বরিশালের ২৮টি কেন্দ্রে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ, স্থগিত ১৫টি
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এজেন্ট বের করে দেয়া, বহিরাগতদের দিয়ে ভোট দেয়াসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, জাপা, বাসদ ও কমিউনিস্টর প্রার্থীরা ভোট বর্জন করে। তারা সম্মিলিত ভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ভোটের নানান অনিয়ম সম্পর্কে অবহিত করেন।
সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে ২৮টি কেন্দ্র নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিল ইসির পর্যবেক্ষক টিম। একই তালিকা বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাও পাঠিয়েছিলেন। তবে সেই তালিকা থেকে কারণ যাচাই-বাছাই করে সিইসিসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা সিদ্ধান্ত নেন ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করার।
নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য জানান। তারা জানান, বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ২৮টি কেন্দ্রের একটি তালিকা পাঠিয়েছিল নির্বাচনী পর্যবেক্ষক টিম এবং রিটার্নিং অফিসার। সেখানে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যও দেয়া হয়েছিল। সেই তালিকা থেকে কারণ যাচাই করে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে দেয়া হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে আমাদের কাছে ২৮টি কেন্দ্রের একটি এসেছিল। সেই তালিকা থেকে আমরা কারণ যাচাই করে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে দেই। বাকি ১৩টি কেন্দ্রে স্থগিত না করলেও হয় তাই করিনি। যেমন নারী কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের আনাগোনা। এটাকে কেন্দ্র দখল অথবা ভোট জালিয়াতি বলা মুশকিল।
এসব নিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, প্রথমে আমরা মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনে। তখন তারা আমাদের লিখিত তালিকা দিতে বলেন। এরপর আমি প্রিজাইডিং অফিসারদের তালিকা দিতে বলি। তখন অনেকেই তালিকা দেননি। এরপর আমাদের নজরে যে কেন্দ্রগুলোতে অনিয়ম দেখেছি সেই কেন্দ্রগুলোর তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করা হয়। বাকিগুলো কেন করেনি সেটি কমিশন বলতে পারবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করা ১৫টি কেন্দ্রের মোট ভোটার ২৯ হাজার ৯২৩ জন। কেন্দ্রগুলো হলো বরিশাল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মহিলা), ফারিয়া কমিউনিটি সেন্টার (পুরুষ), সরকারি মহিলা কলেজ (মহিলা), বরিশাল সিটি কলেজ (পুরুষ), আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ টেক্সাটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-১ (পুরুষ), শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ টেক্সাটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-২ (মহিলা), উদয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), সাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (মহিলা), আর এম সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), রূপাতলী জাগুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রূপাতলী জাগুয়া ডিগ্রি কলেজ ও সংলগ্ন রূপাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সখিনা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যাললের উত্তর (মহিলা) এবং নয়গাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সংলগ্ন ইন্দ্রকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, মোট ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। বাকি ১৬টির মধ্যে একটি ভোটগ্রহণ প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক বন্ধ করা হয় এবং ১৫টির ফলাফল স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পেয়েছেন এক লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট। বাকি ১৬ কেন্দ্রের মোট (৩১,২৭৭) ভোটারের চেয়ে বেশি ভোটে সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ কারণে সাদিক আবদুল্লাহকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।