৩ ভাই-বোনের দ্বন্দ্বে ডুববে নৌকা!
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন ভাই-বোনই কিনেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র। অনেকটা শেষে এসে নৌকার মনোনয়ন পান বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। কিন্তু আপন ভাই-বোন হলেও ক্ষমতার লড়াইয়ে বাকি দুইজন আলাদা মেরুতে।
এখানেই বিরোধের শুরু নয়। অনেক আগে থেকেই তিন ভাই-বোনের মধ্যে চলছে নানা বিরোধ। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভাইবোনদের বিরোধেই কমলের নৌকা ডুবে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বলছি কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক সাংসদ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বড় ছেলে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, মেজ ছেলে কক্সবাজার সদর রামু আসনের বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল ও ছোট মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরির কথা।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিন ভাই-বোনের সুদৃঢ় অবস্থান থাকলেও বিরোধের কারণে তা আলোর মুখ দেখছে না। গত দুই সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ৩ ভাই-বোন। তখনো নৌকার প্রতীক পেয়েছেন সাইমুম সরওয়ার কমল। এবারো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ভাইবোনের বিরোধিতায় সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন কমল। ১০ম সংসদ নির্বাচনে পরিবারের সদস্যদের বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কী ২০০৮ সালের রূপ ধারণ করছে কাজল-কাবেরি? এমন আশঙ্কা এখন সদর-রামুবাসীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকে মনোনয়ন দৌড়ে টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তারা। তখন সুযোগ পেলেই একে অপরের সমালোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। কেউ একজন কোনো কর্মসূচি দিলে অপরজন পাল্টা কর্মসূচি দেয়ারও ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিছুদিন আগেও যারা নিজেদের সমালোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তারা কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন একাদশ নির্বাচনে?
এদিকে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারটির দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ ভোটারা কিছু বলতে না চাইলেও তারা যে ভীষণ বিরক্ত তা বোঝা যাচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এই পরিবারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান চায় সকলেই।
নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, দ্বন্দ্ব, সমালোচনা ও আলোচনা যাই হোক ওসমান সরওয়ার চৌধুরীর পরিবারে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। পরিবারের সদস্যদের বিরোধিতা সত্ত্বেও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন টানা তিনবার। আগামী সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন জরিপেও পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে সাইমুম সরওয়ার কমল। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি রামু ও কক্সবাজার সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজেই মিশে যাওয়ার গুণের কারণে মাঠ পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা বেশি।
তবে বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলের কারণে স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি হাতে নেই এমপি কমলের। তাই আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে নিয়ন্ত্রণ করে সাইমুম সরওয়ার কমল নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করে চলেছেন।
নির্বাচনী ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, কমলের বড় সোহেল সরওয়ার কাজল বিগত দুই সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের দৌড়ে ছোট ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ছোট ভাই কমলের বিরোধিতার কারণে তিনি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। তাই এইবার কৌশলে তিনি বোন কাবেরির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
তবে এতো কিছুর পরেও তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলছেন অনেকে। কিন্তু সেটা কী আদৌ সম্ভব কিনা তা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করে আজকের অবস্থানে এসেছি। পরিবারের একজন স্বেচ্ছাচারিতা করে আমাদের রাজনীতি বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছেন। তবে সবকিছু ভুলে নৌকার পক্ষেই কাজ করবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইমুম সরওয়ার কমল বার্তা২৪.কমকে জানান, বড়ভাই কাজল আর ছোটবোন কাবেরি বিরোধিতা করলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা তার সঙ্গেই আছেন।
তিনি জানান, পারিবারিক কিছু ইস্যুকে পুঁজি করে কাজল ও কাবেরি তার বিরোধিতা করছেন। ভাই কাজল ও বোন কাবেরি বিরোধিতা করলেও ভোটের রাজনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।