এস এম সুলতান : আবহমান বাংলার বৈশ্বিক ভবঘুরে



মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
নড়াইলে নিজ বাড়িতে ছবি আঁকছেন সুলতান

নড়াইলে নিজ বাড়িতে ছবি আঁকছেন সুলতান

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনি ছিলেন এক আশ্চর্য চিত্রকর, তাঁর তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠত আবহমান বাংলার প্রতিচ্ছবি। যার সমগ্র জীবন ও যাপনে ছিল এক আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া। যার ছিল নিজস্ব ধরন, গড়ন এবং দর্শন। যার চিন্তার জগতের পুরোটুকু জুড়ে ছিল গ্রামীণবাংলা এবং বাংলার দরিদ্র ও নিপীড়িত কৃষক সমাজ। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আমাদের লাল মিয়া। যার ভালো নাম, শেখ মোহাম্মদ সুলতান। পরবর্তীতকালে যিনি শিল্পী এস এম সুলতান নামে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।

১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাসিমদিয়ায় এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে সুলতানের জন্ম। বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলীর মূল পেশা কৃষিকাজ হলেও, বাড়তি রোজগারের জন্য তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজও করতেন। সামর্থ্য ছিল না, তবুও ১৯২৮ সালে বাবা মেসের আলী তাঁকে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু স্কুলের বাঁধাধরা গণ্ডিবদ্ধ জীবন তাঁর ভালো লাগেনি। ক্লাস ছেড়ে তিনি চলে যেতেন তাঁর প্রিয় চিত্রা নদীর পাড়ে, ব্যস্ত হয়ে পড়তেন আঁকাআঁকিতে। ক্লাসে থাকাকালীনও তিনি একই কাজ করতেন। স্কুলের শিক্ষক রঙ্গলাল ব্যাপারটি সর্বপ্রথম খেয়াল করেন, টের পেলেন সুলতানের ভেতরে বাস করছে এক অদম্য শিল্পীসত্তা। তিনি সুলতানকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান এবং তাঁকে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে শিক্ষাদান করেন।

রঙ্গলালের মেয়ে অরোরার সাথে সুলতানের প্রেম হয়ে যায়। যদিও রঙ্গলাল তাদের সে সম্পর্ক মেনে নেননি। উপরন্তু অরোরার বিয়ে দিয়ে দেন। অরোরার বিয়ে হয়ে গেলে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন এবং সাথে করে নিয়ে আসেন অরোরার নিজ হাতে বানানো কাঁথা। এ পর্যায়ে মাত্র ৫ বছর স্কুলে অধ্যয়নের পর স্কুল ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসার পর তিনি বাবার সহকারী হিসেবে রাজমিস্ত্রীর কাজে যোগ দেন। এসময় বাবার বানানো বিভিন্ন ঘর বাড়ির নকশা দেখে তিনি প্রভাবিত হন এবং তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছবি আঁকা শুরু করেন। বলা যায় তাঁর ছবি আঁকার হাতেখড়ি বাবার কাছ থেকেই।

সুলতানের বাল্যবয়সের চরিত্র-গঠন সম্বন্ধে আহমদ ছফা লিখেছেন—
“কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বাভাবিক আকুতি। শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের বরে অভিশপ্তও।”

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565442027565.png
◤ এস এম সুলতান ও আহমদ ছফা ◢


এদিকে তিনি যখন স্কুলে পড়েন, তখন আশুতোষ মুখার্জির ছেলে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে এলে ১০ বছর বয়সী সুলতান তাঁর একটা পেন্সিল স্কেচ এঁকে তাঁকে তাক লাগিয়ে দেন এবং এই পেন্সিল স্কেচের মধ্যদিয়েই শিল্পী হিসেবে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।

সুলতানের ইচ্ছে ছিল ছবি আঁকা শিখবেন, ছবি আঁকা শেখার জন্য কলকাতা যেতেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু কলকাতায় পড়তে যাওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি তার পরিবারের কখনোই ছিল না। তখন ১৯৩৮ সালে নড়াইলের জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সুলতানকে কলকাতা নিয়ে যান। তিনি ধীরেন্দ্রনাথের সহযোগিতায় কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তিপরীক্ষা দেন এবং তাতে প্রথম হন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার অভাবের জন্য তিনি কলেজে ভর্তি হতে পারছিলেন না। এসময় তৎকালীন প্রখ্যাত শিল্পসমালোচক ও কলকাতা আর্ট কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, শিল্পাচার্য শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে সুলতান কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। সোহরাওয়ার্দী সুলতানকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। তার অসাধারণ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সবসময় উন্মুক্ত ছিল। এরপর প্রায় তিন বছর ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাসায় থেকে সুলতান লেখাপড়া চালিয়ে যান।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565442496741.jpg
◤ শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন এস এম সুলতানের একজন পৃষ্ঠপোষক 


কিন্তু তিন বছর সেখানে পড়াশোনা করার পর সুলতান যখন শেষবর্ষে তখন তিনি আর্ট কলেজ ত্যাগ করে ভারত ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার রীতিনীতি তিনি কখনোই মেনে নিতে পারেননি। তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী, তাঁর জন্মই হয়েছিল মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়ানোর জন্য। তাই তিনি বারংবার অস্বীকার করেছিলেন বাঁধাধরা, শ্বাসরুদ্ধকর নাগরিক জীবনকে। তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন মাটির কাছে, প্রকৃতির কোলে, মানুষের মাঝে।

কলকাতার নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে ১৯৪৩ সালে তিনি যোগ দেন খাকসার আন্দোলনে। তারপর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিনি বেড়িয়ে পড়েন উপমহাদেশের পথে পথে। শহর বন্দরে ঘুরে ঘুরে তিনি তখন ইংরেজ ও আমেরিকান সৈন্যদের ছবি আঁকতেন। সেসব ছবি বিক্রি করে চলত তাঁর জীবন। এরপর তিনি কাশ্মীরে এসে কিছুকাল থিতু হন, বসবাস করতে শুরু করেন সেখানকার এক আদিবাসী দলের সাথে।

কাশ্মীরে থাকাকালীন তিনি প্রচুর ছবি এঁকেছিলেন। শিল্পী হিসেবে তিনি তখন কিছুটা পরিচিতিও লাভ করেছিলেন। সে সময় তিনি নৈসর্গিক দৃশ্য ও প্রতিকৃতির ছবি আঁকতেন। সিমলায় কানাডার এক নারী মিসেস হাডসনের সহযোগিতায় ১৯৪৬ সালে তাঁর আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়। কিন্তু জাগতিক বিষয়ের প্রতি ছিল তাঁর নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি। তাইতো শিকড় ছড়াবার আগেই তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।

তারপর তিনি কাশ্মীর ছেড়ে রওনা হন পাকিস্তানের লাহোর অভিমুখে। ১৯৪৭ সালে সেখানে তাঁর ছবির একক প্রদর্শনী হয়। ১৯৪৮ সালে লাহোর থেকে চলে যান করাচিতে এবং সেখানে তুমুল খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানের সরকারি প্রতিনিধি হয়ে আন্তর্জাতিক শিল্পী সম্মেলনে যোগ দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এক প্রদর্শনীতে পিকাসো, সালভাদর দালির মতো শিল্পীর সাথে প্রদর্শিত হয় তাঁর ছবি। পরবর্তীতে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো, বোস্টন ও পরে লন্ডনে তাঁর ছবির একক প্রদর্শনী করেন। দেশ বিভাগের পর কিছু দিনের জন্য সুলতান দেশে ফিরলেও এর এক বছর পর ১৯৫১ সালে তিনি করাচি চলে যান। সেখানে এক পারসি স্কুলে দু বছর শিক্ষকতা করেন। সে সময় চুঘতাই ও শাকের আলীর মতো শিল্পীদের সাথে তাঁর পরিচয় হয়।

এভাবে দেশে বিদেশে প্রায় ২০টি প্রদর্শনী শেষ করে ১৯৫৩ সালে তিনি নড়াইলে ফিরে আসেন এবং শিশুশিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। নড়াইলে তিনি নন্দন কানন নামের একটি প্রাইমারি ও একটি হাইস্কুল এবং একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শিশুদের জন্য কিছু করার আগ্রহ থেকে শেষবয়সে তিনি ‘শিশুস্বর্গ’ ও ‘চারুপীঠ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিশুদেরকে শেখাতে হলে আগে তাদের বন্ধু হতে হবে; হয়েছেনও তাই। তিনি শিশুশিক্ষা সম্বন্ধে বলেছেন, তিনি ওদেরকে কিছু শেখান না। শুধু দেখেন, বাংলাদেশের কোন গাছের পাতাটা কেমন, তা আঁকতে যেন শিশুরা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

জীবন যখন তাঁর হাতের মুঠোয়, খ্যাতি যখন তাঁর পদতলে; তখন তিনি বেছে নেন লোকালয়ের সংশ্রব-বিবর্জিত এক বন্য জীবন, ঠাঁই নেন এক পরিত্যক্ত ভাঙা মন্দিরে। যেটা কোনো মানুষ নয়, সাপ-খোপেদের আখড়া। তাঁর বাড়িতে আরো ছিল হাঁস-মুরগি এবং ২২টি বেড়াল। আশৈশব যাযাবর চিরকুমার এই শিল্পী কোনো সাংসারিক মায়ায় জড়াননি। কিন্তু ১৯৫৩ সালে গ্রামে ফেরার পর ১৯৫৪ সালে এক দরিদ্র হিন্দু পরিবারের সাথে তিনি মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়েন। এক নিম্নবর্ণের বিধবা হিন্দু মহিলা ও ২ বিধবা কন্যা আত্মীয় পরিজনহীন এই শিল্পীকে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন থেকে ফিরিয়ে আনেন। তাদের অপরিসীম মমতা তাঁর ভেতর এক দায়িত্ববোধের জন্ম দেয়। তারপর থেকে আমৃত্যু তিনি রয়ে যান এই পরিবারের সঙ্গে।

৫০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় আধুনিক চিত্রকলা নিয়ে প্রচুর কাজ হয়। সেসময় শিল্পীরা বিভিন্ন কৌশল-রীতি, নিয়ম ও ছবির মাধ্যমসহ নতুন নতুন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তিনি রয়ে যান সকলের অলক্ষ্যে, নড়াইলেই। তিনি দলছুট হয়ে নড়াইলের ওই জীর্ণ ভাঙা ভুতুড়ে বাড়িতে বসে ছবি আঁকতেন নিজের তৈরি করা ক্যানভাস এবং রঙ দিয়ে। তিনি বলেছিলেন, “একটা বিদেশি ক্যানভাসের দাম ৪০০-৬০০ টাকা যা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ, কষ্টসাপেক্ষ। ওর চাইতে ভালো পাটের চটে আঁকা।” তাই তিনি পাটের চটকে ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করতেন। চটকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য জেলেরা তাদের জালে যেমন করে গাবের নির্যাস ব্যবহার করে, তিনিও তাদের মতো করে পাটের চটে গাবের নির্যাস ব্যবহার করতেন।

তাঁর জীবনের মূল সুরটি ছিল গ্রামীণ জীবন, কৃষক ও কৃষিকাজের ছন্দের সঙ্গে বাঁধা। তাঁর প্রেরণার উৎস ছিল এই সহজ-সরল গ্রামীণ জীবন। তাঁর মতো এত গভীরভবে, নিবিড়ভাবে, সমগ্র জীবন দিয়ে বাংলার কৃষকদেরকে কোনো শিল্পী অনুভব করেছিলেন কিনা; বলা মুশকিল। তাঁর ভাষায়, “আমাদের কৃষকদের জীবণধারণ খুব সাধারণ, তারা অল্পাহারী। তারা খুব কষ্টের মাঝে থেকে ফসল ফলায়। তাদের খুব ভালোভাবে থাকবার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা হাই স্ট্যান্ডার্ড অব লিভিং নিয়ে ভাবে না। তারা যেন শুধুমাত্র উৎপন্ন করে যাওয়ার ব্রতে ব্রতী।” যারা আমাদের জন্য নিরলসভাবে ফসল ফলায়, তারাই অনাহারে দিন কাটায়; এই নির্মম পরিহাস তিনি যেন মেনে নিতে পারেননি।

তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন আমাদের রাজনৈতিক চক্রব্যুহকেও। আমরা রাজনৈতিক স্বার্থে কৃষকদের দীনতা, অভাব নানাভাবে ওদের সামনে তুলে ধরি। আমরা কৃষকদেরকে মোটা ভাত, মোটা কাপড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিই। আমরা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলি। কিন্তু শিল্পী মনে করেন, “এসব আমরা আমাদের লিবারেশনের পূর্বেও বলেছি, এখনো বলছি। তাতে ওদের কিছু এসে যায় না। কে ওদের ভালো করবে, ভালো রাখবে, এসবে কোনো উৎসাহ নেই ওদের।”

তিনি তাঁর ছবিতে নারী ও পুরুষকে সমানভাবে দেখিয়েছেন। সে হোক ঘরে কিংবা বাইরে। তিনি কৃষক পুরুষকে দিয়েছেন পেশিবহুল ও বলশালী দেহ এবং কৃষক রমণীকে দিয়েছেন সুঠাম ও সুডৌল গড়ন, দিয়েছেন লাবণ্য ও শক্তি। আপাত দৃষ্টিতে দুর্বল দেহী, মৃয়মাণ ও শোষণের শিকার কৃষকদেরকে তিনি দেখতেন শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান কৃষক সমাজ হিসেবে। তাঁর আঁকা ছবি ছিল প্রাণশক্তিতে ভরপুর। কারণ বাংলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষক।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565443247651.jpg
◤ সুলতানের পেশিবহুল কৃষকেরা ◢


কৃষকদের এমন বলশালী পেশি আঁকা সম্বন্ধে তিনি তারেক মাসুদের আদম সুরতে বলেছেন, “অদ্ভুত এক প্রহসন চলছে কৃষকদের নিয়ে। এটা বেশ লাগে ভালো। এদেরকে যত বেশি নীপিড়ন করা হয়, আমি তত বেশি তাদের পেশি বড় করি, মজবুত করি। তোমরা মোটে ভয় পাবে না, তোমরা টিকে থাকবে, তোমরা এ মাটির প্রকৃত অধিকারী। মাটির সাথে সম্পর্ক তোমাদের, ওদের নয় যারা তোমাদেরকে উপহাস করে।”

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/10/1565443303968.jpg
◤ সুলতানের পেশিবহুল কৃষকেরা ◢


তারেক মাসুদ যখন তাঁর কাছে তাঁর ওপর ছবি বানানোর প্রস্তাব নিয়ে যান, তখনও তিনি কৃষকদের কথা ভেবেছেন। বলেছেন, “ছবি নির্মাণ হবে, কিন্তু ছবি আমার ওপর হবে না। হবে বাংলার কৃষকদের ওপর। এখানে আমি ক্যাটালিস্ট, প্রোটাগনিস্ট না।”

তাঁর ৪০ দশকের প্রায় সব কাজ তৈলচিত্র। এই দশকের গোড়ার দিকের কাজে একাধিক অংকনরীতি লক্ষ্যণীয় হলেও শেষের দিকে যখন তিনি কাশ্মীরের আদিবাসীদের সাথে বাস করতে শুরু করেন তখন তাঁর কাজে ভ্যানগগের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ৫০ দশকের গোড়ার দিকে তৈলচিত্র থেকে সরে এসে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে মনোনিবেশ করেন। কখনো চারকোল, কখনো প্যাস্টেল, কখনো কালিকলম আবার কখনো স্প্যাচুলা টেকনিক। ৫০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অজস্র জলরঙ ছবি তিনি বিরতিহীনভাবে এঁকে যান। তাঁর ছবি আঁকার মূল বিষয় ছিল প্রকৃতি ও তার সৌন্দর্য। পরবর্তীকালে তিনি প্রকৃতির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করেন। যেমন পাতা, গাছের শেকড়, মেঘমালা ইত্যাদি।

তাঁর প্রথমদিককার ছবিতে সেভাবে মানুষের উপস্থিতি না থাকলেও পরবর্তী সময়ে তাঁর ছবির প্রধান উপজীব্য বিষয় হয়ে ওঠে মানুষ। ধীরে ধীরে তিনি গ্রামীণ মানুষের কথা, কৃষকদের কথা বলতে থাকেন তাঁর তুলির মধ্যদিয়ে। কিন্তু ৬০ দশকের শেষের দিকে ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সামাজিক জাগরণ তাঁকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে। তারপর আমরা দেখতে পাই ভিন্ন এক সুলতানকে। তাঁর আঁকা হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) হলো এর অনন্য উদাহরণ।

১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতান সবার আড়ালে থাকলেও সত্তরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর কিছু ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ী তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় আঁকা তাঁর কিছু ছবি দিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর পর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মূলত এ প্রদর্শনীটিই তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। এ ছবিগুলিই তাঁকে নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রতিনিধি ও তাদের নন্দন চিন্তার রূপকার হিসেবে পরিচিত করে। তাঁর ছবিতে কৃষকই হচ্ছে জীবনের প্রতিনিধি এবং গ্রাম হচ্ছে বিশ্বের কেন্দ্র।

অবয়ব বা আকৃতিধর্মিতাই তাঁর কাজের প্রধান দিক। তিনি আধুনিক ও নিরবয়ব শিল্পের চর্চা করেননি। মডার্ন অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, “জনসাধারণের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই। ভাববিলাস ছাড়া এ বিশেষ কিছু না। তারা অ্যাবস্ট্রাক্ট আঁকে, কিন্তু মানুষ তা বুঝতে পারে না। জিজ্ঞেস করে যে এটা কী এঁকেছেন? যদিও এর ডেকরেটিভ ভ্যালু আছে কিন্তু আমার চোখে তা প্রাধান্য না, কারণ সাধারণ মানুষের তা বুঝতে কষ্ট হয়।”

সুলতান নির্দিষ্ট কোনো নিয়মের প্রতি গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে। তাঁর ছবিতে কোনো দালান-কোঠা নেই। রয়েছে বাঁশ আর খড়ের ঘর। মজার বিষয় হলো, তাঁর ছবিতে মাটি, খড় এবং মানুষের গায়ের রঙ যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। আর্থ কালার অর্থাৎ ব্রাউন কালার ডমিনেট করে তাঁর ছবিতে। তাঁর মতো মাটির কাছাকাছি জীবন তাঁর সময়ে আর কোনো শিল্পী যাপন করেননি। তাঁর অজস্র ছবি রোদে পুড়ে, ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেদিকে তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না, এই নির্মোহ কিংবদন্তি যখন যেখানে থেকেছেন কেবল এঁকে গেছেন। জীবন যেখানে ডেকেছে, সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে সেখানে চলে গেছেন।

তিনি যে কতটা উদাসীন ছিলেন তাঁর অনন্য উদাহরণ হলো, তাঁর ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে যে তাঁর কোনো কোনো ছবি কারো বেড়া হিসেবে দৃশ্যমান কিংবা চায়ের দোকানের ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুলতান যখন লাউয়ের মাচা আঁকতেন তখন গ্রামের কোনো সাধারণ মানুষ এসে বলত, এটা আমার গাছের লাউ। গরু আঁকলে বলত, এ তো আমার গরু। শহরের মানুষের সপ্রশংস বাণীর থেকে গ্রামের মানুষের এই সহজ সরল মুগ্ধতা ছিল তাঁর কাছে বেশি মূল্যবান।

১৯৮৭ সালে ঢাকার গ্যেটে ইনস্টিটিউটে সুলতানের একটি প্রদর্শনী হয়। ৮০’র শেষ দিকে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোন-এ তাঁর শেষ প্রদর্শনীটি হয়। সে বছর আগস্ট মাসে ব্যাপক আয়োজন করে তাঁর গ্রামের বাড়িতে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়। এর পরপরই ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এই মহান শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।

শিল্পী এস এম সুলতান তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে বলে গিয়েছেন:
“আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে।”

তথ্যসূত্র:
১। আদম সুরত (তারেক মাসুদ)
২। উইকিপিডিয়া
৩। বাংলাপিডিয়া

   

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;