ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির যুগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ



সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ভিএআর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ভিএআর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয়ার্ধ্ব শেষে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিট। ৪-৪ অ্যাগ্রিগ্রেটেড স্কোরলাইনের ম্যাচে অ্যাওয়ে গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভাব রাহিম স্টার্লিংয়ের। সার্জিও আগুয়েরোর মাপা পাস জালে জড়িয়েই ভোঁ-দৌড়ে পৌঁছালেন কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে। তবে ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারল না তার দল। প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করল আগুয়েরোর অফসাইড, তাতে শেষ চারে পা রাখল টটেনহাম হটস্পার।

গেল মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে এই প্রযুক্তির বিতর্কিত প্রয়োগ দুই-দুইবার কপাল পুড়িয়েছে তারকায় ঠাসা ক্লাব ম্যানসিটির। বলা হচ্ছে বর্তমান সময়ের আলোচিত-সমালোচিত ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর নিয়ে—মাঠে রেফারিদের ভুল বা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এড়াতেই যার আবিষ্কার এবং ব্যবহার।

ন্যূনতম হস্তক্ষেপ, সর্বোচ্চ কল্যাণ’—এই মূলমন্ত্রে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভিএআর-সংক্রান্ত চূড়ান্ত আইন পাশ হয় ২০১৮ সালে। গোল সিদ্ধান্ত, পেনাল্টি সিদ্ধান্ত, সরাসরি লাল কার্ড, ভুল খেলোয়াড়ের ওপর চাপানো সিদ্ধান্ত বদল—ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেবার মতো এই চারটি ঘটনা পুনর্বিবেচনায় সাহায্য নেওয়া হয় ভিএআরের। ভিডিও অপারেশন রুমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ রেফারিদের সমন্বয়ে গড়া ভিএআর টিম মাঠে দায়িত্বরত রেফারির নেওয়া পুনর্বিবেচনাযোগ্য প্রতিটি সিদ্ধান্তই পর্যবেক্ষণ করতে থাকে, আর তাতে কোনো ভুল শনাক্ত না হলে নিজের ইয়ারফোনে সেটি জানতে পারেন ম্যাচ রেফারি। এই ‘সাইলেন্ট চেক’ খেলা চলাকালীন সময়ের কোনো বিলম্ব ঘটায় না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231324737.jpg

◤ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় ভিএআর টিমের সাথে যোগাযোগ করেন মূল রেফারি ◢

 

অন্যদিকে ভিএআর-এর হস্তক্ষেপে সময়ক্ষেপণ হয় তখনই, যখন মাঠের সিদ্ধান্তের যথার্থতা সরাসরি বিচারে ব্যর্থ হয় ভিএআর টিম। এসময় মূল রেফারি নিজ কানের দিকে ইঙ্গিত করে জানান দেন চলমান পর্যালোচনার বিষয়টি।

তবে অফসাইড সিদ্ধান্ত অথবা ডি-বক্সের ভেতরের/বাহিরের ফাউল সংক্রান্ত বিষয়গুলো যেমন ভিএআর দ্বারাই নিস্পত্তি সম্ভব, তেমনিভাবে একটি প্রাথমিক ফাউল কল বা লাল কার্ড প্রদর্শনের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত রায়ের ভার বর্তায় মূল রেফারিরই ওপর। মোটকথা, সব অবস্থাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানে ভিএআর টিমের পরামর্শ অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা রাখেন মূল রেফারি।

এই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে। প্রতিটি ম্যাচে, প্রতিটি ভেন্যুতে এই যুগান্তকারী পদ্ধতির পূর্ণ ব্যবহার দেখা যায়নি আগের কোনো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের সর্বমোট ৩৩৫টি ঘটনায় নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যবহৃত হয় ভিএআর, ম্যাচপ্রতি গড়ে যার দরকার পড়ে প্রায় ৭ বার। এরমধ্যে মূল রেফারির নেওয়া সিদ্ধান্তে বদল এসেছে মোট ১৪ বার।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231412600.png
◤ জার্মানি-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার ম্যাচে ভিএআর নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়ার ২য় গোলটি ◢

 

তবে সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় কম তোলেনি ভিএআর। প্রযুক্তিগত নানা ক্রুটির পাশাপাশি ম্যাচের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোয় এর যথাযথ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিয়েও বেশ প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর মতে, স্পষ্টতা ও ধারাবাহিকতার অভাবই এখন পর্যন্ত ভিএআর-এর মূল দুর্বলতার জায়গা। প্রায় একই ধরনের ঘটনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভিন্নতা ভিএআর-এর ব্যবহারকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি স্বচ্ছতার অভাবও ভোগাচ্ছে দলগুলোকে। ভিএআর টিম ও মূল রেফারির মধ্যকার কথোপকথন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার মতো নানা সুপারিশ প্রত্যাখান করেছে ফিফা রেফারি কমিটি। এক ঝটকায় পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া পেনাল্টি সিদ্ধান্ত কিংবা বারবার স্বাভাবিক ছন্দে বাধাসৃষ্টি ও সময়ক্ষেপণ ম্যাচের সৌন্দর্য ব্যহত করছে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান পণ্ডিত ও বোদ্ধারা।

ক্লাব পর্যায়ে দুই ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট ও সর্বমোট আঠারটি ঘরোয়া লিগে আরো আগেই পা রেখেছে ভিএআর। প্রথমবারের মতো এই মৌসুমে আলোচিত প্রযুক্তিটির আগমন ঘটছে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লীগে। ‘গোললাইন টেকনোলোজি’র পর ভিএআরই হতে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত সংযোজন। লিগের প্রধান কার্যনির্বাহী রিচার্ড মাস্টার্সের মতে, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও বিতর্কের সম্ভাবনা মেনে নিয়েই এর ব্যবহারে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত আছেন তারা। সময়ক্ষেপণের মাত্রা কমানোই এই মুহূর্তে মাস্টার্সের মূল লক্ষ্য। এরপরই প্রাধান্য পাচ্ছে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231471639.jpg

◤ স্টার্লিং-আগুয়েরোর বাঁধভাঙ্গা উদযাপন থামিয়ে দেওয়া সেই অফসাইড সিদ্ধান্ত ◢

 

সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণকালে মূল রেফারি ও ভিএআর টিমের কথোপকথন ও পদক্ষেপ প্রদর্শিত হবে মাঠের বড় পর্দায়। এক্ষেত্রে পর্দাহীন দুই ভেন্যু ওল্ড ট্রাফোর্ড এবং অ্যানফিল্ডে ব্যবহৃত হবে স্কোরবোর্ড ও পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট (পিএ)। এছাড়াও সময়ক্ষেপণ ঠেকাতে পর্যবেক্ষণযোগ্য বিষয়গুলোর সর্বোচ্চ একটি মান নির্ধারণের নির্দেশ পেয়েছেন রেফারিরা, যাতে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত তারা যেন ঘন ঘন পিচ-সাইড রিভিউ থেকে বিরত থাকেন এবং খেলার স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখেন।

তবে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিএআর-এর স্বাভাবিক ব্যবহারে আসছে পরিবর্তন। অফসাইড পর্যবেক্ষণে প্রিমিয়ার লিগের টিভি রিপ্লে-তে এতদিন ব্যবহার হয়ে আসা থ্রি-ডি লাইনের সাহায্য এখন ভিএআর টিমও নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ক্যামেরার সাহায্য নিয়েও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া না গেলে মাঠে দায়িত্বরত রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231609215.jpg
◤ এভারটনের গুডিসন পার্কের বড় পর্দায় ভিএআর বার্তা ◢

 

অন্যান্য টুর্নামেন্টগুলোয় সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দেওয়া পেনাল্টি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা রাখছে প্রিমিয়ার লিগ। ফুটবলের নতুন রুলবুক অনুযায়ী পেনাল্টি কিকের সময় গোলরক্ষকের নিজ লাইনের বাইরে বিন্দুমাত্র নড়াচড়ায় পুনরায় পেনাল্টি কিক হবার বিধান থাকলেও প্রিমিয়ার লিগ বলছে, ‘চোখে পড়ার মতো’ নড়াচড়া ছাড়া একজন গোলরক্ষকের স্বাভাবিক পেনাল্টি সেভ তারা বাতিল করবে না।

শুধু মাঠের খেলোয়াড়েরাই নন, ভিএআর-এর ব্যবহারে দর্শকরাও প্রভাবিত হবেন ব্যাপকভাবে। স্পষ্টতই ভাটা পড়বে গোল-পরবর্তী বাঁধভাঙ্গা উদযাপনে, যেখানে পরোক্ষভাবে জায়গা নেবে ভিএআর রিভিউ-এ গোলটাই বাতিল হবার শঙ্কা। এছাড়া রেফারির প্রত্যক্ষ অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলোর পুনর্বিবেচনা বড়পর্দায় দেখা গেলেও গোল অনুমোদন/বাতিলের ক্ষেত্রে সেই পর্যালোচনা চলবে সমর্থকদের অজান্তেই।

এর পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ভিএআর চেকের আহ্বানে হলুদ কার্ড প্রাপ্তির বিধান থাকছে খেলোয়াড়-ম্যানেজার উভয়ের জন্য। রেফারির স্বাভাবিক যোগাযোগ কর্মকাণ্ড ও পর্যবেক্ষণ ব্যাহত করলে যা রূপ নিতে পারে লাল কার্ডের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231674894.jpg
◤ দুই মৌসুম আগে এফএ কাপে নরউইচের বিপক্ষে বহিষ্কৃত হন চেলসির আলভারো মোরাতা ◢

 

এসব কিছু বিশ্লেষণে বলা যায়, ভিএআর-এর আগমনে এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগে মোট গোলসংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনাই জোরালো। তবে এর সদ্ব্যবহারে লিগ আসলেই প্রস্তুত কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সাবেক ও বর্তমান নানা ফুটবল তারকা। ভিএআর-এর ব্যবহার ভুলক্রুটির পাল্লা আরো ভারী করবে বলেই মনে করছেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইংল্যান্ড ফুলব্যাক পল পার্কার। চেলসি উইংব্যাক মার্কোস আলোনসোর কাছে যেমন বিভ্রান্তির আরেক নাম এই ভিএআর। একইভাবে বোর্নমাউথের ক্যালাম উইলসন মনে করেন, প্রিমিয়ার লিগের সবটুকু বিনোদনে জল ঢেলে দেবে এই প্রযুক্তি। পেপ গার্দিওলা, মাউরিসিও পচেত্তিনোরা ভিএআর নিয়ে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করলেও এর অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্যান্য অনেক কোচ। তবে ভিএআরকে খেলাটির স্বাভাবিক একটি অংশ হিসেবে মনে করতে হলে যে আরো অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন, সে কথা বলাই বাহুল্য।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;