বার্সেলোনায় কাতালান স্বাধীনতাকামীদের জাতীয় দিবস পালিত
প্রতি বছরের মতো এবারও কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবস ‘লা দিয়াদা’ পালন করেছে কাতালান স্বাধীনতাকামী জনতা। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী বার্সেলোনার ‘প্লাসা এস্পানিয়া’তে জড়ো হন প্রায় ৬ লাখ মানুষ। তবে এবারের জাতীয় দিবসে বিগত ৭ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম জনসমাগম হয়েছে।
স্পেনের সবচেয়ে বড় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘গোয়ারদিয়া উরবানা’র দেওয়া তথ্য অনুসারে কাতালোনিয়ার এবারের জাতীয় দিবসের জনসমাগমে উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬ লাখ জনতা। একই সংস্থার গণনা অনুসারে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখের উপরে। এবার গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ লাখ কম জনসমাগম হয়েছে।
১৭১৪ সালে স্পেনের রাজা পঞ্চম ফিলিপের বাহিনীর কাছে বার্সেলোনার পরাজয় ও অঞ্চলটির স্বাধীনতা হারানোর ঘটনা স্মরণ করে দিনটিতে আঞ্চলিক ছুটি ও জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। ২০১২ সাল থেকে দিবসটিকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকামীরা স্বাধীনতার আন্দোলনের দিন হিসেবেও বেছে নিয়েছে।
এবারের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে সকাল থেকে আকাশি রঙের টিশার্ট পরিধান করে, কাতালোনিয়ার জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে কাতালান জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা রাজধানী বার্সেলোনার সড়কগুলোতে জড়ো হতে থাকেন। বিকেল পর্যন্ত বার্সেলোনা শহরের প্রাণকেন্দ্র প্লাজা এস্পানিয়াকে কেন্দ্র করে আশেপাশের আভেনিদা পারালেল, আভেনিদা মারিয়া ক্রিস্টিনা, তারাগোনা, গ্রানভিয়াসহ আশেপাশের বৃহৎ সড়কগুলো লোকেলোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ সময় কাতালান স্বাধীনতাপন্থিরা তাদের আটককৃত নেতাদের মুক্তি, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেবার স্লোগান দিতে থাকেন।
দিনের শুরুতে মিকেলতেস দে কাতালোনিয়া (কাতালোনিয়ার চলমান ইতিহাস নিয়ে কাজ করে এবং ১৭১৪ সালে কাতালান সৈন্য, মিলিশিয়া বাহিনীর স্মরণে কাজ করে এমন একটি সংগঠন)-এর পক্ষ থেকে কাতালান প্রেসিডেন্ট কিম তোররাকে অভিনন্দন ও মিলিশিয়া বাহিনীর প্রতীক ধারণকারী সশস্ত্র বাহিনীর ফাঁকা আওয়াজের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এছাড়া সকালের কমসূচিতে ছিল কাতালান প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের স্মৃতিসৌধ রাফায়েল দে কাসানোভায় পুষ্পস্তবক অর্পণ।
জাতীয় দিবসটি পালনের জন্যে কাতালোনিয়ার ৪টি প্রদেশ থেকে বার্সেলোনা শহরের গণসমাবেশে আসা সবাইকে এক বিবৃতির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান বার্সেলোনার পুননির্বাচিত মেয়র আদা কোলাও।
পরে দুপুর থেকে সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত কাতালোনিয়ার ৪টি প্রদেশ থেকে বড় বড় বাসসহ অন্যান্য পরিবহনে আসা লোকজন প্লাসা এস্পানিয়াকে কেন্দ্র করে গণসমাবেশ ও কাতালান জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এ সময় খণ্ড খণ্ড হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে ছিল—মানববন্ধন, মানবস্তম্ভ তৈরি, পথসভা। পরে সন্ধ্যায় স্বাধীনতাকামীদের সৌজন্যে বিশেষ কনসার্টের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি দল কাতালান জাতীয়তাবাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দিবসটি পালন করেছে। কাতালোনিয়ার বামপন্থি দল এসকেররা রেপুবলিকানা দে কাতালোনিয়ার বাংলাদেশ বিষয়ক সমন্বয়ক সালেহ আহমেদের নেতৃত্বে অংশ নেওয়া ওই দলে বাংলাদেশিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—ইআরসি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও আবুল কালামসহ অন্যান্য বাংলাদেশি নেতারা।