আউটার রিং রোড: চট্টগ্রামকে বদলে দেয়া এক সড়ক
সবার আগে গাড়ি চলাচলের উপযোগী হবে হালিশহর থেকে পতেঙ্গা অংশ
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পর্যন্ত সাগরপাড়ে এক দৃষ্টিনন্দন মহাসড়ক নির্মিত হচ্ছে। চারলেনের এই সড়কটি একদিকে শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে যেমন কাজ করবে, তেমনিভাবে ডিটি রোড থেকে কক্সবাজারের দিকে যাতায়াতে শহরের বাইরের রোড হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর এই রোডের শেষ প্রান্তে রয়েছে টানেল। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হতে যাওয়া টানেলের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে। তবে ডিপিপি অনুযায়ী রিং রোডের কাজ আগামী বছরেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই রোডের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সড়কের দুই প্রান্তে দুই চিত্র দেখা গেছে। একপ্রান্তে (পতেঙ্গা আকমল আলী রোড থেকে ইপিজেড) চার লেনের সড়কে পিচঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেও অপরপ্রান্তে (হালিশহর থেকে দক্ষিণকাট্টলী) এখনো মাটি ভরাটের কাজও শেষ হয়নি। সম্প্রতি বর্ষায় অনেক স্থানের মাটি ভেঙে চলে গেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মাধ্যমে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ‘উপকূলীয় বেড়িবাধঁ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ’ প্রকল্পে দক্ষিণ কাট্টলী থেকে পতেঙ্গার নেভাল পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার হলেও ফৌজদারহাট পর্যন্ত পোর্ট এক্সেস রোড দিয়ে যাতায়াত করা যাবে। আর দক্ষিণ কাট্টলী থেকে ফিডার রোডের মাধ্যমে স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে সাগরিকায় পোর্ট কানেকটিং রোডের সাথে যুক্ত হবে রিং রোড। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৬ সালের জুলাইতে কাজ শুরু হলেও এখনো প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ বেশি পিছিয়ে রয়েছে। হালিশহর আনন্দবাজার থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাটি পিছিয়ে রয়েছে।আউটার রিং রোডআউটার রিং রোড
গত রোববার দুপুরে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাসমনি ঘাট থেকে আর্টিলারি সেন্টার পর্যন্ত মাটি ভরাটের (পেভমেন্ট) কাজ হলেও বর্ষায় বিভিন্ন স্থানে মাটি ভেঙে গেছে। অনেক স্থানে মাটি ভেঙে নালার মতো তৈরি হয়েছে। আবার এই এলাকায় দুটি স্লুইশ গেইট নির্মাণের কাজও অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে আর্টিলারি সেন্টার থেকে হালিশহর আনন্দবাজার পর্যন্ত রাস্তাটি তৈরি করা হলেও এখনো পিচঢালাইয়ের পর্যায়ে যায়নি। আনন্দবাজার থেকে স্টিলমিলস খেজুরতলা পর্যন্ত এলাকায় পিচঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়ে গেছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে পতেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তা ফিলিং ও পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হবে। এরমধ্যে আবার ইপিজেডের পেছনের এলাকায় ৫০০ মিটার জায়গায় রোড ডিভাইডারের কাজও হয়ে গেছে। উঁচু উঁচু ডিভাইডার দেয়া হয়েছে যাতে কেউ নির্ধারিত জায়গা ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে রাস্তা পার হতে না পারে। এধরনের ডিভাইডার থাকবে পুরো রোড জুড়ে।
প্রকল্পের একদিকের অংশ এগিয়ে যাওয়া এবং অপর অংশ পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও সিডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন,‘ কাজের সুবিধার্থে আমরা একটি অংশের কাজ আগে করেছি। পতেঙ্গা থেকে হালিশহর পর্যন্ত এলাকাটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং সেই হিসেবে এ অংশটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে।’
অপর অংশের কাজ কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনন্দবাজার থেকে রাসমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশে মাটি ভরাটের (পেভমেন্ট) কাজ হয়েছে। মাঝখানে বর্ষা চলে আসায় মাটি ভরাটের পরবর্তী ধাপগুলো শেষ করা যায়নি। তবে বর্ষা যেহেতু প্রায় শেষ পর্যায়ে তাই এখন থেকে পুরোদমে কাজ চলবে এই অংশে।
এদিকে গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো সড়কজুড়ে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, প্রাইম মুভারের পার্কিং। দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট থেকে শুরু হওয়া পার্কিং হালিশহর আনন্দ বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন,‘ ঈদের বন্ধের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে হয়তো এসব গাড়ি এখানে পার্ক করা হয়েছে। কাজ শুরু হলে কোনো গাড়ি এখানে রাখতে দেয়া হবে না।’
কিন্তু অনেক সড়কে দেখা যায় রাস্তার উপর পার্কিং করতে, এই সড়কেও আগামীতে একই চিত্র হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা চার লেনের সড়কটিতে রোড ডিভাইডার রাখবো। আর যেখানে সেখানে ক্রসিংয়ের সুযোগ নেই। তাই চাইলেও কেউ পার্কিং করে গাড়ি রাখতে পারবে না।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় চার লেনের এই সড়কটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উঁচু হবে। এছাড়া পর্যটন শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে হালিশহরের দিকে পাঁচ কিলোমিটার হবে স্পেশাল পর্যটন জোন করা হচ্ছে। এখানে একসাথে প্রায় ১০ হাজার পর্যটকের সমাগম থাকতে পারবে। পানিতে নামার জন্য থাকবে ৬টি জেটি, যা দিয়ে পর্যটকরা বোটিং করতে পারবে। এছাড়া সাগর পাড়ে ৫০ ফুট জায়গা থাকবে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য থাকবে বেঞ্চ, নির্দিষ্ট কিছু দোকান থাকবে, থাকবে শিশুদের জন্য কিডস জোন, গ্রিন জোন ও পার্কিং সুবিধা।
এই এলাকায় সাগরের ভেতরের অংশে সীমানা দেয়ালের পাশাপাশি থাকবে সিমেন্টের ব্লকও। প্রকল্পের আওতায় ১০টি ফুট ওভার ব্রিজ থাকবে। যাতে রোডের পাশের মানুষরা রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। এছাড়া পুরো রোডের সাগরের অংশে থাকবে লাগানো হবে গাছ এবং পুরো ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রোডে সাগরের ভেতরের অংশে সিমেন্টের ব্লক বসবে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া প্রকল্পটি ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। আউটার রিং রোডের শেষ ( পতেঙ্গা নেভাল) অংশে চলছে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ। আর তা নির্মিত হলে কক্সবাজারমুখী গাড়িগুলো সহজেই আউটার রিং রোড ব্যবহার করে টানেল হয়ে কক্সবাজারের দিকে যাতায়াত করতে পারবে।