ফের জলমগ্ন হাওরের হাতছানি
উদ্যোগটি নিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের হাওরের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক। কয়েকশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে নিয়ে জল ছলছল, বিচিত্র প্রাণবৈচিত্রের জলজনপদ হাওরের বুকে কাটিয়ে ছিলেন আস্ত একটি দিন। 'এভারগ্রিন কিশোরগঞ্জ' গ্রুপের সে উদ্যোগ ব্যাপক সারা জাগিয়েছিল।
এবার 'আমাদের-জন্মভূমি-কিশোরগঞ্জ'-এর পক্ষ থেকে আগামী শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) হাওর ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে। আগের বার ইটনা, মিটামইনের মতো এবার হিজলজানি নামের অনিন্দ্য-সুন্দর হাওর-গ্রামে যাবেন অনলাইন কর্মীরা।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার প্রান্তিক এ গ্রামটি বৃহত্তর হাওরের অন্যতম রূপসী স্থান। যার উত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ-নেত্রকোণার হাওর, পূর্বে বৃহত্তর সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওর আর দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ-হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চল। অতলান্ত নীল জলরাশির মাঝে সবুজ টিপের মতো জেগে আছে রূপবতী হিজলজানি গ্রাম।
ভ্রমণের সার্বিক দিক সমন্বয় করবেন গ্রুপের এডমিন দ্বীন ইসলাম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সদস্য এতে অংশ নেবেন বলেও জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
অন্যতম উদ্যোক্তা, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লুৎফুন নেসা চিনু বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাণবৈচিত্রের সমাহারে হাওরাঞ্চল বাংলাদেশের সমৃদ্ধ পর্যটন স্থান। এখানে ইকো ট্যুরিজমের বিরাট সুযোগ রয়েছে। অনলাইন কর্মীদের ভ্রমণের মাধ্যমে দেশবাসী বিচিত্র হাওর সম্পর্কে জানতে পেরে এখানে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হবে।'
বাংলাদেশের অপরাপর সমতল ভূমির চেয়ে জলমগ্ন হাওরাঞ্চল সম্পূর্ণ আলাদা এক ভূগোল। হাওরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন নদীর মিলনমমেলা। জালের মতো নদীগুলো বয়ে গেছে অপেক্ষাকৃত নিন্মভূমি হাওরের বুক চিড়ে। ফলে সারা বছরই জলে টুইটুম্বুর থাকে আদিঅন্তহীন হাওরের জলমগ্ন জনপদ। কল্লোলিত জলের মাঝে দ্বীপের মতো মাথা উঁচিয়ে আছে একেকটি গ্রাম।
শীতে হাওরের জল নেমে গেলে জেগে উঠে মৎস্য ভাণ্ডার আর মাঠের পর মাঠে সবুজ ধানের হাসি। দিগন্ত ছেয়ে নেমে আসে সুদূরের অতিথি পাখির ঝাঁক। প্রাণ আর উদ্ভিদের সমাহারে অনন্য হাওরের প্রভায় উজ্জ্বল হয় বাংলা মায়ের মুখচ্ছবি।
বহু প্রাচীন ইমারত, লোকজ সংস্কৃতি, নকশীকাঁথা, গান, বাজনায় দোলায়িত হাওরের প্রধান আকর্ষণ হলো অসংখ্য ছোট-বড় নদী। কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনার চৌগাংগা এমনই একটি স্থান। চৌগাংগা মানে চার নদীর সমাহার, চৌ অর্থ চার আর গাংগা মানে গাঙ্গ বা নদী। এখানে এসে মিশেছে চারটি নদী। একটি হলো ধনু, যার অন্য নাম বাউলাই এবং কোথাও ঘোড়াউত্রা।
ধনু প্রমত্তা মেঘনার উপনদী। এটি সুনামগঞ্জ থেকে সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী হয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় প্রবেশ করেছে। মিটামইন ও নিকলীর নিকট এ নদী ঘোড়াউত্রা নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় যে নদী এখানে এসেছে, তার নাম নরসুন্দা। নরসুন্দা নদী ইটনার বাদলার নিকট ধনু নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। স্থানীয় ভাবে এই সংযোগস্থলই চৌগাংগা নামে পরিচিত।
আরেকটি নদী মগরা বা চিনাই। এটি কিশোরগঞ্জের ইটনা এলাকায় প্রবেশের পূর্বে মগরা নদীর স্রোতধারার সাথে মিলন হয়েছে। নেত্রকোণা জেলা অতিক্রম করে চিনাই নদী ইটনায় এসে মগরার সাথে মিলিত হয়ে ধনু নদীতে পতিত হয়েছে।
শেষ যে নদীটি এখান দিয়ে প্রবাহিত, তা হলো বারম্ননী। নেত্রকোণা জেলার সীমানা পেরিয়ে বারম্ননী নদী ইটনা ও তাড়াইল উপজেলার সীমানা বরাবর কিশোরগঞ্জে প্রবেশ করে নরসুন্দার সাথে মিলিত হয়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের সজীব নদীগুলোর জল টলমল স্রোত হাওরকে যে অপার সুষমায় সজ্জিত করেছে, সে রূপের হাতছাড়ি বার বার ডাক দেয় মানুষকে। ডাকে জলমগ্ন নৈসর্গিক ভূগোলে।
রোদে, বর্ষায়, শীতে ভিন্ন ভিন্ন বিভায় হাওরের সূর্যময় দিন আর জলের শরীরে জোছনায় ভেসে যাওয়া চাঁদময় রাতের ডাক যে শুনতে পায়, সে রহস্যময়তার মায়াবী ছোঁয়ার টানে বার বার ছুটে যায় জলজ হাওরের উদ্দাম বুকে।