জেন্ডার সমতা নিয়ে কমলা রঙের আশাবাদী এক সন্ধ্যা
ঢাকা: দক্ষিণ এশিয়ার বিশিষ্ট নারীবাদী লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট কমলা ভাসিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার শরীর ছুঁয়ে গেলেন স্নিগ্ধ কথামালায়। কালো রাত্রির আবহে নারী অধিকারের আলাপে জেন্ডার সমতার কমলা রঙের আশাবাদী এক সন্ধ্যা উপহার দিলেন তিনি রাজধানীবাসীকে।
শনিবার (২৮ জুলাই) ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে ‘কমলার সাথে কথোপকথন’ শীর্ষক এক অংশগ্রহণমূলক বক্তৃতায় মিলিত হন তিনি। কবি, পরিবেশবাদী ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার কমলা কথা বলেছেন সাবলীল ঢঙে, যদিও তিনি কক্সবাজারে তিনদিনের এক ওয়ার্কশপ করে সবেই ফিরে এসেছিলেন।
কমলা ভাসিনের কথা ও বক্তব্য খুবই পরিস্কার। নারীবাদকে তিনি জটিল প্রপঞ্চের পঙ্কে ফেলে দেওয়ার গতানুগতিক পথে গেলেনই না। নিজের জীবন ও অভিজ্ঞতা থেকে সোজা-সাপ্টা ভাষায় বললেন, ‘নারীবাদ বোঝার দরকার নেই। মানুষ হিসাবে তোমার অধিকার ও পরিচিতিকে বোঝ। তোমার গতি, স্বাধীনতা ও আত্মসম্মানকে উপভোগ কর।’
নিজের জীবন ও কাজকে তুলে ধরে কমলা ভাসিন বলেন, ‘পুজিবাদী পিতৃতান্ত্রিকতা নারীর ক্ষতি করছে। পরিবার থেকেই তাকে অনেক বিষয়ে ‘না’ বলা হচ্ছে, যদিও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বলছে সবাই সমান। আমি জীবনভর অধিকারের কথাগুলোই বলতে চেষ্টা করেছি।’
দক্ষিণ এশিয়ার ভয়াবহ পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলে ১২ থেকে ১৮ বছরের ৮০% ভাগ ছেলে পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত, যা তাদেরকে নারীর প্রতি আগ্রাসী মনছবি আঁকতে উদ্বুদ্ধ করে।’ তিনি ‘সৌন্দর্য’ প্রসঙ্গে বিদ্যমান সংজ্ঞা ও প্রবণতার সমালোচনা করে বলেন, ‘পণ্য ও বিজ্ঞাপনে নারীর ব্যবহার অসম্মানজনক করে তোলা হচ্ছে।’
নারী, সীমান্ত, সংঘাত, পরিবেশ, উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ জীবন কাজের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ কমলা ভাসিন একজন কবি ও অনুবাদক। হিন্দি আর ইংরেজি ছাড়াও তিনি বাংলায় কথা বলতে পারেন। দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে বক্তৃতার ভেতরেই আলাপের ভঙিমায় তিনি নিজের কথা বলার পাশাপাশি মানুষের কথা, কাহিনী ও অভিজ্ঞতা শোনেছেন বেশি। নিজের এবং অংশগ্রহণকারী অনেকের সঙ্গে আলাপের উপসংহারে তিনি যে মূল কথাটি উপস্থাপন করেন, তা হলো, ‘জেন্ডার সমতায় আলাদা ভাবে নারী বা পুরুষ নয়, উভয়েই জয়ী হবে।’
ভারতের নয়া দিল্লির প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব কমলা ভাসিনের এই আলাপচারিতার আয়োজক ছিল ক্রিশ্চান এইড, সাংগাত ও ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং।