নমোফোবিয়া : ফোন হারানো চার্জ ফুরানোর ভয় যখন একটা রোগ



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
মোবাইল ফোন বুঁদ করে ফেলেছে আধুনিক প্রজন্মকে

মোবাইল ফোন বুঁদ করে ফেলেছে আধুনিক প্রজন্মকে

  • Font increase
  • Font Decrease

মোবাইল ফোন আমাদের আধুনিক জীবনকে অনেকাংশেই সহজ করে দিয়েছে। অনেক বড় সমাধান থেকে অতি তুচ্ছ প্রয়োজনের জন্যেও হাতের মোবাইলের উপর ঝুঁকে পড়ে অনেকেই। তার ওপর নতুন মাত্রা যোগ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সুবিধার চূড়ান্ত দেবার মাধ্যমে এই যে নির্ভরশীলতা তৈরি করেছে, তা জন্ম দিচ্ছে এক নতুন ধরনের সমস্যার। নমোফোবিয়া, ফোন হারানোর উৎকণ্ঠা কিংবা চার্জ ফুরিয়ে যাবার ভয়।

নমোফোবিয়া শব্দটি এসেছে ইংরেজি কয়েকটি শব্দের মিশ্রণে। Nomophobia = No + Mobile + Phone + Phobia। নমোফোবিয়াকে প্রথম সংজ্ঞায়ন করে যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংগঠন YouGov। সাদামাটাভাবে বললে ফোবিয়া হলো অযৌক্তিক ভয় বা অকারণ উৎকণ্ঠা। আর নমোফোবিয়া বলতে বোঝায় মোবাইলবিহীন থাকার ভয়। সিগনাল কিংবা ব্যাটারিজনিত কারণে মোবাইলের সাথে সংযোগ ছিন্ন হতে পারে, ক্ষণিকের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে; প্রভৃতি কারণে প্রিয়াবিরহের মতো মোবাইলপ্রেমিকের ভেতরে যে উৎকণ্ঠা, তাই নমোফোবিয়া। ২০০৮ সালে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৫৩ জন এই সমস্যায় আক্রান্ত। অর্ধেকের বেশি ব্যবহারকারী তাদের ফোন বন্ধ করেন না। গবেষণায় আরো দেখা গেছে এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566135919566.jpg

◤ নমোফোবিয়া: আধুনিক প্রযুক্তির প্রতিক্রিয়া ◢


ভ্রমণে কিংবা বাসায়—প্রায়ই এই ধরনের মানসিক বিভ্রান্তির দেখা মেলে। মনোবিজ্ঞানীরা একে “লো-ব্যাটারি অ্যাংজাইটি” বলে চেনেন। মানুষের জীবন দিনকে-দিন বিভিন্ন প্রযুক্তিতে ঘিরে ফেলছে। মানুষের কাজ করে দিচ্ছে নতুন নতুন ডিভাইস। সরাসরি কথা, সামাজিক যোগাযোগ, জিপিএস, গাড়ির সেবা, খাবারের অর্ডার, গেইম, ভিডিও বিনোদন, ব্যাংকিং, ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটর, পরিবারের ছবি প্রভৃতি এখন কেবলমাত্র একটি ছোট্ট যন্ত্রের মাধ্যমেই সম্ভব—সেলফোন।

জীবন যাপনের সুবিধার জন্যই মানুষ ক্রমশ এনালগ ছেড়ে ডিজিটাল পৃথিবীতে প্রবেশ করছে। সকল ধরনের কাজে সরাসরি নিজেকে না জড়িয়ে ঝুঁকছে অনলাইন সুবিধার প্রতি। আর তাই, অল্প সময়ের জন্য ব্যাটারিতে চার্জ না থাকা কিংবা কোনো কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ভয়ের উদ্রেক করে। হারিয়ে ফেলা কিংবা একা হয়ে যাবার ভয়।

ব্যাটারি যখন শেষ

আধুনিক যামানার ভৌতিক সিনেমাগুলোতেও দেখা যায়, সেলফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ার মানে একটা খারাপ কিছু ঘটতে চলছে। ব্যক্তিকে একা করে ফেলা ক্লাসিক হররগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ১৯৬০ সালের Psycho, ১৯৭৪ সালের The Texas Chain Saw Massacre, ১৯৮০ সালের The Shining এমনকি গত ২০১৭ সালের Get Out প্রায় একইভাবে ফুটিয়ে তুলেছে বিষয়টা। মোবাইল না থাকার দরুণ সৃষ্ট এই নিঃসঙ্গতায় ভীতি।

লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রযুক্তির ওপরেই মূলত আমরা দৈনন্দিন জীবনে ভরসা করে থাকি। ১৯৭০ সালের দিকে ইংরেজ রসায়নবিদ স্টেনলি হুইটিংহাম এর আবিষ্কার করেন। তিনি তখন Exxon Corporation-এ গবেষণায় মগ্ন। তবে লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারির আগমন ছিল রীতিমতো বিপ্লবের মতো। লিথিয়াম-আয়ন এবং লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারির মধ্যেকার পার্থক্য ইলেক্ট্রোলাইটের ব্যবহারে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566135953565.jpg

◤ ব্যাটারি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিস্ময়করভাবে ◢


লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারিতে কঠিন পলিমার ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করা হয়। যেমনটা polyacrylonitrile এবং এনোডে প্লাস্টিকজাতীয় পদার্থ। অন্যদিকে লিথিয়াম-আয়নে জৈব দ্রবণে ইলেক্ট্রোলাইট হিসাবে ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম লবণ। ফলে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তাড়াতাড়ি অতিরিক্ত গরম হয়ে পড়তে পারে।

আধুনিক যামানায় সেলফোনপ্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিপ্রস্তুতি। ব্যাটারি প্রস্তুতকারীরা মনোযোগী অধিক ধারণ ক্ষমতা আনতে। কিন্তু যখনই তারা ব্যাটারির সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, সেলফোন প্রস্তুতকারীরা সাথে সাথেই বের করছে নতুন কোনো ফিচার, যা পাওয়ার কমাবে। এভাবে সেলফোনের ফিচারগুলো ব্যাটারির পাওয়ার নামিয়ে আনে, আর প্রস্তুতকারীরা যোগ করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566136128928.jpg

◤ মোবাইল কোম্পানিগুলো এই উদ্বেগ কাজে লাগাচ্ছে ◢


মোবাইল কোম্পানিগুলো ক্রেতার এই উদ্বেগকে ব্যবহার করছে বেশ ভালোভাবেই। চার্জ দেবার জন্য ওয়্যারলেস সুবিধাসহ নতুন সেলফোন আসছে আজকাল। Qi Standard (উচ্চারণ. চি স্ট্যান্ডার্ড) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আরোহী পদ্ধতিতে চার সে.মি. দূরত্ব পর্যন্ত চার্জ দেওয়া সম্ভব।

চি পদ্ধতিটা মূলত তড়িৎচৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কাজ করে। সেলফোন কোম্পানিগুলো এই বিশেষত্বকে খুব দ্রুত ক্রেতার চাহিদার সাথে মানিয়ে নিচ্ছে। এই সুবিধাহীন পুরানা ধাঁচের মোবাইলগুলোর জন্য এডাপ্টরের মাধ্যমে পোর্টে সংযোগ দেওয়া যায়। এমনিতেই তারের মাধ্যমে চার্জ দেওয়ার চেয়ে ওয়্যারলেস চার্জ সময়বহুল। আর যদি এডাপ্টার ব্যবহার করা হয়, তবে তো কথাই নেই।

দ্য এন্ড্রয়েড পাই অপারেটিং সিস্টেম ব্যাটারি লো হয়ে গেলে ব্যবহারকারীকে নোটিফিকেশন পাঠায়। উপরের কোনায় চার্জের শতকরা প্রদর্শন তো আছেই। আইফোন এক্স তাদের ফোনের ব্যাটারি আইকন থেকে আইকন সরিয়ে ফেলেছে। দেখতে হলে যেতে হবে কন্ট্রোল সেন্টার। সে যা-ই হোক, উভয় ক্ষেত্রেই চার্জ ফুরিয়ে আসতে গেলে নোটিফিকেশন আসে, লো পাওয়ার মুডে চালানোর জন্য; যাতে কম চার্জ ফুরায়।

কাজ হোক আর না হোক, ব্যাটারির সক্ষমতা ক্রেতাকে ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবসার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর কাছে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টোপে পরিণত হয়েছে।

নমোফোবিয়ার লক্ষণ

বছর দশেক আগেও হয়তো কেউ প্রিয়তমার উদ্দেশ্যে বলত, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। কিন্তু হাল আমলে সেই স্থান দখল করেছে সেলফোন। মনোবিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য মতে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকেই ধরে নিতে হবে নমোফোবিয়ার লক্ষণ—
১) রাতে ঘুম ভেঙে যদি প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর সেলফোন চেক করতে হয়।
২) দুপুরে কিংবা রাতে খাবার সময়েও যদি মোবাইল প্রাধান্য পায়।
৩) ব্যাটারি ফুরিয়ে যেতে চাইলে যদি চার্জে দেবার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
৪) ফোনে সিগনাল না থাকলে যদি মনে হয়, জীবন থেকে বাইরে।
৫) যত ব্যস্ততাই থাক, যদি ফোনের জবাব দেবার জন্য ভেতর থেকে তাড়না আসে।
৬) ওয়াশরুমে পর্যন্ত ফোন হাতে করে নিয়ে যাবার অভ্যাস গড়ে উঠলে।
৭) এই আর্টিকেল পড়ার মধ্যে বেশ ক’বার যদি ফোন চেক করে ফেলা হয় 

নমোফোবিয়ার ক্ষতি

বেশিরভাগ সমস্যাই মনস্তাত্ত্বিক। তবে এর ফলাফল সদূরপ্রসারী। ব্যক্তিগত জীবন থেকে সামাজিক জীবনে বাধাগ্রস্ত হতে পারে তুচ্ছ এক অভ্যাসের কারণে। ক্রমানুসারে উল্লেখ করলে—
১) যেহেতু উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়, সেহেতু রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ব্যক্তির নিজের কাজের দিকে মনোযোগ কমিয়ে দেয়। ফলে উৎপাদন ক্ষমতায় কমে যায়।
২) সময়ের দারুণ অপচয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, একসাথে বহু কাজ করার মানে কোনো কাজই না করা। হাতে মোবাইল নিয়ে অন্য কাজ করতে চাওয়াটা অন্য অর্থে সময় নষ্টের নামান্তর।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566136283424.jpg

◤ নমোফোবিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করে ঘুমের প্যাটার্নে ◢


৩) ঘুমের প্যাটার্ন বিঘ্নিত করে। ফোন থেকে নীল আলো চোখে পড়া ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে মেলাটোনিন হরমোনের ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য, মেলাটোনিন হরমোন ঘুমের ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দায়ী।
৪) লাগাতার ফোনের সাথে লেগে থাকা চর্মরোগ, এলার্জি কিংবা নানা ধরনের রোগের জন্ম দিতে পারে।
৫) সর্বোপরি বন্ধু ও পরিবারের সাথে বিদ্যমান সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। বন্ধু বা পরিজনের সাথে কথা বলার সময় ঘন ঘন মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করা নিশ্চই ভালো দেখায় না। এই অভ্যাস কর্মক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত জীবনে ভয়াবহ ক্ষতিকর।

উপায় ও প্রতিকার

সব সমস্যারই সমাধান থাকে। নমোফোবিয়ার সমাধানও গবেষকদের ধারণায় বেরিয়ে এসেছে। তবে তা পুরোটাই নির্ভর করে ব্যক্তির অভ্যাস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার ওপর—
১) ঘুমের আগে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমানো, যেন নিদ্রা বিঘ্নিত না হয়।
২) নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণে আনা। সবরকম অ্যাপ থেকে সব ধরনের নোটিফিকেশন বিরক্তিকর।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566136344305.jpg

◤ মোবাইল না দেখে চালু করতে হবে ঘড়ি দেখার অভ্যাস ◢


৩) অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো ডিলিট করে দেওয়া। 
৪) মোবাইল না, সময় দেখার জন্য ঘড়ি ব্যবহারের অভ্যাস করা।
৫) নিজের জন্য ফোন-ফ্রি জোন তৈরি করা। কাজের সময় ফোন দূরে সরিয়ে রাখা।
৬) বন্ধু ও পরিবারের সাথে বেশি সময় ব্যয় করা। ফোনের সাথে সীমিত ও হিসাব করে সময় দেওয়া।

জীবন যাপনে আধুনিকায়ন মানুষকে সমাজবিমুখ করে দিয়েছে। নির্ভরশীল করে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর। আর তাই হাতের সেলফোনটা কেবল সেলফোন হয়ে নেই, পরিণত হয়েছে সবথেকে মূল্যবান সঙ্গী হিসাবে। মোবাইল হারানোর যে উদ্বেগ, তার পেছনের মনস্তত্ত্ব মূলত এটাই। আর তাই আগামী প্রজন্ম নমোফোবিয়া থেকে কিভাবে বের হবে কিংবা আদতে বের হতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;