বয়ঃসন্ধিকাল, যৌনশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম



সেন্ট্রাল ডেস্ক ২

  • Font increase
  • Font Decrease
বয়ঃসন্ধিকাল কেবল জীবনের একটা বিশেষ সময়ই শুধু নয়, একটি সুনির্দিষ্ট শরীরী প্রক্রিয়াও বটে। এর মাধ্যমে একটি শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রজনন সক্ষমতা লাভ করে। সচরাচর মেয়েদের ৯-১৪ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ১০-১৭ বছর সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলে, যা মানুষের দারুণ এক কৌতূহলের বয়স। শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক বিকাশ এবং দায়িত্ববোধ যোগ হতে থাকে এই সময়টায়। বয়ঃসন্ধিকাল একাধারে দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক অভিজ্ঞতার সময়। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, এই সময়টা আমাদের সকলেরই জীবনের এক ক্রান্তিকাল কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই আমরা যা পার করে ফেলছি। এই সময়টাতে শিশু-কিশোরের বুকে থাকে প্রবল আবেগ। শরীরে নানা হরমোন খেলা করে, মনে ভাল-মন্দ নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনার উদয় হয়  এইসময় শিশুর চিন্তার নিজস্ব জগত ধীরে ধীরে পাল্টে  যায়। এই সংকটাপন্ন সময়ে পরিবার ও শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা আমাদের সমাজ কতটা দেয় কিশোর-কিশোরীদের? আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, সংসারের টানাপোড়ন, লেখাপড়া, ক্যারিয়ার সবমিলিয়ে বাবা-মায়েরা পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না সন্তাদের। নিউক্লিয়াস পরিবারে একাকী জীবনে অভ্যস্ত শিশুরা হয়ে পড়ছে যন্ত্রনির্ভর  সংস্কৃতিতে আসক্ত। যা বিভিন্ন ক্রাইম, যুদ্ধ, ফিকশনাল কারেক্টারদের অদ্ভুতুড়ে কার্যকলাপে ভরপুর। বাস্তবতাভিত্তিক সামাজিক শিক্ষা থেকে যোজন দূরত্বে ঐসবের অবস্থান করে। পারিবারিক নিঃসঙ্গতা, কল্পনার এই অবাস্তবতা আর মনোজগতের সংঘাতপূর্ণ উক্তরূপ মিডিয়াচিত্র সুস্থ মানুষের মানস গঠনে কোনক্রমেই সহায়ক নয়। কিন্তু বিকল্প কী? বিদ্যালয়কে ‘সেকেন্ড  হোম’ বলা হয়, যেখানে একজন শিশু-কিশোর মনুষ্যত্বের পাঠ নেয়। তার আত্মবিশ্বাস, নৈতিকতা আর সৃজনশীলতার উন্মেষ ও বিকাশে বিদ্যালয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা দেখছি, যে বিদ্যালয়  মানুষ গড়ার কারিগর, তা'ই হয়ে উঠেছে আজ টাকা উপার্জনের হাতিয়ার। প্রায়  প্রতিটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি আর প্যারেন্টস কমিটিতে আছে রাজনীতিবিদদের নোংরা হস্তক্ষেপ।  যেখানে শিশুদের মানসিক বিকাশের প্রয়াস থাকা উচিত, সেখানে টেন্ডার, বিভিন্ন আর্থিক সুবিধাদি মুখ্য হয়ে উঠে। শিক্ষকদের  কোচিং প্রবণতা, সাফল্য লাভের তথাকথিত একধরনের  অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সংক্রামিত হয়। ফলে বিদ্যালয়ে কিশোর-কিশোরীদের যে মানস গঠিত হচ্ছে সেটাও প্রত্যাশিত নয়। অন্যদিকে, বয়ঃসন্ধিকালের লক্ষণ হচ্ছে শারীরিক গঠনের পরিবর্তন, যা শিশুমনে প্রচন্ড কৌতূহলের জন্ম দেয়, সাথে নিজেকে নিয়ে কিছুটা বিব্রতভাবও তৈরি হয়। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ এইসময় স্বাভাবিক। এটাই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেক্স এজুকেশনে গ্রাম আর শহরের বিরাট তারতম্য। গ্রামে এখনো চাচা, ফুফু, দাদা, দাদীরা একত্রে থাকেন। এই পারিবারিক আবহ সেক্স এজুকেশনের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। তারা বিভিন্নভাবে সচেতন করে শিশুদের, তোমরা এখন বড় হচ্ছো এই করো, এভাবে করো, ইত্যাদি। কিন্তু শহরের নিঃসঙ্গ পারিবারিক জীবন বা বুয়ার হাতে তৈরি শিশুরা বেড়ে  উঠে অজ্ঞতা বা বিকৃতিকে অবলম্বন করে। আবার, মীরপুরের এক খ্যাতনামা বিদ্যালয়ে এক জরিপের ফলাফল ছিল ভিন্নরূপে ভয়াবহ। শতকরা ৬০ ভাগ মেয়ে স্যানিটারি  ন্যাপকিন ইউজ করে না আর্থিক  কারণে। আমি অজ্ঞতাকেও যুক্ত করবো এর  সাথে। অথচ স্বাস্থ্যকর একটা জীবন আগামী প্রজন্মের অন্যতম শর্ত। বলা বাহুল্য, সেক্স এজুকেশনে সবচেয়ে অসাম্যের শিকার কর্মজীবী শিশুরা। অর্থনৈতিক, নৈতিক আর শারীরিকভাবে নিগৃহীত হয় এসব শিশুরা মালিকপক্ষ বা বড়দের হাতে। কর্মজীবী শিশুদের ৪০ শতাংশ চাইল্ড  এ্যাবিউজের শিকার। যার ফলাফল এরা জীবনজুড়ে বেড়ে ওঠে নেতিবাচক একটা মনোভাব নিয়ে। সেক্স এজুকেশন নিয়ে আমাদের মন-মানসিকতাও বড় বিচিত্র। এব্যাপারে চমৎকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। তার ভাষায়, আমি সেক্স এজুকেশন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গেছি, তার মধ্যে মাদ্রাসা আর ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আছে। তারা কিছু কিছু শব্দ প্রয়োগে সচেতন থাকার কথা বললেও ব্যাপারটাকে এপ্রিসিয়েট করেছে। কিন্তু সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো, সচিবালয়ে যখন বিষয়টা উত্থাপন করা হলো, বাধা এলো, যেন অচ্ছ্যুৎ এক বিষয়। এই হলো আমাদের নীতিনির্ধারকদের মন-মানসিকতা। বয়সন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে আরেকটি সমস্যা হলো দেশ আর ইতিহাসবিমূখতা তাদের দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত করছে। পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ শিশু বীরশ্রেষ্ঠদের নাম জানে  না। পরিতাপের বিষয় ৭ মার্চ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস একটার সাথে আরেকটা গুলিয়ে ফেলে তারা। শিশুরা যদি শিকড় সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, তার ইতিহাস চেতনার ভিত্তি কীভাবে শক্ত হবে? উপরের সবগুলো শর্ত তথা, পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা  এবং সমাজ ও সংস্কৃতির ভৌত কাঠামোর উপর নির্ভর করে একজন শিশুর যোগ্য মানুষ হয়ে উঠা। আধুনিকতার সাথে সঙ্গতি  রেখে বাবা-মাকে চেষ্টা করতে হবে সন্তানের সাথে একান্ত সময় কাটাতে। সন্তান কী করছে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সাথে অভিভাবকসুলভ আচরণ নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। নৈতিকতার প্রাথমিক  শিক্ষাটা শিশুরা বাবা-মার কাছ থেকে পায়। এক্ষেত্রে  বাবা-মাকে সচেতন থাকতে হবে। আমার প্রস্তাব হলো, বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে যৌন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে  হবে, ক্লাসে এই ব্যাপারে বিশদ আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। প্যারেন্টস আর টিচার্স মিটিং এ কোন অভিযোগ নয়, কিভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে গ্রো করা যায় তার চর্চা করতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক-বিদ্যালয় একটা চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেখানে প্রতিযোগিতা মুখ্য থাকবে না, হারজিতের সাথে পরিচয় থাকবে না কোন শিশুর। থাকবে দেশ, দেশের মানুষ আর ইতিহাস নিয়ে গর্ববোধ। স্বীকার না করে উপায় নেই যে, কেবল পরিবার, সমাজ ও শিক্ষকের সম্মিলিত আর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজকের শিশু হবে আগামীর প্রতিনিধি। রাষ্ট্রের ভূমিকা হতে হবে এক্ষেত্রে  অভিভাবকের। সুস্থ, সুন্দর নতুন প্রজন্ম ছাড়া বাংলাদেশের আর কী ভবিষ্যত আছে?
   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;