ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী : ক্রিকেটজীবনের ভিতর-বাহির



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ক্রিকেটারদের বইয়ের প্রচ্ছদ

ক্রিকেটারদের বইয়ের প্রচ্ছদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে শুধু ক্রিকেট নিয়েই যে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কথা বা স্মৃতিচারণ থাকে তা না। মাঠের বাইরের বিভিন্ন বিচিত্র ও আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার-স্যাপার এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন বিষয়-আশয়ও উঠে আসে বইগুলোতে। যা পড়ে পাঠকেরা চমৎকৃত হন। অনেক কিছু জানতে পারেন প্রিয় ক্রিকেটার সম্পর্কে। যেমন, পাকিস্তানী ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি যে খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ-পাঁচটি বছর কমিয়ে নিয়েছিলেন, অথবা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার মঈন আলীকে যে অস্ট্রেলিয়ার এক খেলোয়াড় স্লেজিং করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন, এরকম কিছু চমকপ্রদ তথ্য হয়তো কেবল ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীতেই পাওয়া যেতে পারে। আবার, ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে পুনরায় যুবরাজ সিংয়ের ক্রিকেটে ফিরে আসার হৃদয়স্পর্শী কাহিনীর কথাই ধরুন না! সেই কাহিনী বিস্তারিত পাওয়া যাবে যুবরাজের আত্মজীবনীতেই।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363767974.jpg
ক্রিকেটারদের বর্ণিল জীবনের শৈল্পিক আখ্যান তাদের জীবনীগ্রন্থগুলো ◢

 

যখন ক্রিকেটার নিজেই নিজের ক্রিকেট ও ব্যক্তিজীবনের কাহিনীটা লেখেন, সেটাকে বলা হয় ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী। সেখানেও ক্রিকেটার কোনো লেখক বা ক্রীড়া সাংবাদিকের সাহায্য নিয়ে যৌথভাবে বইটি লিখতে পারেন। কিন্তু যখন অন্য কোনো লেখক একেবারে আলাদাভাবে একজন বরেণ্য ক্রিকেটারের জীবনকাহিনী পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন, যেখানে সাধারণত সেই নির্দিষ্টি ক্রিকেটারের সরাসরি কোনো সংস্রব বা ভূমিকা থাকে না, সেটাকে বলে ক্রিকেটারদের জীবনী। তবে, সেক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার যদি বেঁচে থাকেন, বইটি লিখতে বা বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচনে তাঁর অনুমতির দরকার হয়। সরাসরি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর সংখ্যাই বেশি। তবে, বেশ কিছু অসাধারণ জীবনীগ্রন্থ, যেমন সুনীল গাভাস্কারের ‘সানি ডেজ’ (১৯৭৭), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯) বা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে ‘মাশরাফি’র মতো দারুণ কিছু জীবনীগ্রন্থও আমরা পেয়েছি লেখকদের হাতে।

ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটিকে অগ্রপথিক ধরা হয়। ১৯৫১ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরের কোনো ক্রিকেটারের আত্মজীবনীগ্রন্থের লেখকও জিম লেকারই। ১৯৬০ সালে তিনি প্রকাশ করেন দ্বিতীয় আত্মজীবনী ‘ওভার টু মি।’ এরপর ৬০’র দশক ও ৭০’র দশকে অল্পবিস্তর প্রকাশিত হতে থাকে বেশ কিছু আত্মজীবনী। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারকে নিয়ে ‘সানি ডেজ’ এবং ১৯৮৩ সালে ইমরান খানের স্বনামে (ইমরান) তাঁর জীবনীগ্রন্থ বের হয়। তবে, নব্বইয়ের দশকে এসে, মানে ১৯৯০ সালের পর থেকে এধরনের আত্মজীবনী ও জীবনীগ্রন্থের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেক সাবেক ক্রিকেটার, এমনকি তখনও খেলছিলেন এমন কিছু ক্রিকেটারও এসময় তাঁদের আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।

এসময়ই প্রকাশিত হয় ব্রায়ান লারার ‘বিটিং দ্য ফিল্ড’ (১৯৯৫), ওয়াসিম আকরামের ‘ওয়াসিম’ (১৯৯৮), রিচি বেনোর ‘অ্যানিথিং বাট অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ (১৯৯৮), অ্যালান ডোনাল্ডের ‘হোয়াইট লাইটনিং’ (১৯৯৯)। ২০০০ সালের পরের সময়কালে এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকে আরো। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের ‘দ্য ডেফিনিটিভ অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), ইয়ান বোথামের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), শেন ওয়ার্নের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০২), ডেনিস লিলির ‘মিনেস : দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০৩), বাসিল ডি অলিভিয়েরার ‘ক্রিকেট অ্যান্ড কনস্পিরেসি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ (২০০৪), কপিল দেবের ‘স্ট্রেইট ফ্রম দ্য হার্ট’ (২০০৪), স্টিভ ওয়াহর ‘আউট অব মাই কমফোর্ট জোন’ (২০০৬), অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ (২০০৮), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯), শোয়েব আখতারের ‘কন্ট্রোভার্শিয়ালি ইয়োরস’ (২০১১), যুবরাজ সিংয়ের ‘দ্য টেস্ট অব মাই লাইফ : ফ্রম ক্রিকেট টু ক্যান্সার অ্যান্ড ব্যাক’ (২০১২), শচীন টেন্ডুলকারের ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’ (২০১৪), এবি ডি ভিলিয়ার্সের ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০১৬), সৌরভ গাঙ্গুলির ‘এ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ (২০১৮), ভিভিএস লক্ষ্মণের ‘টুএইটি ওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ (২০১৮)-এর মতো অসংখ্য আলোচিত ও পাঠকপ্রিয় জীবনী বা আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় এই সময়কালে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363833752.jpg
মাশরাফির বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’ ◢



বাংলাদেশের বরেণ্য ক্রিকেটারদের নিয়ে জীবনী বা আত্মজীবনী লেখার ইতিহাস যদিও অল্পদিনের, তবে ইতোমধ্যে টুকটাক করে এগোচ্ছে। কিন্তু কোনো ক্রিকেটারের সরাসরি আত্মজীবনী এখনো বের হয়নি। গুণী কিছু ক্রীড়া সাংবাদিক লিখতে শুরু করছেন ক্রিকেটারদের জীবনীগ্রন্থ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘মাশরাফি’ ও মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের ‘মানুষ মাশরাফি’। তবে, এধরনের বইয়ের সংখ্যা বাংলাদেশে এখনো অপ্রতুল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363940018.jpg
শহীদ আফ্রিদির বিতর্কিত আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ ◢

 

আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো দর্শক ও ভক্তদের সাথে ক্রিকেটারদের বন্ধনকে করে আরো জোরালো। ভক্তদের আরো কাছে নিয়ে আসে ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট জীবন এবং ব্যক্তিজীবন, একটা মানুষের দুটো জীবন যে হতে পারে একেবারে আলাদা, তা জানা যায় এই বইগুলোর মাধ্যমেই। কখনো কখনো আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো থেকে বেরিয়ে আসে এমন সব বিস্ফোরক তথ্য যা সৃষ্টি করে তুমুল বিতর্ক। এতে জড়িত হন আরো অনেকেই, পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সমসাময়িক অনেক ক্রিকেটাররাও। তেমন বিতর্কই সৃষ্টি হয়েছিল, সাবেক পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ প্রকাশের পর। বইটিতে ভারতীয় ওপেনার গৌতম গম্ভীরকে ব্যক্তিগত শত্রু হিসেবে তুলে ধরে ব্যক্তিত্বহীন আখ্যায়িত করেন আফ্রিদি। গম্ভীর প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে আফ্রিদি যেন সমালোচনার বন্যা বইয়ে দেন। গম্ভীরকে অসুস্থ মানসিকতার উল্লেখ করে ক্রিকেটের কলঙ্ক বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি। জবাবে, গৌতম গম্ভীরও পরে ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি টুইট করে বলেন, ‘আফ্রিদি, তুমি এত উচ্ছল মানুষ! সে যাক গে, আমরা চিকিৎসার জন্য এখনো পাকিস্তানিদের ভিসা অনুমোদন দিই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাব।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363989504.jpg
ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’ ◢



এরকমই বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ২০১৮-তে প্রকাশিত ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’। এতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। মঈন জানিয়েছেন ২০১৫ অ্যাশেজ সিরিজ চলাকালীন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার তাঁকে ‘ওসামা’ বলে ডেকেছিলেন। ৩১ বছর বয়সী ইংরেজ অরাউন্ডার জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া ওই অ্যাশেজ সিরিজ তাঁর জন্য খুবই ভালো গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ওই সিরিজে অত্যন্ত রাগিয়ে দিয়েছিল একটি দুঃখজনক ঘটনা। ক্রিকেট মাঠে তিনি কোনোদিন অতটা রেগে যাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। কার্ডিফে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে আট নম্বরে নেমে ব্যাটে গুরুত্বপূর্ণ ৭৭ রান যোগ করেছিলেন। সেই সঙ্গে বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন ৫টি উইকেট। কিন্তু মঈনের দাবি, ওই ম্যাচেই তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেন’-এর সাথে তুলনা করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার। শুনে চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল তার। পরে তিনি দলের কয়েকজনকে বিষয়টা জানিয়েওছিলেন। সেই কথা পৌঁছেছিল ইংল্যান্ডের কোচ ট্রেভর বেলিসের কানেও। বেলিস তা জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয় কোচ ডারেল লেম্যানকে।
লেম্যান ওই অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটারকে ডেকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিলেন। কিন্তু সে নাকি তখন তা অস্বীকার করে জানিয়েছিল, ‘ওসামা’ নয়, মঈনকে মাঠে তিনি ‘পার্টটাইমার’ বলেছিলেন। কিন্তু মঈন বলেন, ‘পার্টটাইমার’ আর ‘ওসামা’ এই কথাদুটি এতটাই আলাদা যে গুলিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব।

ঠিক তেমনি, অনেক রকম বিতর্ক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ইয়ান বোথাম, সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে অল্প ক’ বছর হলো সাবেক হওয়া শোয়েব আখতার ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের আত্মজীবনীও। তবে আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো শুধু যে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দেয়, তা নয়। এখানে উঠে আসে অনেক সুন্দর ও চমকপ্রদ তথ্য, যা না ইতোপূর্বে কখনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, আর না ক্রিকেটার নিজের মুখে বলেছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563364046993.jpg
সৌরভ গাঙ্গুলির আত্মজীবনী ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ ◢

 

যেমন, ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইতে সৌরভ তুলে ধরেছিলেন এক মজার তথ্য। তখনও ভারতের অধিনায়কত্ব করছিলেন সৌরভ। সেসময় দুর্গাপুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে সর্দার সাজতে হয়েছিল তাকে। মেকআপ আর্টিস্টকে বাড়িতে ডেকে ভদ্রস্থ ও বিশ্বাসযোগ্য লুক তৈরি করা হয়। পরে রাস্তায় বেরিয়ে বাবুঘাটে আসতেই পুলিশ আধিকারিক চিনে ফেলেন সৌরভকে। তবে তাঁর অনুরোধে বিষয়টি গোপনই রাখেন ওই পুলিশ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563364106152.jpg
ভিভিএস লক্ষ্মণের আত্মজীবনী ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ ◢



তেমনি, ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইতে ভারতের সাবেক সফল টেস্ট ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ তুলে ধরেছেন ব্যতিক্রমী এক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সালটা ছিল ২০০৮। ভারত সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। দিল্লিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টই ছিল লক্ষ্মণের শততম টেস্ট ম্যাচ। লক্ষ্মণ তাঁর বইতে জানিয়েছেন সেই টেস্ট শেষ হওয়ার পরই স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পর্যন্ত ভারতীয় দলের টিমবাস চালিয়েছিলেন ধোনি। লক্ষ্মণ লিখেছেন, ধোনিকে বাস চালাতে দেখেও তাঁর ঘটনাটা সত্যি বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ তখন তিনি ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন। অধিনায়ক টিম-বাস চালাচ্ছেন, এরকম ভাবনাটাই তার আগে কখনো কারো মাথায় আসেনি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মণ। তবে, লক্ষণ মনে করেন, ধোনি এরকমই। কে কী মনে করল, পাত্তা দেয় না। করে যায় নিজের কাজটাই!

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনী শুধু একজন ক্রিকেটারের জীবন নিয়েই নয়, কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে একটি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের কোনো একসময়ের দর্পণ। তা পড়ে বোঝা যায়, ওই দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও অবকাঠামোর অবস্থাও। তাই এধরনের একেকটা বই আক্ষরিক অর্থেই ‘ক্রিকেট জ্ঞানের আধার’। আর সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে বা সৃষ্টিশীল কাজ হিসেবেই কি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী বা জীবনীমূলক বইগুলো পিছিয়ে আছে? স্রেফ সেই সাত দশক আগে জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ অথবা সাম্প্রতিক অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ ও সৌরভ গাঙ্গুলির ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইগুলোর নামগুলোর দিকেই খেয়াল করুন না! বই পড়েন এবং ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা রাখেন, এমন সব মানুষের নজর সহজেই কেড়ে নেয় এই সৃষ্টিশীল নামগুলো। আর ভেতরের লেখার উপাদানও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক করা হয় অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বা অন্যান্য লেখকদের সাহায্য নিয়ে। তাই তো, শিল্পকর্ম হিসেবে সেগুলো ভালোই আকর্ষণ করে রস-অনুসন্ধানী ক্রিকেটামোদী পাঠকদের।

এই জীবনীগ্রন্থগুলো দারুণ সহায়ক ও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে আগামীদিনের ক্রিকেটারদের জন্য। দুঃসময় ও স্বাস্থ্যগত মহাসংকটকে অতিক্রম করে কিভাবে ক্রিকেটে ফেরা ও টিকে থাকা যায়, তা তারা জানতে পারবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও যুবরাজ সিংয়ের মতো ক্রিকেটারের জীবনী বা আত্মজীবনী পড়েই।

উল্লেখ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’র কথা। বইয়ে লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সত্যিকার বীর কারা, সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, সব সময় বলি, বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছেন। জীবন যাবে জেনেই ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কী করি? খুব বাজেভাবে বলি—টাকা নেই, পারফর্ম করি। অভিনেতা, গায়কের মতো আমরাও পারফর্মিং আর্ট করি। এরচেয়ে এক ইঞ্চি বেশিও কিছু না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এইজন্য দাঁড়ায় নাই যে জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েলরা। রকিবুল ভাই ব্যাটে জয় বাংলা লিখে খেলতে নেমেছিলেন, অনেক বড় কাজ। তার চেয়েও বড় কাজ, বাবার বন্দুক নিয়ে ফ্রন্টে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ জুয়েল ক্রিকেট রেখে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই হলো বীরত্ব। ফাস্ট বোলিং সামলানার মধ্যে রোমান্টিসিজম আছে, ডিউটি আছে; বীরত্ব নেই।’

একজন ক্রিকেটার হয়েও মাশরাফির জীবনবোধ যে অসাধারণ, অনন্য যে তার দেশপ্রেম, এই বিষয়টাই তো ফুটে উঠেছে মাশরাফির কথনে! ক্রিকেটারাও যে মানুষ, মানুষ হিসেবে তাদের অনেকেরই যে চমৎকার জীবনদর্শন রয়েছে, রয়েছে সুন্দর কিছু চিন্তা, সেসব এভাবেই অনেক সময় প্রকাশিত হয় তাঁদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে। তাই তো, এসব বই ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে আসে ভক্তদের আরো কাছে। বইগুলোর মাহাত্ম্য এখানেই!

 

আরো পড়ুন
সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ ফাইনালের সাক্ষী লর্ডস

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;