নেলসন ম্যান্ডেলা : সংগ্রামই যার জীবন



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
নেলসন ম্যান্ডেলা

নেলসন ম্যান্ডেলা

  • Font increase
  • Font Decrease

সংগ্রামী জীবন বলে যদি কোনো জীবনকে আখ্যায়িত করা যায় তবে সেখানে একজন ব্যক্তি অনায়াসেই জায়গা করে নেবেন। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলা। যিনি নিজের জীবনের ২৭টি বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছেন চার দেওয়ালের ভেতর। অপরাধ ছিল একটাই, মানুষের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলা। আর এই অপরাধের কারণেই তাকে বরণ করে নিতে হয়েছিল এক বন্দী জীবন। তিনি চাইলেই অবশ্য এরচেয়ে ভালো জীবন বেছে নিতে পারতেন। আপোস করে, একটু অন্যায়ের কাছে অনুগত হলে তাকে এমন জীবন কাটাতে হতো না। কিন্তু যার শরীরে ছিল ঐতিহ্যবাহী থেম্বু রাজবংশের রক্ত, সে মানুষ কেমন করে এমন সাধারণ জীবন যাপন করবেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা পরিচিত মাদিবা নামে। সেখানকার মানুষেরা তাকে আদর করে, সম্মান করে মাদিবা বলে ডাকে। মাদিবা শব্দের বাংলা হলো জাতির জনক। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, ম্যান্ডেলার হাতের ছাপ অবিকল আফ্রিকান মহাদেশের আকৃতির মতো! হ্যাঁ এটা একেবারে সত্যি ঘটনা কিন্তু! সুতরাং চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় এ লোকের জন্মই হয়েছিল মাদিবা হওয়ার জন্য, জাতির জনক হওয়ার জন্য।

একজন সাধারণ ম্যান্ডেলা থেকে মাদিবা হয়ে যাওয়ার এই পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। এর জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। যেই পথের প্রতিটা বাঁকে বাঁকেই ছিল কাঁটা বিছানো। এই পথ চলতে গিয়ে কোনো কাঁটা বিঁধেছে পায়ে, কোনোটা হাতে, আবার কোনোটা একদম হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে। কিন্তু নেতৃত্বের গুণাবলি যার রক্তে, সংগ্রাম করে নিজের জাতিকে রক্ষার ইতিহাস যার বংশে, সেই মানুষকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দেবে, এমন কাঁটা তখনও সৃষ্টি হয়নি। মেন্ডেলা তাই এসব কাঁটা একে একে সরিয়ে, ক্ষত বিক্ষত শরীর নিয়ে অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া একটা জাতিকে নিয়ে আসেন আলোর মশালের তলে।

জন্মগতভাবে কালো হওয়ার কারণে যাদেরকে সহ্য করতে হতো সীমাহীন অত্যাচার, মানুষ হয়েও যাদের কাটাতে হতো পশুর চেয়েও হীন জীবন, তাদের জন্য বিলিয়ে দিলিয়েছিলেন নিজের টগবগে যৌবন। এই ম্যান্ডেলাকে আদর করে, ভালোবেসে মাদিবা ডাকবে না তো কাকে ডাকবে বলুন?

১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের একটি সম্ভ্রান্ত গোত্র প্রধানের পরিবারে তার জন্ম। মা তার ডাক নাম রেখেছিলেন রোলিহলাহা, যার অর্থ যে ডাল ভেঙে ফেলে, অর্থাৎ দুষ্টু। এই দুষ্টু ছেলে বড় হয়ে একদিন একটা সমাজকে ভেঙে দেবে, তা হয়তো তার মাও ভাবেননি। বলতে গেলে সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম হয় তার। কিন্তু যার কপালে লেপা আছে সংগ্রামের তিলক, তার মুখে সোনার চামচ কি মানায়?

মাত্র নয় বছর বয়সে বাবা হারান ম্যান্ডেলা। নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করতে হয় তৎকালীন ঔপনিবেশিক সরকারের চক্ষুশূল হওয়ার কারণে। শুরু হয় সংগ্রামের জীবন। কিন্তু সেই জীবনকেও ম্যান্ডেলা জয় করতে থাকেন সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে। স্কুলে তাই এক শিক্ষিকা তার নামের আগে জুড়ে দেন নেলসন শব্দটি। সেই থেকে রোলিহলাহলা ডালিভুঙ্গা ম্যান্ডেলা হয়ে ওঠেন নেলসন ম্যান্ডেলা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/18/1563465245164.jpg
তরুণ ম্যান্ডেলা ◢

 

পড়াশোনায় তুমুল মেধাবী ম্যান্ডেলা সারা বিশ্বের কাছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজন্ম প্রতিবাদী ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে আজকে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার সেই প্রতিবাদী স্বভাবের শুরুটা শেশব কৈশোর থেকেই। ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সংগ্রামী জীবনের সঙ্গী টাম্বোর সাথে পরিচয় ঘটে তার। যার সাথে ম্যান্ডেলা সারা জীবন খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই ম্যান্ডেলা জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। প্রথম বর্ষেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের ডাকা আন্দোলনে অংশ নেন। ফলস্বরূপ বেরিয়ে যেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকে চলে যান জোহানসবার্গ। একটি খনিতে প্রহরীর কাজ নেন। পরবর্তীতে একটি আইনি সেবাদান প্রতিষ্ঠানের কেরানি হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময়েই তিনি তার স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এখানে তার সাথে পরিচয় হয় জো স্লাভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফাস্টের। পরবর্তী সময়ে এদেরকে নিয়েই তিনি তার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/18/1563465592154.jpg
যুবক বয়সে ম্যান্ডেলা ◢

 

আন্দোলনের শুরুতে ভারতের মহাত্মা গান্ধির 'অহিংস' মতকে গ্রহণ করেছিলেন ম্যান্ডেলা এবং তার সহযোগীরা। তাই তারা কাউকেই আঘাতের পক্ষপাতি ছিলেন না। এরই মাঝে ১৯৪৮ সালে ক্ষমতায় আসে আফ্রিকানদের দল ন্যাশনাল পার্টি। এই দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল। আর ম্যান্ডেলাও একই সময়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন এগিয়ে যায়। সংলাপ, শান্তি আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে জনমত তৈরির কাজ চলে। ১৯৫২ সালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু সেই শান্তি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বর্ণবাদী সরকার তাদের প্রতি মারমুখী আচরণ শুরু করে। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী নেতাকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পান।

মুক্তি পাবার পর আন্দোলন আরো বেগবান হয়। মানুষ তাদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করে। ১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলন রূপ নেয় সহিংস আন্দোলনে।

এসময় এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিস্ফল। ফলস্বরূপ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারা অহিংস আন্দোলনের পথ থেকে সরে এসে ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। ম্যান্ডেলা পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক নিরীহ লোককে প্রাণ হারাতে হয়েছে। আর এটিকে কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ম্যান্ডেলা ও তার দল এএনসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তারা ম্যান্ডেলার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

সহিংস আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ১৯৬২ সনের ৫ আগস্ট ৪০ বছর বয়সী ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করা হয়। যার ফলে তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় ২৭ টি বছর। তবে জেলে থেকেও ম্যান্ডেলা দমে যাননি। জেলে বসেই তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। 

জেলে থাকাকালীন তিনি প্রায় নানা সময়ে তার প্রিয়জনদের কাছে চিঠি লিখতেন। স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ অনেকের কাছেই চিঠি পাঠাতেন। জেলে থাকাকালীনই তার মা মারা যান। কিন্তু তাকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। নির্জন কারাগারে বসে তিনি লেখেন, “তোমাকে আর কোনোদিন দেখতে পাব না! ভাবতেই পারছি না।” এই ক্ষত মুছতে না মুছতেই তার এক ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি ম্যান্ডেলার একটি প্যান্ট পরেছিলেন। ম্যান্ডেলা লেখেন, “মৃত্যুর সময় আমার একটি প্যান্ট পরে ছিল সে। সেটা তার বড়ই হওয়ার কথা। তার যথেষ্ট কাপড়চোপড় থাকা সত্ত্বেও আমার কাপড় পরার কোনো কারণ ছিল না। তবু সে পরেছিল। এই যে আবেগ, এটাই আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে আমার অনুপস্থিতি, আমার কারাগারে থাকা, সন্তানদের ওপর কী মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছিল; তা আমার মনকে উত্তাল করে দিল।” এমনি দুঃখ কষ্টে তার জীবন কাটতে থাকে নির্জন অন্ধকারে। কিন্তু তবুও তার এ নিয়ে কোন অভিযোগ ছিল না। তিনি বলতেন, “যদি জেলে না যেতাম, তাহলে অনেক কিছু শেখা বাকি থাকত।”

কথায় আছে, আপনি হয়তো একজনকে মেরে ফেলতে পারবেন, কিন্তু তার আদর্শকে কখনো মেরে ফেলতে পারবেন না। এই কথাই যেন প্রতিফলিত ম্যান্ডলার জীবনে। ম্যান্ডেলা জেলে থাকাকালীনই ম্যান্ডেলার পক্ষে সারা বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি হতে থাকে। দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এরপরে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস তথা এএনসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালে ক্ষমতায় আসীন হন। যা ১৯৯৯ পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল। সেই সময় তিনি সারা বিশ্বের কাছে হয়েছিলেন সমাদৃত, সিক্ত হয়েছিলেন ভালোবাসায়। 

 

 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/18/1563466238205.jpg

বাংলাদেশে ম্যান্ডেলা ◢

 

আমরা অনেকেই জানিনা নেলসন ম্যান্ডেলা একবার আমাদের বাংলাদেশেই এসেছিলেন। সময়টা ১৯৯৭ সাল। মার্চের ২৬ তারিখ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী দিবস। আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশে এসেছেন। একই সময়ে এসেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ও তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান সুলেমান ডেমিরেলের মতো বিশ্বনেতা। বাংলাদেশে এসে তিনি এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নিজের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে তুলনা করে দুটি আন্দোলনকেই মানুষের মুক্তির আন্দোলন হিসেবে আখ্যা দেন। বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনার কথা বলছিলেন তিনি। বলেছিলেন, কিছু আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করলেই কিন্তু দেশটি পাল্টে যেতে পারে। এজন্য দরকার স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। নইলে দেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ, স্বচ্ছতা না থাকলে দায়বদ্ধতাও থাকবে না। তখন দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন শিক্ষা-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার কথাও।

আজকেও আমরা ম্যান্ডেলার কথাগুলোর যৌক্তিকতা গভীরভাবে উপলব্ধি করি। তার এই সামান্য কয়টি কথা থেকেই বোঝা যায় তিনি আসলে কত গভীর এবং কত বিচক্ষণ মাপের রাজনীতিবিদ ছিলেন।

বর্ণিল জীবনে তিনি দুইশ’র বেশি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার মধ্যে রয়েছেন নোবেল পুরস্কার ও ভারতরত্ন পুরস্কারের মতো বড় বড় সব অর্জন।

শেষ জীবনে এসে রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে। ২০১৩ সালের ৮ জুন তিনি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে প্রায় দুই মাস হাসপাতালে কাটান। ২১ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান সংগ্রামী।

নেলসন ম্যান্ডেলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কিভাবে মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান? উত্তরে বলেন তিনি বলেন, “আমি চাই আমার সম্পর্কে লোকে এমন কথাই বলুক যে, এখানে এমন এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে আছেন, যিনি পৃথিবীতে তার কর্তব্য সম্পাদন করেছেন।”

ম্যান্ডেলার এই ইচ্ছেটাও হয়তো পূরণ হয়েছে আজ।

   

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;