যশোরের ছয় আসনেই নৌকার বিজয়
যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনেই নৌকার প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। রাত ৯টার পর ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে ফলাফল জানিয়েছে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে দুই লাখ ১১ হাজার ৪৪৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি পেয়েছেন চার হাজার ৯৮১ ভোট। এ আসনে হাতপাখা পেয়েছে এক হাজার ৩৩০ এবং পোলাপফুল পেয়েছে এক হাজার ১৭৭ ভোট।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে তিন লাখ ২৫ হাজার ৭৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দীন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত নেতা আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন ধানের শীষ প্রতীকের পেয়েছেন ১৩ হাজার ৯৪০ ভোট। এ আসনে হাতপাখা পেয়েছে তিন হাজার তিন ভোট। মঈ পেয়েছে ৫৯১, উদীয়মান সূর্য ৭৭ এবং কাঁঠাল পেয়েছে এক হাজার ২৪ ভোট।
যশোর-৩ (সদর) আসনে তিন লক্ষ ৬১ হাজার ৩৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭১০ ভোট। এ আসনে লাঙ্গল প্রতীক এক হাজার ৬৯, পোলাপফুল এক হাজার ৬৭, কুলা ৯১৪ এবং তারা প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট ২৫।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর-বসুন্দিয়া) আসনে দুই লাখ ৭২ হাজার ১শ’ ৬৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রণজিৎ কুমার রায়। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী টিএস আইয়ুব পেয়েছেন ৩০ হাজার ৮৭৪ ভোট। এখানে লাঙ্গল এক হাজার ৯৭৮, হাতপাখা ৫ হাজার ৬৫৭, কাঁঠাল ৭৪২, কুলা ৯৯, আম ২০৯ এবং গোপালফুল এক হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়েছেন।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে দুই লাখ ৪২ হাজার ৮৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য। এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জমিয়াতে মুদারেসিন দলের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস পেয়েছেন ২৪ হাজার ৬২১ ভোট। এ আসনে লাঙ্গল ৮৮৪, হুক্কা ১২৪, গোলাপফুল’ ৪১৭ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান বারী পেয়েছে ৮৫৭ ভোট।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে এক লাখ ৫৬ হাজার ৫০৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইসমাত আরা সাদেক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আবুল হাসান আজাদ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৭৩ ভোট। এ আসনে গোলাপফুল পেয়েছেন ৩৮০, লাঙ্গল ৩৫১ ও হাতপাখার প্রাপ্ত ভোট এক হাজার ১৭০। এদিকে, বিচ্ছিন্ন হামলা, অভিযোগ ও ছয় প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্যে দিয়ে যশোরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরের পর ৪ আসনের ৬ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে ও গণমাধ্যমকে জানিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
যশোর-৩ সদর আসনে বিএনপি প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, তিনি শহরের বারান্দিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছবি ও নৌকা প্রতীক নিয়েই প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্রের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। পাশাপাশি নির্বাচন কর্মকর্তারাও আইন মানছেন না। তিনি এর প্রতিবাদ করলে নৌকার সমর্থকরা তার ওপর চড়াও হয়। দুর্বৃত্তরা তাকে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি তার গাড়ি ভাংচুর করে। পরে তিনি ওই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেখানে কন্ট্রোল রুমে গিয়ে অভিযোগ করেন। পরে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ করেছেন।
অমিত আরও অভিযোগ করেন, তিনি সকাল থেকে ১০/১২টি কেন্দ্রে ঘুরেছেন। সব কেন্দ্র থেকেই তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলো বোমাবাজি করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্রগুলো দখল করে নিয়ে ভোট কাটছে। প্রশাসন অনিয়ম রোধের পরিবর্তে তাদের সহযোগিতা করছে। পরে অমিত যশোর ইনস্টিটিউট স্কুল কেন্দ্রে গেলে সেখানেও ক্ষমতাসীনদের রোষের মুখে পড়েন।
একই সময় বেলা ১১টার দিকে সেবাসংঘ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন যশোর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ। ভোট প্রদানের পর তিনি জানান, যশোরে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হামলা-মামলা ও ভোট কাটার ইতিহাস, বিএনপির ইতিহাস।
যশোর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে মফিকুল হাসান তৃপ্তি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, আগের রাতেই সন্ত্রাসীরা ভোট কেটে ক্ষমতাসীন প্রার্থীর বাক্সে ভরেন। এ জন্য আজ তার কর্মী সমর্থক এবং ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। যারা যাওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মারধর করা হয়। বিএনপির কর্মী সমর্থকরা ভোট দিতে না পারায় তিনি ভোট প্রত্যাখ্যান করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পুনরায় ভোট দাবি করেন।
একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন, যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী কামরুল হাসান বারি ও যশোর-৪ আসনে এনপিপির প্রার্থী মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। এছাড়া বাকী তিনজনের পক্ষে তাদের নির্বাচনী এজেন্ট গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করেন।
সার্বিক নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে যশোর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে রক্তপাতহীন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছয় প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন কোনো খবর তাদের জানা নেই।