বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা প্রয়োজন



মোস্তফা কামাল পাশা

  • Font increase
  • Font Decrease

 

কবির ভাষায় ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। এই উপলব্ধিটা সর্বকালে সর্বদেশে একই রকম। বিধাতা আপন হাতে প্রকৃতিকে সৃষ্টি করে সেখানে এমন এক ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন যাতে এই প্রকৃতির সন্তান হিসেবে প্রতিটি প্রাণী সহজে অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় অগ্রসরমান সভ্যতা ও মানুষের অপরিমিত বাসনার কারণে এখন প্রকৃতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণীকুল।

প্রাণীকুল প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ এবং সম্পদও বটে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যই আমাদের বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হবে। কারণ প্রকৃতি না বাঁচলে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে না। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্যা কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর উদ্যোগে জাতিসংঘের ৮০টি সদস্য দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কনজারভেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেনজারড স্পেসিস অব ওয়াইল্ড ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা (সিআইটিইএস) সনদ অনুমোদিত হয়। এই সনদে ৩৪ হাজার প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ৩ মার্চকে ‘বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো বন্যপ্রাণী সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য বিশ্ববাসীকে সোচ্চার করে তোলা। সেই থেকে জাতিসংঘ প্রতিবছর বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উদযাপন করে আসছে।

সারা বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচার, বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা, বন ও বনভূমি হ্রাস এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে একসময় প্রচুর বন্যপ্রাণী ছিল। আমাদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে গত কয়েক দশকের ব্যবধানে আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বেশ কয়েক প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এদের মধ্যে আছে একশিঙ্গা গণ্ডার, বারশিঙ্গা, প্যারা হরিণ, রাজশকুন, বাদিহাঁস, গোলাপি শিরহাঁস, ময়ূর, মিঠাপানির কুমির, হকস্ বিলড্ টারটেল ইত্যাদি।

বাংলাদেশ বন বিভাগ দেশে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছে। ১৯২৭ সালের বন আইনকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের বন্যপ্রাণী আইনকে সংশোধন করে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন -২০১২’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী আইনে দণ্ড ও শাস্তির বিধান বাড়ানো হয়েছে।

গত এক দশকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ বন বিভাগ বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বন অধিদপ্তর ‘স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণী উইং সৃষ্টি করা হয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও হবিগঞ্জে তিনটি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী পাচার ও নিধন বন্ধের লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে ঢাকায় এবং সকল বিভাগীয় শহরে ‘বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট’গঠন করা হয়েছে।

বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচার বন্ধের লক্ষ্যে বন বিভাগ, পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, কাস্টমস ও বিজিবি’র সমন্বয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আহত ও উদ্ধারকরা বন্যপ্রাণীকে চিকিৎসাসেবা দিতে চারটি ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট ও হটলাইন চালু করা হয়েছে। বন বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাজীপুর শাল বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক মানের ‘ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে ৪১টি এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বা প্রোটেকটেড এরিয়া ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৭টি জাতীয় উদ্যান, ২০টি অভয়ারণ্য, একটি ইকোপার্ক, দুটিটি বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা ও মেরিন প্রোটেকটেড এলাকা। বন্যপ্রাণীর বংশ বিস্তার ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে কক্সবাজার ও গাজীপুরে দুইটি সাফারি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। ২২টি সংরক্ষিত এলাকাতে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সহযোগী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ওই সব এলাকায় বিশেষজ্ঞ দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। সারাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও ইকো ট্যুরিজমকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ‘বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আবাসস্থল উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ চলমান।

ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক ‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘ জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। নিয়মিতভাবে বাঘ মনিটরিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সুন্দরবনের চারপাশের গ্রামগুলোতে বন বিভাগ ও স্থানীয় জনসাধারণের সমন্বয়ে ‘টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে, যাতে লোকালয়ে বাঘ দেখামাত্র খবর আদান-প্রদান ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

সরকার ২০১০ সালে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত শিক্ষা, গবেষণা ও বিশেষ অবদানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন’ পদক চালু করে। বাঘ ও হাতির আক্রমণে নিহত ও আহত পরিবারকে সহায়তাদানের জন্য ২০১০ সালে ‘বন্যপ্রাণীর আক্রমণে জানমালের ক্ষতিপূরণ নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়। ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে এক লাখ ও আহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫০ হাজার করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ২০১১-২০১৬ মেয়াদে ৪২১টি পরিবারের মধ্যে দুই কোটি ২৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান দেওয়া হয়েছে।

ফসলের বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ এবং রাশি রাশি বৃক্ষে ঘেরা নিরিবিলি, ছায়া সুনিবিড় অসংখ্য গ্রামের সমাহার হচ্ছে আমাদের এই বাংলাদেশ। এক সময় বাংলাদেশ ছিল বিপুল বনরাজির ভাণ্ডার। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন ও অবাধ বৃক্ষনিধনের ফলে সেই সম্পদ আজ নিঃশেষিত প্রায়। এছাড়া লাগামহীন বৃক্ষনিধনের ফলে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যাচ্ছে দ্রুত, বাড়ছে সিসার পরিমাণ, বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি ও বনজপ্রাণী। দেশে বনভূমি কমে যাওয়ায় শুধু বন্যপ্রাণী নয়, আবহাওয়ায়ও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। শীত ও বর্ষা কমে গিয়ে গ্রীষ্মের দাপট বেড়ে গেছে শুধু দাপট নয়, গ্রীষ্মঋতু বসন্তকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে।

এই অবস্থায়  বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বেশি বেশি করে বন সৃষ্টি করতে হবে, বন পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বন্যপ্রাণী নিধনের ক্ষেত্রে আইনের কঠোরতা আরোপ করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, বন্যপ্রাণী নিধনের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমে বন সৃষ্টি করতে হবে এবং যে সব বন আছে সেগুলোকে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে হবে। বন না থাকলে বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ই থাকবে না। তাই সাধারণ মানুষ সচেতন হলে সহজেই বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করা সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে বন সৃষ্টি ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল নির্মাণ করা সম্ভব। দেশ ও জাতির স্বার্থেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা দরকার। বন্যপ্রাণী যাতে নিশ্চিহ্ন হতে না পারে সেদিকে সবার নজর দেওয়া জরুরি।

বন ও বন্যপ্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের বন্যপ্রাণী আজ হুমকির সম্মুখীন। অহরহ বৃক্ষ ও বন্যপ্রাণী নিধন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম একটি বিরাজমান পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য একটি যুগান্তকারী আইন প্রণয়ন করেছে। তবে আইন প্রণয়নই শেষ কথা নয়, প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা তৈরি করা। দেশ ও জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের যুগপৎ ভূমিকা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।

   

পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়াকে অযৌক্তিক বলছে দোকান মালিক সমিতি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়াকে অবিবেচনা, অসার, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। একই সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদফতরকে নির্ধারণ করা দেওয়া পণ্যগুলো বিক্রি করার দাবি জানিয়েছে সমিতি।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এসময় মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়াসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, এখন ২৯ পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ দামে এসব পণ্যগুলোকে কৃষি বিপণন অধিদফতর কর্তৃক বিক্রয়ের অনুরোধ জানায়। একই সঙ্গে পণ্যগুলোর বিক্রিত লাভ দিয়ে কর্মকর্তারা বেতন নেবেন। হয় তাদের বেঁধে দেওয়া দামে কৃষি বিপণনকে বিক্রি করতে হবে, না হলে এ প্রজ্ঞাপন স্থগিত করতে হবে। আমরা এ দামে বিক্রি করতে পারবো না। দাম বেঁধে দেওয়াটা অযৌক্তিক-অবাস্তব ও অর্থহীন।

তিনি বলেন, ক্রেতার সন্তুষ্টিই বিক্রেতার কাম্য। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এ শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নিকট ৭ দফা দাবি পেশ করছি।

দোকান মালিক সমিতির ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

>> ২৯ পণ্যের মূল্যনির্ধারণ অবিবেচনা, অসার, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত। তাই এখনই প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করতে হাবে। অন্যথায় ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না।

>> বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে হবে।

>> টিসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে পণ্য আমদানি করে বিপননের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে বােঝা যাবে ব্যক্তি খাতের সঙ্গে সরকারি খাতের পার্থক্য কত।

>> বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য একই মন্ত্রনালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে।

>> বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যান্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

>> ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সংস্থার চাপমুক্ত অবস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে।

>> নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের উপর আরোপিত সকল প্রকার ট্যাক্স ভ্যাট কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে আনতে হবে।

গত ১৫ মার্চ ২৯টি কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদফতর। জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে অধিদফতর জানায়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে কৃষিপণ্য ক্রয়–বিক্রয়ের অনুরোধ করা হলো।

;

১০ টাকার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ৬০০ টাকার পেথিডিন বানাতেন তারা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্তান জন্মের সময় প্রসূতি মায়েদের ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয় ‘জি-পেথিডিন’ ইনজেকশন। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ ইনজেকশনই দীর্ঘদিন ধরে নকল করে বাজারজাত করে আসছে একটি চক্র। ১০ টাকার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে তৈরি পেথিডিন নামের ভুয়া ওষুধটি তৈরি করে ৬০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন তারা।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর মিন্টোরোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ এরশাদুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. আলমগীর খাঁন, মো. মাসুদ রানা, মো. আহ্সান হাবীব শাওন।

এসময় ২০০টি জি-পেথিডিন ইনজেকশন, ২২০টি জি-পেথিডিনের এ্যাম্পুল, ১ হাজার ১০টি জি-ডায়াজিপাম এর এ্যাম্পুল, ৫২০টি জি-পেথিডিন এর ফাঁকা বক্স, ২০০টি জি-পেথিডিন ইনটেক স্টিকার, ২টি (১২ কেজি) জি-পেথিডিন ফয়েল পেপার, ১ হাজার ৫০০টি জি-পেথিডিন এর ব্যবহারবিধি, ১টি জি-পেথিডিনের ফয়েল লাগানোর জন্য লোহার চাপ মেশিন, ৫ কেজি এসিড, ৫টি কাঠ ও প্লাস্টিক দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি স্কিন প্রিণ্ট করার ফ্রেম, ২৫০টি জি-পেথিডিন রাখার প্লাস্টিকের ট্রে জব্দ করা হয়েছে।

জানা যায়, অত্যন্ত সংবেদনশীল এই ওষুধ অপারেশনের সময় বা অপারেশনের পরে চিকিৎসকরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করেন। প্রচলিত ‘জি-ডায়াজিপাম’ ঘুমের ইনজেকশনকে ঘরোয়াভাবে রূপান্তর করে চেতনানাশক ‘জি-পেথিডিন’ ইনজেকশন হিসেবে বাজারজাত করতেন চক্রটি।

;

বিদেশে কাজ দেয়ার নামে টাকা নিয়ে ম্যাক্সের প্রতারণা, আদালতে মামলা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিদেশে কাজ দেয়ার নামে টাকা নিয়ে কাজ না দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলাও দায়ের হয়েছে।

জানা গেছে, যশোরের কেশবপুর পৌর এলাকার আবুল হাসান। বিদেশে যাওয়ার জন্য যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) প্রশিক্ষণ নেন। সে সময় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় প্রবাসী মেলা। মেলা থেকে ভুক্তভোগী আবুলসহ বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থীকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য বাছাই করা হয়।

ক্লিনার হিসেবে কাজ দেওয়ার চুক্তিতে প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই লাখ করে টাকা নেওয়া হয়। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশে নিয়ে গেলেও কাজ দেয়নি ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস। ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার শিকার হয়ে সৌদি আরবে জেল খেটে দেশে ফিরে আসেন ভুক্তভোগী আবুল হাসান।

এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মানবপাচার অপরাধ ট্রাইবুন্যালে মামলা দায়ের করেছেন আবুল হাসান। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) এই মামলা দায়ের করা হয়।

মামলায় ভুক্তভোগী তার অভিযোগে বলেন, ২০২১ সালে যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) আয়োজিত প্রবাসী মেলা থেকে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস বিদেশে পাঠানোর কথা জানায়। তিনি ছাড়াও সেখানে অন্তত পাঁচ শতাধিক আগ্রহীকে বিদেশে চাকরি দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়। একইদিনে সবার পাসপোর্ট জমা নেওয়া হয়। এরপর যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিন দিনের দক্ষতার ট্রেনিং শেষে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ক্লিনার হিসেবে সৌদি আরব পাঠানো হয়। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিদেশে যাওয়ার পর তিন মাস এক স্থানে বন্দি করে রাখা হয় তাদের। কোনো ধরনের কাজ না দিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন তারা। এমনকি ঠিকমতো খাবার দিতেন না প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরতরা।

সেসময় ভুক্তভোগীরা বলেন, ব্যাংক ঋণ করে সৌদি আরব এসে এভাবে মাসের পর মাস বসে থাকলে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে? তাছাড়া দেশে থাকা পরিবারের খরচ কে মেটাবে? তখন সৌদি কোম্পানির মালিক বলেন, ‘আমি নিজের টাকা খরচ করে তোমাদের এনেছি। তোমরা কত টাকা খরচ করছ, কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছ সেটা আমার দেখার বিষয় না।’ এসব কথা শোনার পর ভুক্তভোগীদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

সে সময় ভুক্তভোগীরা বাংলাদেশে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস’র অফিসে যোগাযোগ করে কাজ দেওয়ার কথা বললে কর্মকর্তারা জানান, অপেক্ষা করেন কিছুদিন পর অন্য এক মালিক এসে আপনাদের নিয়ে যাবে। প্রায় ৩ মাস পর ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারে বন্দি হিসেবে তাদের কিনে আনা হয়েছে। এখন অন্য দালালদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হবে। কোনো কাজ দেওয়া হবে না। অন্য দালালদের কাছে বিক্রির বিষয়টি টের পেয়ে তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজের দাবিতে চিৎকার করতে থাকেন। ফলে কৌশলে কোম্পানিটি চুক্তি বাতিল করে উল্টো কর্মীদের নামে সৌদি আরবে মামলা দিয়ে দেশটির পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন।

এরপর দীর্ঘদিন ধরে সেই দেশের জেলে বন্দি থাকেনে তারা। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশে ফিরে আসেন সবাই। দেশে আসার পরে ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেসের অফিসে গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে টাকা না দিয়ে ভুক্তভোগীকে উল্টো হত্যার হুমকি দেন। এরপর বাধ্য হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করেন।

মামলায় আবুল হাসান বাদী হলেও তার মামলায় স্বাক্ষীরাও ভুক্তভোগী। মামলায় ম্যাক্স ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি মানবপাচার অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গ্রহণ করেছেন। মামলা নম্বর ২১/২৪। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

;

সাকিবের বিএনএমে যোগ দেয়া নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান মাগুরা ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে, বিএনএমে যোগ দিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর ও ছবি প্রকাশ হয়েছে। এনিয়ে কোন কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।

বিএনএমের সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তিনি কী এখনও সে দলের সদস্য পদে আছেন কী না এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাকিব আওয়ামী লীগের টিকিটে মাগুরা থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। পার্টির কাছে নমিনেশন চাওয়ার সময় তিনি পার্টির সদস্য। এর আগে সাকিব আমাদের পার্টির কেউ ছিল না। নমিনেশন নেওয়ার সময় তাকে প্রাইমারি সদস্য পদ নিতে হয়। সেভাবেই আমরা তাকে মনোনয়ন দিয়েছি, তিনি নির্বাচনে এমপি হয়েছেন। 

নির্বাচনের আগে সরকার কিংস পার্টি তৈরি করেছে কী না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারি দল কিংস পার্টি করতে যাবে কেন? নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে অনেক ফুল ফুটে। কোনটা কিংস পার্টি, কোনটা প্রজা পার্টি এটা সম্পর্কে আমার জানা নেই। এটার রেজিস্ট্রেশন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বন্ধু রাষ্ট্র বলতে ইন্ডিয়াকে বলেছে। বলেছে তোমরা স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করেছ, এখন গণতন্ত্র উদ্ধারে তোমাদের সাহায্য চাই। গণতন্ত্র তো আমাদের ঠিকই আছে। তাদের সাহায্য চাওয়ার অর্থ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া। নির্বাচন ছাড়া বিদেশি রাষ্ট্র এসে ক্ষমতায় বসাবে এটা তো হতে পারে না। জনগণের সমর্থন ছাড়া সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

;