উন্নয়নের নামে নয়-ছয়, সড়ক যেন মরণ ফাঁদ
পাবনা: বেড়া উপজেলার ঢালারচরের নরদহ হতে আরিচা প্রান্তে ফেরি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় মহাসড়কে রূপান্তরের প্রাথমিক স্তরের সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে নির্মাণের ২ বছরের মধ্যেই ওই সড়কে ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে। লম্বা এই পথে প্রায় ৩০টি ধ্স সৃষ্টি হওয়ায় তা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে জেলার বাঁধের হাট থেকে খয়েরচাঁদ পর্যন্ত স্থানীয় ধ্রুব কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করে।
তথ্য মতে, জাতীয় মহাসড়কে রূপান্তরের লক্ষ্যে পাবনার ঢালারচর নরদহ থেকে ঢাকা আরিচা প্রান্তে ফেরি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে বেড়া উপজেলার বাঁধের হাট থেকে খয়েরচাঁদ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণের জন্য ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৩০ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব কনস্ট্রাকশন সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে এ কাজটি সম্পন্ন করে। স্থানীয়রা বলছে, সড়কটি নির্মাণের পর ভারী যান চলাচল শুরু না হতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ধসের সৃষ্টি হয়।
সচেতন মহলের দাবি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই সদ্য সমাপ্ত হওয়া এই সড়কের বেহাল দশা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে নয় ছয় করেই কোটি কোটি টাকার কাজের নামে করা হয়েছে হরিলুট। উন্নয়নের নামেই সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে জনগণের সঙ্গে করা হয়েছে সুবিধার নামে প্রতারণা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
উপজেলার মাসুমদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরোজ হোসেনসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, শুধু বালি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তা পাকা হওয়ার পর থেকেই বার বার তা ভেঙে যাচ্ছে। আর জন ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
বেড়ার ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলী জানান, নির্মাণ করা রাস্তা ইতোমধ্যেই ২০ থেকে ৩০ স্থানে ভেঙে গেছে। মোটরসাইকেলে চলাচল করা গেলেও হালকা বা ভারী যানের ক্ষেত্রে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
একই উপজেলার রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম উজ্জ্বল জানান, রাস্তাটি দিয়ে একটি ভ্যান বা রিকশা চলাচলের মতো অবস্থা নেই। তিনি এ ব্যাপারে তার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে পাবনা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ রায় জানান, কাজটির মান নির্ণয়ের প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
তিনি আরও জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ধসের শিকার ওই সড়ক মেরামত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে এই নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সড়কের পাশ থেকেই ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি তুলে বস্তা ভর্তি করে ধসে যাওয়া স্থান মেরামত করছে। ফলে সড়ক নির্মাণের নামে আবারো ক্ষতি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের।