পাঁচ কোটি পোষা কুকুরের দেশে….



সেন্ট্রাল ডেস্ক ৩

  • Font increase
  • Font Decrease
জন্তু জানোয়ারের প্রতি সদয় দেশ নয় বলে দেশটির বদনাম আছে।কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণীর যত্ন আত্তিতে দেশটির নাগরিকরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করছেন। দেশটিতে এখন কুকুরের জন্য পাঁচ তারা হোটেলও আছে, যেখানে কুকুরের জন্য সিনেমা হল, সুইমিং পুল এবং থাকার জন্য বিলাসবহুল কামরাও রয়েছে। বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের কথা, যেখানে পোষা কুকুরের সংখ্যা পাঁচ কোটি। চীনের প্রথা অনুযায়ী প্রতিটি নতুন বছরকে একেকটি প্রাণীর নামে নামকরণ করা হয়। শুক্রবার শুরু হওয়া নতুন বছরটি তেমনি নামকরণ করা হয়েছে কুকুরের নামে। বিবিসি'র সংবাদদাতা দেখেছেন কুকুরের জন্য নির্মিত চীনের একটি পাঁচ তারা হোটেলের মিনি থিয়েটারে দেখানো হচ্ছে, কুকুর নিয়ে তৈরি সিনেমা। দর্শক অল্প কয়েকটি কুকুর এবং তাদের মালিকেরা। তিয়ান উ নামে একজন এসেছিলেন সেখানে নিজের প্রিয় কুকুর অস্কারকে সাথে নিয়ে। তিনি বলছিলেন, " এখানে কুকুর এবং তাদের মালিকেরা একসঙ্গে সিনেমা দেখতে পারে এবং পরস্পরের সঙ্গ উপভোগ করতে পারছে। পুরো বিষয়টি খুবই সুন্দর। আর এটা আমার কাছে জরুরি বলেই মনে হয়"। মুভি থিয়েটারে কুকুরের দৃষ্টিশক্তি অনুযায়ী দূরত্বে সিনেমার পর্দা বসানো হয়েছে, এবং আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে এমনভাবে যেন তাদের চোখের ক্ষতি না হয়। এছাড়া বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে কুকুরের জন্য আরামদায়ক ভাবে, অর্থাৎ গদি বানানো হয়েছে একটু চওড়া ভাবে যাতে একজন মালিক কুকুরটিকে পাশের আসনে বসিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন। এসব শুনতে যত মনোহর, কিন্তু এই হোটেলে আসা কুকুরের দেখভাল করার ব্যাপারটি তত সহজসাধ্য নয়। মানে এই অভিজাত কুকুরদের দেখাশোনার পেছনে এর মালিকদের বহু অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই হোটেলটি চীনে পোষা প্রানীর বিলাসবহুল জীবনযাপনের পেছনে দেশটির নাগরিকদের অর্থব্যয়ের একটি নমুনামাত্র। চীনের নাগরিক জীবনে গত কয়েক বছরে ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ দেশটির এক সন্তান নীতির কারণে পরিবারগুলো ক্রমে ছোট হয়ে গেছে, সন্তান বড় হয়ে যাবার পর অনেকে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছেন। অনেকের জন্যই কুকুর এখন একটি অত্যাবশ্যকীয় ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে। ঝ্যাং লেই নামে একজনের কুকুরের নাম জাম্পিং বীনকে নিয়ে। তিনি ব্যাখ্যা করছেন, কেন কুকুরের জন্য খরচ করতে পিছপা হন না তিনি। "এই কুকুরটি আমার ভীষণ প্রিয়। সে আমার আত্মার রোজকার ভালোমন্দের একটি বিরাট অংশ হয়ে উঠেছে। ও একেবারে আমার সন্তানের মত। ওকে আনন্দে রাখার জন্য, ওর জন্য পয়সা খরচ করতে আমার ভালোই লাগে। এজন্য শুধু এখানে না, আমি ওকে নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় যাই, ঘুরে বেড়াই"। দেশটির প্রানী কল্যাণ সংস্থাগুলো বলছে, জন্তু জানোয়ারের কল্যাণে চীনের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রানীর যত্নআত্তিতে চীনাদের খরচ বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পশুপালন বিষয়ক অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পোষা প্রানীর যত্নে চীন বছরে আড়াইশ’ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করছে। বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বে এক্ষেত্রে চীন হবে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয়কারী দেশ। ললিপপ নামে কুকুরের মালিক বলছিলেন নিজের আয়ের একটা বড় অংশ তিনি নিজের পোষাপ্রানীর পেছনে ব্যয় করেন। তিনি বলেন, "আমার কর্মক্ষেত্রে আমাকে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়, রোজ প্রচুর সময় দিতে হয়। এর ফলে আমার কুকুরটি বাড়িতে একলা সময় কাটায়, আর আমার জন্য অপেক্ষা করে। এটা প্রানীটির প্রতি রীতিমত নির্মম আচরণ। বিষয়টি নিয়ে আমার মধ্যে ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করে। ফলে অবসর সময়ে আমি নিয়ম করে ওকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাই"। চীনের নতুন বছর কুকুরের নামে নামকরণ হওয়ায়, পোষা প্রানীর যত্নে গড়ে ওঠা খাতে তা নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। যেকোন শপিং মলে এখন পোষা প্রানীর কর্নারে পাওয়া যাবে কুকুরের ব্যবহার্য অভিনব সব জিনিসপত্র। কুকুরের বসার বা শোওয়ার আসন আছে। এমনকি কুকুরের বসার জন্য অভিজাত নকশার সোফাও দেদার বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে শোওয়ার বা বসার বাহারি কুশন, বিশেষ রুম ফ্রেশনার, গায়ে উকুন হওয়া ঠেকানোর শ্যাম্পু, সুগন্ধি মোমবাতি, কুকুরের ঘরের জন্য বানানো বিশেষ আলোর মত পন্য। জনপ্রিয় হচ্ছে কুকুরের যত্নে গড়ে ওঠা পার্লার। সুতরাং নতুন বছরটি দেশটির ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো বার্তা নিয়ে এসেছে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়
   

কুরচি ফুল, দেশি হয়েও আজ ভিনদেশি



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র একটা সুগন্ধে মনটা ভাল হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটি একটি ফুলের গন্ধ, যারা রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। অন্যান্য ফুলের গন্ধের চেয়ে এর গন্ধটা একটু যেন বেশি তীব্র। খুঁজতে লাগলাম গাছটিকে। অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে গাছটিকে খুঁজে পেলাম। গাছটিকে চিনে রাখলাম।

পরদিন দিনের আলোয় গাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। একটু অপরিচিত ঠেকলো। ভাবলাম বিদেশি কোনো ফুল গাছ হবে হয়তো। গাছটি সনাক্ত করতে গাছ, ফুল আর পাতার ছবি তুলে পাঠালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে। তিনি দেখে সাথে সাথেই জানালেন গাছটির নাম কুরচি। আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে কুরচি গাছ

উইকিপিডিয়াতে গাছটির আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন এবং চীনের কিছু অংশের নাম লেখা রয়েছে।

ড. জসীম বলেন, কুরচি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। আমরা এটি রিপোর্ট করার আগেই হয়তো আফ্রিকা কিংবা অন্য কোনো স্থান হতে রিপোর্টিং হয়ে গেলে সেটি ওই স্থানের আদি উদ্ভিদ হয়ে যায়। শুধু কুরচি নয় এমনিভাবে আমাদের অনেক দেশীয় উদ্ভিদ বিদেশি হয়ে গেছে। অথচ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে ও সাহিত্যে কুরচির উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, কুরচি গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০ থেকে ২০ ফুট। ফুল অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপরের অংশ মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধি কিন্তু মধুর।

ড. জসীম আক্ষেপ করে বলেন, দেখতে সুন্দর ও তীব্র সুগন্ধিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাগানীদের কাছে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে তেমন কদর পায়নি। ফলে একসময় এ গাছ যত্রতত্র চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের শালবনে প্রচুর কুরচি গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় রমনা উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও কুরচি গাছ আছে।

সুগন্ধে ভরা কুরচি ফুল গাছ

কুরচির ঔষধিগুণ সমন্ধে তিনি বলেন, পুরো কুরচি গাছটিই ঔষধি গুণে ভরা। কুরচি গাছের বাকল ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার মহৌষধ। হাঁপানি রোগে শিকড়ের রস দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কৃমি রোগ ও মুখের ঘায়ে এর শিকড়, পাতা ও বাকল খুব কার্যকর। তবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

কুরচি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের একটি ক্ষুদ্র পত্রমোচী মাঝারী বৃক্ষ। পাহাড়-পর্বতে এই গাছ হরহামেশাই দেখা যায় বলে হয়তো এর অন্য নাম গিরিমল্লিকা। এ ছাড়া কুরচি গাছটি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়।

;

শহুরে হস্তশিল্প প্রেমীদের সৌখিনতার রাজ্য দোয়েল চত্বর

  ‘এসো হে বৈশাখ’



গুলশান জাহান সারিকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
শহুরে হস্তশিল্প প্রেমীদের সৌখিনতার রাজ্য দোয়েল চত্বর

শহুরে হস্তশিল্প প্রেমীদের সৌখিনতার রাজ্য দোয়েল চত্বর

  • Font increase
  • Font Decrease

শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ হয়ে বাঙালির জীবনের সাথে মিশে আছে নানান হস্তশিল্প। আবহমান বাংলা ও বাঙালির জীবন বৈচিত্র্যের সাথে জড়িয়ে আছে কারুশিল্প, মৃৎশিল্প। এসব কুটির শিল্প শুধু সৌখিন হাতের কারুকাজই নয়, এগুলো যেন বাঙালির জীবনের গল্প বলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিপরীতে শিশু একাডেমির পাশে দোয়েল চত্বরে সারা বছরই চলে হস্তশিল্প মেলা। সারি সারি বাহারি কারুকাজের নানান হস্তশিল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। ছোট- বড় মাটির ফুলদানি, টব, ওয়ালমেট, কলমদানি, মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, ব্যাংক, প্লেট, বাটি, গ্লাস, চামচ, সহ দেওয়াল ও ঘর সজ্জার জিনিস মেলে এখানে। সামনে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মাটির হাড়ি কলসিতে চড়ছে নতুন রঙ। 

দোকানগুলোতে দেখা যায় পুরোদস্তুর বাঙ্গালিয়ানার ছাপ। মাটির তৈরি হরেক রকম জিনিস, পোড়ামাটির টেরাকোটার কাজ, কাঠের খোঁদায় করা বিভিন্ন কারুকার্য। শহুরে হস্তশিল্প প্রেমীদের জন্য সৌখিনতার রাজ্য যেন রাজধানীর দোয়েল চত্বর এলাকা। মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, বেত শিল্পের মেলবন্ধনে হস্তশিল্প প্রেমীরা তাই হারিয়ে যায় সৌখিনতার এ রাজ্যে।


দোয়েল চত্বরে মৃৎশিল্পের পাশাপাশি কাঠ, বেত, পাট, পিতল, ও কাঁসার তৈরি পণ্য গুলো ও আকর্ষণীয় করে ক্রেতাদের। কাঠের খোঁদায় করা গহনার বাক্স, টেবিল ল্যাম্প, ওয়ালম্যাট, পাটের তৈরি ব্যাগ, পুতুল শোপিস সহ কাঠের ও মাটির গহনা কিনতে দোয়েল চত্বর যান সৌখিন মানুষেরা। বাংলা নববর্ষে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি হয়।

ঢাকা গেট থেকে শিশু একাডেমির পথে যেতে ফুটপাত জুড়ে ৪০ টির অধিক দোকান রয়েছে। প্রায় ৩০ বছর আগে কয়েকটি দোকানে মাটির তৈরি নানা জিনিস দিয়ে বিক্রি শুরু হয় পরে তার সাথে যুক্ত হয় নানা হস্তশিল্পের বাহারি পন্য, চাহিদাও সময়ের  সাথে বাড়ে দোকানের সংখ্যাও। সাভার, পটুয়াখালী সহ নানা স্থানের কুমোরটুলি থেকে তারা এসব জিনিস নিয়ে এসে বিক্রি করেন। কুমোরটুলিতে চলে কুমোরের মাটির সাথে হাতের আর মনের খেলা। মাটির তাল বানিয়ে, চাক ঘুরিয়ে, হাতের আদলে তৈরি করে নানা রকম সৌখিন জিনিস। সেসব জিনিস স্থান পায় শহুরে বৈঠক খানার সৌন্দর্য বর্ধনে। আর শহরের মানুষ এসব জিনিস খুব সহজে পায় ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকায়।


প্রায় ২৫ বছর ধরে দোয়েল চত্বরে ব্যবসা করছেন গোলাম মৃৎশিল্পের স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম। তিনি বার্তা ২৪ কে বলেন, "অনেক বছর ধরেই এখানে ব্যাবসা করছি বছর পঁচিশেক হবে । দেশি-বিদেশি নানা পর্যটক সহ শহরের অনেক মানুষ আমাদের থেকে জিনিস নিয়ে যায়। শৌখিন মানুষ ঘর সাজাতে এদিক থেকে কিনে নিয়ে যায়। আমরা পটুয়াখালী থেকে মাটির জিনিস আনি। পহেলা বৈশাখের সময় এসব জিনিস বেশি বিক্রি হয়। তাছাড়া সারাবছরই চাহিদা থাকে। "

রেওয়ান হ্যান্ডি ক্রাফট থেকে শাহাদাত হোসেন জানান, " আমাদের এখানে বাঁশ, কাঠ বেত, পিতল, পাট ও মাটির সামগ্রী খুচরা, পাইকারি ভাবে বিক্রি হয়। ঘর সাজানোর জিনিসপত্র বেশি। মাটির ডিনারসেট, গহনা, পাটের ব্যাগও আছে। পহেলা বৈশাখ আসলে বিক্রি দিগুণ হয়। সাভার, পটুয়াখালী থেকে তৈরি জিনিস আসে এখানে আমরা আবার রংকরি, কাচ বসাই আরও সুন্দর করি, সারাবছর মাস প্রতি ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হয় প্রায় প্রত্যেক টা দোকানে। পহেলা বৈশাখের সময় মাটির পাত্রের চাহিদা বাড়ে। "

দোয়েল চত্বর থেকে ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে আসা শাহনেওয়াজ খানম জানান, " আমার বাসার মাটির বেশিরভাগ জিনিস এখান থেকে নেওয়া। ৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত জিনিস পাওয়া যায়। মাটির গহনা, কাঠের গহনা, টেরাকোটা সবই কম দামে পাওয়া যায়। "

বাঙালির লোক সাংস্কৃতির ঐতিহ্য গ্রাম ছাড়িয়ে শোভা পায় শহুরে জীবনের সৌখিনতায়। কারুশিল্প, মৃৎশিল্প ছাড়া ও কাঠ, বাঁশ, বেতের তৈরি বিভিন্ন হস্ত শিল্পের ঐতিহ্য বাংলার মানুষ আষ্টে পিষ্টে লালন করে তাদের যাপিত জীবনধারায়, সৌখিনতায় যার খোঁজে মানুষ যায় দোয়েল চত্বর সংলগ্ন হস্তশিল্প মেলায়।

;

বাঙালির চৈত্র সংক্রান্তি



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চৈত্র সংক্রান্তি / ছবি : সংগৃহীত

চৈত্র সংক্রান্তি / ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চৈত্র মাসের শেষ দিনে পালন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তি। বাঙালি ঐতিহ্যের অন্যতম উৎসব সংক্রান্তি। পুরাতনকে বিদায় দিয়ে জীর্ণতা দূর করার আনন্দ উৎসব এই সংক্রান্তি। চৈত্র মাসের শেষ দিনে সংক্রান্তি পালন করার মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হয় বাঙালিরা।

ঘরবাড়ি, পথঘাট সেজে ওঠে রঙিন আলপনায়। ধানের ছড়া, কলসি, ফুল, লতা-পাতা নানারকম নকশা ফুটে ওঠে আলপনায়। তার সাথে বাঘ, পেঁচা, পাখি নানারকম রঙিন মুখোশ তৈরি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং র‌্যালিতে নামে মানুষ।     

এছাড়াও খাওয়া দাওয়া আছেই! মুড়ি, মুরকি, নিমকি, বাতাসা, নকুলদানা, গুড় সহ নানারকম খাবারের আয়োজন করা হয় সংক্রান্তিতে।ৎ

চৈত্র সংক্রান্তি

বাঙালির উৎসব হলেও হিন্দু ধর্মানুসারীদের জন্য একটি ধর্মীয় উৎসবও বটে। লোকাচার অনুযায়ী এই দিনকে পুণ্য লাভের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই সংক্রান্তিতে নানারকম হিন্দুধর্মীয় রীতিও পালন করা হয়। নতুন বছর যেন ভালোভাবে কাটে এই প্রার্থনায় ব্রত করা হয়। তাছাড়া দান সেবাও করে তারা। সংক্রান্তির আগের দিন তারা নীল পূজা করে, যা মূলত শিব নীলকণ্ঠের উপাসনা। এছাড়া, সংক্রান্তির দিন শিবের গাজন পূজা করা হয়। অনেক স্থানে একে চড়ক পূজাও বলা হয়।  

সময় যত যাচ্ছে মানুষ তত আধুনিক হচ্ছে। তবে কেমন যেন এক গোড়ামি ধারণা মানবমনে ধারন করা হয়েছে যে, পশ্চিমা সংস্কৃতি মানেই আধুনিক! নিজস্ব সংস্কৃতির লালন পালনের মাধ্যমেও যে আধুনিকতা বহন করা যায় যা যেন সকলে ইচে্ছ করেই ভুলে যেতে চায়। আগে, বঙ্গগ্রামে প্রতিটি বাংলা মাসেই সংক্রান্তি পালন করা হতো। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই ঐতিহ্য বিলুপ্ত প্রায়। কোনো রকমে বেঁচে আছে বছরের দুই মাসের সংক্রান্তি। কনকনে শীতে পৌষ মাসের শেষ দিন পালন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি। অন্যদিকে বছরের শেষ মাস, চৈত্রের শেষেও বাঙালিরা চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন করে।     

;

‘আলোর স্কুল’ জামাল স্যারের স্বপ্নের পাঠাগার



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জামাল স্যারের পাঠাগার উদ্বোধন করছেন ড. মাহফুজ পারভেজ/ বার্তা২৪

জামাল স্যারের পাঠাগার উদ্বোধন করছেন ড. মাহফুজ পারভেজ/ বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বপ্ন শুরু হয়েছিল শৈশবে ফেনী শহরে। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রজীবনে। সর্বশেষে চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে পথ ও পন্থা খুঁজছিলেন তিনি। চেষ্টা করছিলেন তাদের মননশীলতার চর্চাকে উন্মুক্ত করতে। সেই কাজ করতে গিয়ে সরকারি চাকরি বা ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করেন নি। থেকে গেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই। তার আসল নাম কাজী জামালউদ্দিন বলে এখন কম লোকেই ডাকে। সবাই বলে জামাল স্যার, চট্টগ্রামের পাঁচশাইশের জামাল স্যার।

জামাল স্যার দিন-রাত এক করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গ দেন। তাদের দুর্বলতা কাটাতে চিন্তা-ভাবনা ও চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে দফায় দফায় বসেন মটিভেশনাল সেশানে। তারপর একজন ছাত্র বা ছাত্রী যখন শিক্ষাজীবনে সফলতার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তখন তার চোখের কোণে দেখা যায় আনন্দাশ্রু। আর পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীটির পরিবার জুড়ে বয়ে যায় খুশির হিল্লোল। ‘এমন পরিস্থিতি আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের সময়‘, বললেন জামাল স্যার।

‘সঠিক দিক-নির্দেশনা না পেয়ে অনেক সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী সফল হতে পারে না। তারা হতাশ ও জীবনবিমুখ হয়ে যায়। স্কুল ও বাবা-মা ব্যস্ততার কারণে তাদের সমস্যাগুলো দরদ ও মনোযোগ দিয়ে দেখার সময় ও সুযোগ পান না।  ফলে সম্ভাবনা থাকার পরেও অনেকেই সফল হয় না। আমি তাদের দুর্বলতা ও সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করি। সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করি,‘ জানালেন জামাল স্যার।

তিনি বলেন, ‘আমি গতানুগতিক কোচিং এ বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, প্রতিটি সিলেবাস ও পাঠ্যক্রমে কিছু অপূর্ণতা থাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কার্যকর সংযোগ হয় না। এই গ্যাপটি ধরিয়ে দিতে পারলেই সমস্যা পরিণত হবে সম্ভাবনায়।‘

বই উপহার পেলো শত শিক্ষার্থী/বার্তা২৪

জামাল স্যারের মতে, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থী একই রকমের সমস্যার সম্মুখীন হয় না। তাদের সমস্যা বহুমাত্রিক। আবার স্কুলগুলোর সমস্যাও নানামুখী। এগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে সংযোগ সাধন করা আমার কাজ।‘

তিনি জানান, ‘আমাদের স্কুলগুলো মূলত আধাদিনের। বাকী সময় শিক্ষার্থী থাকে মাঝিবিহীন নৌকার মতো। অভিভাবকরাও নিজের কাজের শেষে সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। এতে শিক্ষার্থীরা জীবনের মূল পথ খুঁজে পায় না। অথচ তাদেরকে সঠিক দিশা দেখানো হলে দেশের মানবসম্পদ বিকাশের কথ মসৃণ হবে। তাদের অন্যান্য সুপ্ত প্রতিভা এবং লাইফস্কিল ডেভেলপ করলে সে শুধু ভালো ছাত্রই হবে না, ভালো ও সফল মানুষ হবে।‘

এ কারণেই বিকল্প স্কুলের মতো একটি লাইব্রেরি গড়েছেন তিনি। শিশু-কিশোরদের উপযোগী বিষয়ভিত্তিক সমায়ক বই রয়েছে সেখানে। তার মতে, ‘ইন্টারনেটে অনেক ফেক ও অসম্পূর্ণ তথ্য থাকে। শুধু নেটে বসে হাজারো তথ্যের অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল চিন্তা ও মননশীল প্রচেষ্টার শক্তি হারাবে। এজন্য তাদেরকে বই ও পাঠাগার মুখী করতে হবে।“

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের পাশাপাশি নিজের জন্মস্থান ফেনী শহরেও জামাল স্যার শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। গড়ে তুলেছেন ভিন্নধর্মী, জীবনমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতি বিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাসে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন-এর সঙ্গে একযোগে শতাধিক শিক্ষার্থীকে বই উপহার দিয়েছেন তিনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ডা.সালাউদ্দীন ভবনে আনন্দমুখর পরিবেশে এই বই উপহার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে তার পাঠাগারের উদ্বোধন করা হয়।

চট্টগ্রামে সৃজনশীল পাঠদানের পথিকৃৎ জামাল স্যারের সভাপতিত্বে বই উৎসব ও পাঠাগার উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বার্তা২৪.কম‘র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামের প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন আরো অনেক শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক।

অনুষ্ঠানে ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, সভ্যতার আদি সূচনা থেকে আজকের অত্যাধুনিক জগত পর্যন্ত গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরির উপস্থিতি বিদ্যমান এবং মানব জাতির সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতি ও বিকাশের প্রতীক রূপে বিবেচিত। লাইব্রেরি-বিহীন সমাজের ঐতিহ্যগত শেকড়, সাংস্কৃতিক দ্যুতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি দুর্বল। প্রাচীন সভ্যতা থেকে আজকের পৃথিবীতে বিশেষায়িত ও সাধারণ গ্রন্থাগার যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে গণগ্রন্থাগার বা পাবলিক লাইব্রেরি, যা সভ্যতার চাকাকে সচল রেখেছে এবং মানব জাতির মেধার ভাণ্ডারকে প্রজন্মব্যাপী সম্প্রসারিত করে চলেছে। জামাল স্যারের স্বপ্নের পাঠাগার আসলে একটি ‘আলোর স্কুল‘।

;