হৈমন্তী আবেশে চলছে নির্বাচনী ঝড়
মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলার নির্বাচনী হিসাব। হৈমন্তী আবেশে (নবান্ন উৎসব) হিমেল বাতাসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নির্বাচনী আলোচনার ঝড় ওঠে এখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা সদর আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তে নবীন-প্রবীণ সব শ্রেণির ভোটারদের কৌতূহলের যেন শেষ নেই।
কেমন হবে ভোটদান পদ্ধতি, কীভাবে সাধারণ মানুষ মেশিনের মাধ্যমে ভোট দেবেন? কেউ দেখবে কিনা? কারা থাকবে ভোট কেন্দ্রে? এসব নানা প্রশ্ন সাধারণ ভোটারদের মনে বাসা বেঁধেছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাদের মধ্যে রীতিমতো জল্পনা-কল্পনা ছাপিয়ে এক ধরনের উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিন যত এগিয়ে আসছে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তত বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইভিএম নিয়ে স্পষ্ট ধারণাও পাচ্ছে তারা প্রচার মাধ্যম থেকে। ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের আস্থাও ফিরে আসতে শুরু করেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, জেলার তিনটি আসনে তারা দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সে আলোচনা শেষ হবার আগেই জেলার তিনটি আসনে জাতীয় পার্টির তিন প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে লটারিতে সাতক্ষীরা সদর আসনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে সম্পূর্ণ নতুন ও আধুনিক এ পদ্ধতি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
কেউ কেউ বলছেন, ইভিএম ব্যবহারে ভোট কারচুপি বা রাতে ভোট কাটার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি নির্ধারিত সময়ের আগে কিংবা পরে ইভিএম চালু করা যাবে না। এটি হ্যাক করারও কোনো সুযোগ নেই। কেউ ইভিএম মেশিন চুরি বা ছিনতাই করতে পারবে না। চুরি বা ছিনতাই করলেও তাতে কাজ হবে না। ইভিএম পরিচালিত প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে থাকবে সেনাবাহিনী।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এ আসনে জোটের প্রার্থী হচ্ছেন তা প্রায় নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের একাংশ দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন চায়।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি গত সোমবার দলীয় প্রার্থী হিসেবে এ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদারের নাম ঘোষণা করেছে। মহাজোটের মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচন করবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের বরাতে ঘোষণা দিয়েছেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু। ফলে এ আসনে প্যাচ বেঁধে গেছে। এ আসনে বিএনপিসহ ২৩ দলের প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
ইভিএমের কথা শুনে সাতক্ষীরা সদর আসনে অনেকেই নড়েচড়ে বসেছে। আলোচনায় যোগ হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেখ আজহার হোসেনের নাম। দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন তিনি। তিনি দলের হয়ে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।
সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক। মহাজোটে এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিপক্ষ নেই। ফলে লড়াই হবে সরাসরি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর সঙ্গে। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হচ্ছেন জামায়াতের রবিউল বাশার। ডা. রুহুল হকের মন্ত্রিত্বকালে ৫ বছরে সাতক্ষীরার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে মেডিকেল কলেজের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে সাতক্ষীরার মানুষ তাকে স্বপ্নপুরুষ হিসেবে হৃদয়ের মাঝে বসিয়েছে।
তাছাড়া দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ডা. রুহুল হকের নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যে তেমন কোনো বিরোধ নেই। আশাশুনিতে ছোট খাটো বিরোধ থাকলেও তা স্থানীয়ভাবেই নিরসনযোগ্য বলে অনেকেই মনে করেন। ফলে আসনটি ধরে রাখতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এসএম জগলুল হায়দার। তবে এখনো হাল ছাড়ছেন না বিকল্পধারার এইচএম গোলাম রেজা। তিনি রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রের সঙ্গে তার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে। জাতীয়পার্টির দলীয় টিকিট পেয়েছেন আব্দুস সাত্তার মোড়ল। মহাজোটের মনোনয়ন না পেলে তিনি লাঙ্গল নিয়েই লড়বেন বলে জানিয়েছেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু।
এ আসনে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম। ফলে এ আসনেও নির্বাচনী খেল বেশ জমে উঠেছে।