প্রচারণার ৭ দিনেও মাঠে নামতে পারেনি গাজীপুরের বিএনপি প্রার্থীরা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার ৭ দিন পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত গাজীপুরের ৫টি আসনে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা মাঠে নামতে পারেনি। প্রথম অবস্থায় জোড়েশোরে প্রচারণায় নামার ইঙ্গিত দিলেও দিন যত গড়াচ্ছে ততই তারা মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। এ অবস্থার জন্য মামলা, গ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানিকে দায়ী করছে।
যদিও বিএনপি নির্বাচনী প্রচারণার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত আহ্ববান জানিয়ে আসছেন। বিএনপির আশা, এখনও যথাযথ পরিবেশ পেলে এই সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম তারা।
গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী চৌধুরী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী। তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচারণায় নেই। এ বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বয়স হয়েছে। অনেক উৎসাহ নিয়ে নির্বাচনে প্রাথী হয়েছিলাম। গত বুধবার শফিপুর বাজারে প্রচারণা চালানোর সময় তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। পরে আবার দলীয় নেতাকর্মীদের নামেই ২টি মামলা হয়। কোনোভাবেই তিনি প্রচারণায় নামতে পারছেন না, নানা ধরনের চিন্তায় তার মন ভালো নেই।
গাজীপুর-২ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সালাউদ্দিন সরকারের নির্বাচন সমন্বয়কারী ডা: মাজাহারুল ইসলাম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমাদের ওপর পুলিশি হয়রানি বেড়েছে। আমাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে, রাতে বাড়ি থাকতে পারি না। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক সংগ্রাম করে কৌশল করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশের ভয়ে কর্মীরা প্রচারণায় আসছে না। এ দিকে ১৫ ডিসেম্বর ঐক্যফ্রন্টের পথসভাকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের নামে নতুন মামলা হওয়ায় আতংক আরও বেড়েছে। আমরা রিটার্নিং অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি।
গাজীপুর-৩ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকী। ১৩ ডিসেম্বর তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ২ নেতা আব্দুল মোতালেব ও হুমায়ুন কবির সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পরের দিন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক পীরজাদা রুহুল আমীনকেও গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর পুরোনো কয়েকটি গায়েবি মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। যাতে নতুনভাবে বিএনপির নেতাকর্মীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনে যাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ছিলো, এখন তারাই আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আসলে সুষ্ঠু পরিবেশ না হলে নির্বাচনী প্রচার চালানো যায় না বলে অভিমত এই প্রার্থীর।
গাজীপুর-৪ আসনের প্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নান। তিনি বলেন, প্রচারণা শুরু করলেই বাধা দেওয়া হয়। চলতি মাসে দলীয় নেতাকর্মীদের নামে ৩টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে, আসামী করা হয়েছে প্রায় ২০০ জনকে। মাইক ভাঙচুর করা হচ্ছে, পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় কিভাবে প্রচারণা সম্ভব?
গাজীপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনকে গত ১৩ ডিসেম্বর তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর তার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা নেমে এসেছে। তবে তার স্ত্রী শম্পা হক নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে স্বামীর মুক্তি কামনা করে বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে আমরা সমান সুযোগ চাই।
এ সব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, গাজীপুরের ৫টি আসনে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ভালো পরিবেশ রয়েছে। যারা অভিযোগ করছেন, তাদের অভিযোগগুলো গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।