মানবতার মহান সেবক মহীয়সী মাদার তেরেসা



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
মানব সেবার পবিত্র ব্রত নিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মাদার তেরেসা

মানব সেবার পবিত্র ব্রত নিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মাদার তেরেসা

  • Font increase
  • Font Decrease

ভালোবাসার মানেই হচ্ছে শান্তির জন্য কাজ করা, ঈশ্বরের জন্য কাজ করা—বিশ্বাস করতেন তিনি। ঈশ্বরের একজন প্রতিনিধি হিসেবে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য। আলবেনিয়ায় জন্ম নিয়েও ভালোবাসা ও শান্তির বাণী বয়ে নিয়ে এসে সুদূর ভারতের কলকাতা শহরে স্থাপন করেছিলেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ’। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে সুদীর্ঘ অর্ধ-শতক পর্যন্ত মানুষকে দিয়ে গিয়েছেন সেবা, দাঁড়িয়েছেন দরিদ্র, দুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের পাশে। মানবতার সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৯ সালে লাভ করেছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। কিন্তু নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকাও তিনি দান করে দিয়েছিলেন মানবতার সেবায়। ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট ধরণীর বুকে আবির্ভাব ঘটেছিল এই মহীয়সী নারীর। আজ তাঁর ১০৯তম জন্মদিন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566819493541.jpg

শৈশবে মাদার তেরেসা


টেরিজার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে। তাঁর পিতা-মাতা প্রদত্ত নাম মেরি তেরেসা বোঝাঝিউ। ব্যাপ্টাইজড হওয়ার পর তাঁর নাম হয় অ্যাগনেস গঞ্জা বোঝাজিউ। তবে, তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন মাদার তেরেসা নামেই। জীবনের প্রথম আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি কাটান জন্মস্থান আলবেনিয়াতে। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে আসেন। উদ্দেশ্য খ্রিস্টধর্ম প্রচার করা। তবে, তিনি শুধু খ্রিস্টের বাণী বা খ্রিস্টধর্ম প্রচারেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন, যে মানবতা তাঁর কাছে ছিল ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566819585739.jpg
তারুণ্যে মাদার তেরেসা। তখনও খ্রিস্টান নান হিসেবে জীবন শুরু করেননি তিনি


কলকাতায় মিশনারী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার সময় তিনি প্রত্যক্ষ করেন পঞ্চাশের মন্বন্তর। ১৯৪৬-এর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও মারা যায় অনেক মানুষ। এইসব ঘটনা গভীর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর মনে।

এর পরপরই ১৯৪৮ সাল থেকে দরিদ্রদের মধ্যে মিশনারি কাজ শুরু করেন তিনি। পোশাক হিসেবে পরতে শুরু করেন নীল পাড় দেওয়া একটা সাদা শাড়ি। ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে কাজ শুরু করেন বস্তি ও হতদরিদ্রদের এলাকায়। স্থাপন করেন স্কুল, শুরু করেন ক্ষুধার্ত ও দুস্থদের ডাকে সাড়া দিতে। ১৯৫০ সালে প্রায় শূন্য হাতে স্থাপন করেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’। কিন্তু প্রথম দিকে সেবার কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে বেশ কষ্টই করতে হয়েছিল তাকে। গরীব ও দুস্থদের সেবা দিতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংকুলানের জন্য ঘুরেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই হতাশা, সন্দেহ ও একাকিত্বের শিকার হতে হয়েছে তাকে। মাত্র ১৩ জন সদস্য নিয়ে ‘মিশরানিজ অব চ্যারিটিজ’ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু আজ সেখানে কাজ করে প্রায় ৪,০০০ নান। চ্যারিটির অধীনে পরিচালিত হয় এতিমখানা ও এইডস আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র, আশ্রয়হীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে আক্রান্তদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে চ্যারিটির সদস্যরা।

নগর কর্তৃপক্ষের দেওয়া জমিতে ১৯৫২ সালে মুমূর্ষুদের জন্য গড়ে তোলেন আশ্রয় ও সেবাদান কেন্দ্র। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে রূপান্তরিত করেন ‘কালিঘাট হোম ফর ডাইং’-এ। এটি ছিল দরিদ্রদের জন্য নির্মিত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে আসা দুস্থদের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমানভাবে থাকার সুযোগ দেওয়া হতো। মুসলিমদের দেওয়া হতো কুরআন পড়া, হিন্দুদের গঙ্গাজলে স্নান করা ও ক্যাথলিকদের দেওয়া হতো লাস্ট রাইটের সুবিধা।

এর কিছুদিন পরেই কুষ্ঠরোগে আক্রান্তদের জন্য একটি সেবাকেন্দ্র খোলেন তিনি, যেটার নাম দেওয়া হয় শান্তিনগর। ‘মিশরানিজ অব চ্যারিটি’ লালন-পালন করত অনাথ ও এতিম শিশুদের। কিন্তু শিশুদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওদের জন্য আলাদা একটা হোম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন মাদার তেরেসা। তাই, ১৯৫৫ সালে ওদের জন্য স্থাপন করা হয় ‘নির্মল ভবন’।

ধীরে ধীরে মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ দেশি-বিদেশি অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি ও দাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ১৯৬০-এর দশকে চ্যারিটির তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় ভারতের অনেক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও সেবাকেন্দ্র। ভারতের বাইরে চ্যারিটির প্রথম কেন্দ্র স্থাপিত হয় ভেনিজুয়েলায়, ১৯৬৫ সালে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566819681906.jpg
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করছেন মাদার তেরেসা


১৯৭০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে অসহায় ও অসুস্থ মানুষদের একজন মহান সেবিকা হিসেবে মাদার তেরতেসার খ্যাতি। এরই ফলস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে অর্জন করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। ১৯৮০ সালে ভারতের একজন নাগরিক হিসেবেই লাভ করেন দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ম’। পুরো আশির দশকে শান্তির একজন দূত হিসেবে ভ্রমণ করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার পর অবনতির দিকে যেতে থাকে তাঁর স্বাস্থ্য। ১৯৯১ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর আরো অবনতি ঘটতে থাকে তার হৃদরোগের। চ্যারিটির প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু নানদের আপত্তি ও অনুরোধে প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যান। ১৯৯৬-এ শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একেবারে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। এর কিছুদিন পরে চ্যারিটির প্রধান-এর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। অবশেষে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকলে ১৯৯৭-এর ৫ সেপ্টেম্বর পরলোকগমন করেন তিনি।

মানবতার জন্য অকাতরে কাজ করে গিয়েছেন তিনি। কাজ করেছেন দুস্থ ও বিপদাপন্ন বাংলাদেশিদের জন্যও। মুক্তিযুদ্ধের পর শরণার্থী ও অবকাঠামো সমস্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা ছিল বীরাঙ্গনা সমস্যা। সমস্যাটি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা তথৈবচ। আত্মহত্যা বা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হওয়াটাই যেন ছিল তাদের সমাধান। সেই ক্রান্তিকালে মাদার তেরেসা এসেছিলেন বাংলাদেশে। ঢাকায় পাঁচটি বাসা ভাড়া করে বীরাঙ্গনাদের জন্য খুলেছিলেন আশ্রয়কেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধে লাঞ্ছিতদের যথাযথ সম্মান দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাদের বীরাঙ্গনা নামে আখ্যায়িত করে ব্যবস্থা করেছিলেন বিয়ে দেওয়ারও। অনেকেই এগিয়ে এসেছিল তাদের বিয়ে করতে। অনেক বীরাঙ্গনাই সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন; সেসব সন্তানের অনেকেই আশ্রয় পেয়েছিল মাদার তেরেসার।

মাদার তেরেসার কাছে সব মানুষই ছিল ঈশ্বরের প্রতিনিধি। তাই, নিজে খ্রিস্টান নান হয়েও অকাতরে সেবা ও সাহায্য বিলিয়ে গিয়েছেন সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের কাছে। তাই তো আজও মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এই মহীয়সী নারীকে। মানুষ ও মানবতাকে নিয়ে তাঁর দেওয়া মহান বাণীগুলো আজও নাড়া দেয় আমাদের অন্তরকে। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো মাদার তেরেসার অমর ও অসাধারণ কিছু উক্তি—

● ভালোবাসার কাজই শান্তির কাজ।
● একটি হাসি দিয়ে শান্তি শুরু হয়।
● আমরা ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা করি কারণ আমরা বর্তমানকে নষ্ট করছি।
● নিখুত ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না, এটি শুধু দেয়।
● ভালোবাসার কথাগুলো হয়তো খুব সংক্ষিপ্ত ও সহজ হতে পারে কিন্তু এর প্রতিধ্বনি কখনো শেষ হয় না।
● যদি তুমি মানুষকে বিচার করতে যাও তাহলে ভালোবাসার সময় পাবে না।
● সর্বশ্রেষ্ঠ রোগগুলির মধ্যে অন্যতম হলো কেউ কারো নয়।
● আনন্দ ভালোবাসার একটি জাল যা দ্বারা আপনি আত্মার বন্ধন গড়তে পারেন।
● তুমি যখন কারো সঙ্গে দেখা করো তখন হাসিমুখ নিয়েই তার সামনে যাও। কেননা হাস্যোজ্জ্বল মুখ হলো ভালোবাসার শুরু।
● আনন্দই প্রার্থনা, আনন্দই শক্তি, আনন্দই ভালোবাসা।
● আপনি যদি ১০০ জন লোককে খাওয়াতে না পারেন, তাহলে মাত্র একজনকে খেতে দিন।
● ভালো কাজগুলো পরস্পর সংযুক্ত যা প্রেমের শৃঙ্খলা গঠন করে।
● ছোট বিষয়ে বিশ্বস্ত হও, কারণ এর ওপরেই তোমার শক্তি নির্ভর করে।
● কেবল সেবা নয়, মানুষকে দাও তোমার হৃদয়। হৃদয়হীন সেবা নয়, তারা চায় তোমার অন্তরের স্পর্শ।
● হৃদয়কে স্পর্শ করতে চায় নীরবতা। কলরবের আড়ালে নীরবেই পৌঁছাতে হয় আর্তের কাছে।
● আমি ঈশ্বরের হাতের একটি ছোট পেন্সিল যা দ্বারা ঈশ্বর পৃথিবীতে ভালোবাসার চিঠি লিখছেন।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;