদীতে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
মেহেরপুর সওজ উপ সহকারী প্রকৌশলী সাধন কুমার বলেন, ‘সম্প্রতি সেতুর ফাটল দেখা দিলে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ সেতু হিসেবে চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছি। চলাচলের জন্য সেতুর উপর দিয়ে বেইলি ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো করা হয়েছে। নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচল করতে নিষেধ করেন তিনি।