শুধু রাজশাহীর গোদাগাড়ীতেই লড়াইয়ের আভাস
পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে রাজশাহীর ৮ উপজেলায় রোববার (১০ মার্চ) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন ঘরে বসে ভোটের হিসাব কষছেন প্রার্থীরা।
জানা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই উপজেলা চেয়ারম্যান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। তবে শুধুমাত্র গোদাগাড়ী উপজেলা ছাড়া বাকি ৫ উপজেলাতে ভোটের মাঠে কোনো উত্তেজনা নেই। ওই সব উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে কোনো শক্ত প্রার্থী না থাকায় ভোটের মাঠে শীতল হাওয়া বইছে। প্রচার-প্রচারণা যেমন কম লক্ষ্য করা গেছে, তেমনি নেই কোনো উত্তেজনাও। তাই জেলার বাসিন্দাদের সকলের দৃষ্টিই এখন গোদাগাড়ী উপজেলার দিকে।
এই উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯৪টি। আর মোট ভোটার হচ্ছে ২লাখ ৩৮ হাজার ৩৪ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলাতে চেয়ারম্যান পদে চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দীন বিশ্বাস (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বদিউজ্জামান (আনারস), ওয়াকার্স পার্টির সাইদুর রহমান (হাতুড়ী)।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবদুল মালেক (টিউবওয়েল), শফিকুল সরকার (তালা), মাহবুবুর রহমান (উড়োজাহাজ), তোহিদুল ইসলাম (লাঙ্গল), সালমান ফিরোজ ফয়সাল (টিয়া পাখি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সফিয়া খাতুন মিলি। এতে করে পুরুষ প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নারী ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেননি। তাই ভোট কেন্দ্র নারী ভোটারদের উপস্থিতি কম হবে বলে আমঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম, জাতীয় পাটির অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দীন বিশ্বাস ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বদিউজ্জামান জোরালো থাকলেও খুব একটা দেখা যায়নি ওয়াকার্স পাটির সাইদুর রহমানকে।
তারা বলছেন, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলাতে লড়াই হবে ত্রিমুখি। তবে কেউ কেউ বলছেন, লাঙল নয়, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনাসের প্রার্থীর মধ্যে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গোদাগাড়ী উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় ৩০ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোট দিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটাররা আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে।’
জাতীয় পাটির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দীন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি দীর্ঘ সময় থেকে তৃণমূল মানুষের সেবা করে আসছি। তাই ভোটাররা গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে লাঙল প্রতীকে ভোট দেবেন।’
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বদিউজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে সব সময়ের জন্য জনগণের পাশে ছিলাম। ভোট চাইতে গিয়ে যেভাবে সাড়া পেয়েছি, আমি নিশ্চিত ভোটাররা আনারস প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।’
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান টিউবওয়েল, তালা ও উড়োজাহাজের প্রতীকের মধ্যে লড়াই হওয়ার আভাস দিলেও জয়ের ব্যাপারে এগিয়ে রাখছে ক্লিন ইমেজের আবদুল মালেককে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল আকতার বলেন, ‘নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্ব একাধিক ভ্রম্যমাণ আদালত নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া বিজিবি সদস্যরা টহল দিবে ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে।’
নির্বাচন সহকারী রিটানিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসাদের শনিবার (৯ মার্চ) ব্যালট পেপার, বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। আশা করছি- রোববার (১০ মার্চ) উপজেলায় সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।’