বোরো ধানে কৃষকের নতুন স্বপ্ন
বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা। আমন ধানে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় এবার বোরো ধানে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা। এ কারণে কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের চাষিরা এখন বোরো ধানের চারা রোপণের সাথে বুনছেন নতুন স্বপ্ন।
ভোরের শীতের হিমেল হাওয়া আর রোদেলা সকাল উপেক্ষা করে জমিতে চলছে চাষ। লাঙ্গল ও ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বোরো ক্ষেত। জমিতে দেয়া হচ্ছে সার ও সেচ। কাদামাখা হাত-পায়ে ক্লান্তি ভরা দেহে নেই থেমে থাকার রেশ। সারিবদ্ধভাবে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা গড়িয়েও জমিতে তাদের দেখা মিলছে। যেন রংপুর অঞ্চলের কৃষি জমিগুলো কৃষাণ-কৃষাণীরা স্বপ্ন বুননের প্রতিযোগিতায় মুখর।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর গ্রামের কৃষক নুর হোসেন জানান, বোরো রোপণের জন্য ৩ একর জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে দেড় একর জমিতে এখন বোরো রোপণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভালো ফলন হবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে রংপুর সদরের হরিদেবপুর ইউনিয়নের সাজু মিয়া, বকুল হোসেন ও সিরাজুল বলেন, 'হামার এবার আমন ধানোত ভালোয় লোকসান হইছে। কোনোটে ঠিকমত দাম উঠে নাই। তারপরও হামরা চাষাবাদ ধরি আছি। লাভ হোক আর লোকসান হউক কিছু করি খাওন লাগবে তো।'
এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দাম নিয়ে শঙ্কা কাটছে না কৃষকদের। নানান কারণে ধান উৎপাদনে খরচ বাড়লেও বিক্রয়ে মিলছে না আশানুরূপ দাম। কৃষকদের কাছে ধান ক্রয় না করে সরকারিভাবে চাতাল-মিল মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করাতে ন্যায্য বাজার দর থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন কৃষকরা।
তারপরও প্রান্তিক চাষিরা বোরো ধানকে ঘিরে এবার আশায় বুক বেঁধেছেন। আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারা প্রান্তিক কৃষক পরিবারগুলোর বেশির ভাগই ধার-দেনা ও দাদন নিয়ে বোরো ধানের উৎপাদনে কোমর বেঁধেছেন।
মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ভাংনী এলাকার কৃষক শাহজালাল ও বেলাল মিয়া জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো বীজতলায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। এ কারণে আগাম আলু তুলে এবার বোরো ধানের রোপণ করছি। আশা করছি ফলন ভালো সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে।
এদিকে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় এবার বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ৩৩৭ হেক্টর জমি। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৭৯ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৪০ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৮২ হেক্টর, লালমনিরহাট জেলায় ৪৮ হাজার ১২৩ হেক্টর, নীলফামারী জেলায় ৮১ হাজার ৬১৩ হেক্টর জমিতে রোরো রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ১৯ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (এলআর) আবু সায়েম জানান, রংপুর অঞ্চলের সকল জেলা ও উপজেলাতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বোরো ধান রোপণের জন্য কৃষকদের লাইন, লোগো, পার্চিং ও সুষম সার প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে।