কফি সমাচার



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা বাণিজ্য শিল্প হলো কফি

বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা বাণিজ্য শিল্প হলো কফি

  • Font increase
  • Font Decrease

কফি নামটা শুনলেই অনেকের মধ্যে চাঙ্গাভাব চলে আসে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা কিংবা একঘেয়ে ভাব দূর করতে কফির বিকল্প নেই। আর এই কারণেই বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা বাণিজ্য শিল্প হলো কফি। জেগে থাকতে হলে কফি চাই এমনই নিয়ম। অনেকের যেমন দিন শুরু হয় না, তেমনি অনেকের রাতজাগাও অসম্পূর্ণ থেকে যায় কফি ছাড়া।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/24/1566641523098.jpg
কফি মূলত একটি ফল


কফি মূলত একটি ফল। আমরা যে কফি পান করি, তা কফির বীজ বা বিন, গুঁড়ো করেই তবে তৈরি হয় কফি। ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে ডাচ koffie শব্দের মাধ্যমে coffee শব্দটি ইংরেজি ভাষায় গৃহীত হয়। এই ডাচ শব্দটি আবার তুর্কি শব্দ kahve থেকে উদ্ভূত; তুর্কি শব্দটি আরবি qahwa শব্দেরই পরিবর্তিত রূপ। এই শব্দান্তরের ভেতরেই লুকিয়ে আছে কফির বিস্ময়কর ইতিহাস।

কফির আবিষ্কার

কফির আবিষ্কার নিয়ে বেশ কিছু মতবাদ রয়েছে। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ গল্পটি একজন মেষ পালককে ঘিরে। নবম শতকে ইথিওপিয়ায় বাস করত খালদি নামের এক দরিদ্র মেষপালক। একদিন খেয়াল করল তার ছাগলগুলো অন্যদিনের চেয়ে আজ একটু বেশি লাফালাফি করছে। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখল লাল জামের মতো একটি ফল খাচ্ছে ছাগলগুলো। ঘটনার বর্ণনাসহ কারণ জানতে ফলগুলো সে নিয়ে যায় মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে। তারপর সেই ইমাম এবং তার ছাত্ররা মিলে এই ফল থেকে তৈরি করে পানীয়, যা আজ কফি হিসেবে পরিচিত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/24/1566641883872.jpg
পাখি কফি খাচ্ছে


অন্য আরেকটি মত অনুযায়ী, কফি মূলত ইয়েমেনে আবিষ্কার হয়। সেখানে ঘোতুল আব্দুল নুরুদ্দীন আবুল আল-হাসান আল-সাদিলি নামে একজন সুফি ছিলেন। তিনি একবার ইথিওপিয়া সফর করতে গেলে একটি পাখিকে লাল রঙের একটি ফল খেতে দেখে কৌতূহলবশত নিজেও তা খেয়ে দেখেন। এরপর আগের সেই গল্পের মতোই তিনিও চাঙ্গা অনুভব করেন এবং আবিষ্কার হয় কফির।

বিক্রির দিক থেকে তেলের পরেই রয়েছে কফি

বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে তেল। আর এরপরই যে বস্তু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তা হলো কফি। সারা পৃথিবীতে বছর জুড়ে প্রায় ৫০০ বিলিওন কাপ কফি তৈরি হয়। তবে কফিপানের পরিমাণের দিক থেকে আমেরিকানদের ধারেকাছেও কেউ নেই। আমেরিকানরা গড়ে প্রতিদিন ৪০০ মিলিওন বা ৪০ কোটি কাপ কফি পান করে। বছর শেষে যার পরিমাণ প্রায় ১৪৬ বিলিওন। এরমধ্যে শুধু নিউইয়র্ক শহরে সারা পৃথিবীর তুলনায় প্রায় সাত গুণ বেশি কফি পান করা হয়।

পাপের বাহন কফি

কফি আবিষ্কারের পেছনে মুসলমানদের অবদান থাকলেও একটা সময় সৌদি কিংবা মিশরের মতো দেশে ফতোয়া জারি করে কফিপান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একই পরিস্থিতি দেখা দেয় ইউরোপেও। ইতালির ভেনিসেও পৌঁছে গিয়েছিল কফি। কিন্তু এই কফি মুসলমানদের আবিষ্কার হওয়ার কারণে এবং রেড ওয়াইনের জায়গা গ্রহণ করে ফেলায় কট্টর ক্যাথলিকেরা একে শয়তানের তিক্ত আবিষ্কার বলে মন্তব্য করেন। যদিও পরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সবখানেই কফি জায়গা করে নেয় সগৌরবে।

সারা বিশ্বে প্রায় ৫০টির মতো দেশ কফি উৎপাদনের সাথে জড়িত। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। আবিষ্কার অন্যত্র হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট উৎপাদিত কফির ৪০ শতাংশ আসে ব্রাজিল থেকে। বিভিন্ন দেশে ও স্থানে কফি উৎপাদিত হলেও আমেরিকার হাওয়াই-এর কফি সবচেয়ে দামি এবং সর্বোৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।

কফির প্রকারভেদ

পৃথিবীব্যাপী যত কফি আছে তাকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা যায়—এরাবিকা এবং রোবুস্টা। এরাবিকাই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। রোবুস্টা খুব তিতকুটে হওয়ার ফলে এর চাহিদা খুব বেশি নেই।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/24/1566642015176.jpg
এরাবিকা এবং রোবুস্টা কফির দুই জাত


তবে পানীয় হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় কফি হলো এসপ্রেসো। “এসপ্রেসো” শব্দের অর্থ আক্ষরিকভাবেই “জোর করে কিছু বের করে দেওয়া!” এটি তৈরি করা হয় ফুটন্ত পানি কফির গুঁড়োর ভেতর দিয়ে চালনা করে। জেনে অবাক হবেন সাধারণ কফির তুলনায় প্রতি একক ঘনত্বে ক্যাফেইন প্রায় তিনগুণ বেশি থাকে এসপ্রেসো কফিতে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/24/1566642084888.jpg
ক্যাফেইন প্রায় তিনগুণ বেশি থাকে এসপ্রেসো কফিতে


অন্যদিকে ডিকেইফ নামে একধরনের কফি আছে যেটাকে বলা হয় ক্যাফেইনমুক্ত কফি। এই কফি বানানোর সময় বেশি রোস্ট করা হয় বলে অনেক ক্যাফেইন উড়ে যায়।

দামি কফি

দুনিয়ার অন্যতম দামি কফি—“Kopi Luwak”—এর প্রতি আউন্স বীজের দাম ৬০০ ডলার! অবাক হলেন? এখানেই শেষ না। অবাক হওয়ার এখনো অনেক বাকি। সুমাত্রান নামে এক জাতের জংলি বিড়াল আছে যাদের এই কফির বীজগুলো খাওয়ানো হলেও হজম হয় না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/24/1566642179467.jpg
দামি কফির নেপথ্য নায়ক সুমাত্রান বিড়াল ◢


ফলে আংশিক পরিবর্তিত হয়ে বেরিয়ে আসে বিষ্ঠার সাথে। বলা ভালো সুমাত্রান বিড়ালের বিষ্ঠা থেকে উদ্ধারকৃত বীজগুলো থেকেই তৈরি করা হয় পৃথিবীর অন্যতম দামি কফি “Kopi Luwak”।

রোগ মুক্তি এবং আক্রান্ত হওয়ার বাহন কফি

কফি একই সাথে রোগমুক্তির এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ হতে পারে। কাউকে মেরে ফেলেতে চাইলে তাকে একাধারে প্রায় ১০০ কাপ কফি খাওয়ালেই চলবে। আবার একই সাথে পরিমিত কফি পান হতে পারে আপনার জন্য আশীর্বাদ। এতে যেমন অবসাদ কাটে তেমনি এতে পাওয়া গেছে নারীদের স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান, আছে ডায়াবেটিস টাইপ ২ এবং বয়ঃবৃদ্ধদের আলঝেইমার রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে সক্ষম নানান উপাদান। কফিপানে হৃদপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে।

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;