ছুটির দিনে ঘুরে আসার মতো ঢাকার আশেপাশে ৫টি গন্তব্য



ফিচার ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর

মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর

  • Font increase
  • Font Decrease

অনেকটাই যান্ত্রিক ও একঘেয়েমিতে ভরা রাজধানী ঢাকার জীবনযাপন থেকে একটু ভিন্নতার ছোঁয়া প্রত্যাশা করে অনেকেই। মুক্ত বাতাসে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে বা বৈচিত্রময় কিছুর সাথে খানিকটা সময় কাটিয়ে তারা দূর করতে চান নিত্যদিনের ক্লান্তিকে। আবারও সতেজ ও চাঙ্গা হয়ে ফিরে আসতে চান কর্মক্ষেত্রে। আর তাদের জন্যই রয়েছে ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসা যায়, এমন কিছু চমৎকার জায়গা। ছুটির দিনে এসব জায়গায় দিনে এসেই দিনে ফিরে যাওয়া সম্ভব।
আসুন, পরিচিত হওয়া যাক এমন কিছু স্থানের সাথেঃ

১। মৈনট ঘাট

মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত মৈনট ঘাট অবস্থিত ঢাকার দোহারে। সেখানে পদ্মার জলরাশি, নদীর বুকে ভেসে বেড়ানো অনেক ধরনের নৌকা, নদীর তীরে হেঁটে বেড়ানো লোকেদের দেখলে ক্ষণিকের জন্য আপনার বিভ্রান্তি হতেই পারে যে আপনি পদ্মার পারে নয়, দাঁড়িয়ে আছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তীরে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143714901.jpg
অনেকটা কক্সবাজারের ফ্লেভার পাওয়া যেতে পারে মৈনট ঘাটে


মৈনট ঘাট ঘোরার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বৃষ্টি অথবা একটু ঠান্ডার সময় এবং অবশ্যই বিকেল বেলা। গ্রীষ্মের সময়ে এখানে বাদামের চাষ হয় এবং ঘাটের একপাশ জুড়ে দেখা যায় বাদামের বিস্তীর্ণ ক্ষেত। আবার বর্ষার সময়ে পুরোটা পদ্মার পানিতে তলিয়ে যায়। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। শুকনায় বা শীতের সময়েও এর সৌন্দর্যের কমতি নেই। তখন দেখা যাবে পদ্মা নদীর শান্ত রূপ। একটা সন্ধ্যায় পদ্মা নদীতে সূর্যাস্ত দেখলে পরবর্তী একশোটা সন্ধ্যার কথা মনে থাকবে। ঢাকার আশেপাশে হওয়ার কারণে প্রচুর মানুষ এখানে আসছে, ঘুরছে। স্পিডবোট, ট্রলার বা ছোট্ট নৌকা নিয়ে নদীর বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকেই। ঘাটের থেকে ট্রলার বা নৌকা নিয়ে সন্ধ্যার সূর্যাস্ত উপভোগ করা এখানকার মূল আকর্ষণ। 

ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়টি হচ্ছে গুলিস্তানের গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিভিন্ন পরিবহনে চেপে বসা। ৯০ টাকা ভাড়া আর দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টার বিনিময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাট। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে আসবেন। মৈনট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে শেষ বাসটি ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৬ টায়।

যারা গাবতলী অথবা সাভারের আশেপাশে থাকেন, তারা হেমায়েতপুর থেকে লোকাল সিএনজিতে সরাসরি নবাবগঞ্জ আসতে পারবেন। ভাড়া ১২০ টাকা।

২। নুহাশ পল্লী

কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে গড়া স্বপ্নভুবন ‘নুহাশ পল্লী’। ৪০ বিঘা জমির ওপর গাজীপুরে অবস্থিত এই বাগানবাড়ি, নুহাশ চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট ও পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্র। সবুজ গাছপালা দিয়ে আবৃত নুহাশপল্লীর সবটুকু। নুহাশপল্লীতে ঢুকে একটু সামনে গিয়ে মাঠ পেরিয়ে বামপাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজ ঘর। এর পাশেই পুরনো লিচু বাগান। লিচু বাগানেই চিরনিদ্রায় শায়িত সবার ভালোবাসার হুমায়ূন। এই বাগানের উত্তরে জাম ও দক্ষিণে আম বাগান। এছাড়াও রয়েছে অনেক অনেক প্রজাতির গাছ-গাছালী। রয়েছে সুইমিং পুল ও পুকুর। তবে, সব কিছুর ‍উপরে দর্শনার্থীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে এর শান্ত-সমাহিত পরিবেশ ও সবুজ শ্যামলীমা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143845541.jpg
দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে নুহাশ পল্লীর প্রাকৃতিক পরিবেশ 


খুব সহজেই যাওয়া যায় নুহাশ পল্লী। ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বা বনশ্রী বাসে চড়ে প্রথমে পৌঁছতে হবে গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। সেখান থেকে টেম্পুতে করে যাওয়া যাবে পল্লীতে। এছাড়া মাইক্রো বাসে করেও দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারেন অনেকে। তবে, নুহাশ পল্লীতে ঢোকার জন্য ফি দিতে হয়। এই ফি ১২ বছরের উপরের সবার জন্য ২০০ টাকা। 

৩। পানাম নগর

বেশ ব্যতিক্রমধর্মী একটি স্থান এই পানাম নগর। এখানকার পুরনো বাড়িঘর ও স্থাপনাগুলো দেখতে দেখতেই পার হয়ে যায় অনেকটা সময়। বিশ্বের ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক স্থানের একটি এই পানাম নগর। ‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড’ ২০০৬ সালে একে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি স্থাপনার একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এই পানামনগর ছিল ঈশাখার আমলে বাংলার রাজধানী। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন কিছু ভবন ও স্থাপনা এখানে রয়েছে, যার সাথে জড়িত বাংলার বারো ভুঁইয়াদের ইতিহাস।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143893227.jpg
মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর


এখানেই রয়েছে সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর। এতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের অবহেলিত ও নিরক্ষর কারিগরদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী। জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিতে রয়েছে কাঠ খোঁদাই, চারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, লোকজ অলঙ্কারসহ বহুকিছু। লোকশিল্প জাদুঘরের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০টাকা। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143961621.jpg
সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরে রয়েছে আবহমান বাংলার শিল্পপণ্যের নিদর্শন


পানাম নগরের কাছেই রয়েছে মেঘনা নদী। নদী ওপারে রয়েছে কাশবন। আর নৌকা ভ্রমণ করে সেখান থেকে যেতে পারেন কাছেরই মায়াদ্বীপে। নদীর পার বা চরে বসে সেখানকার নির্মল ও মুক্ত বাতাসে কেটে যাবে আপনার নিত্যদিনের জড়তা ও ক্লান্তি। সচল হবেন নতুন করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567144072096.jpg
মায়াদ্বীপের নয়নাভিরাম দৃশ্য ◢


ঢাকার থেকে মাত্র ২৭ কিঃমিঃ দূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁতে অবস্থিত পানাম নগর। খুবই সহজ ঢাকা থেকে এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ‘মোগরপাড়াগামী’ যে কোনো বাসে চেপে চলে আসতে হবে সোনারগাঁওয়ের মোগারপাড়া। সেখান থেকে টেম্পুতে করে ১৫-২০ মিনিটে চলে আসা যাবে পানামনগরে। একইভাবে, টেম্পুতে করে অল্প সময়ের ভেতরেই আসতে পারবেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে। অবশ্য ময়না দ্বীপে যেতে হলে ওখানকার মেঘনার ঘাট থেকে ট্রলারে করে যেতে হবে। 

৪। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসার মতো অন্যতম চমৎকার জায়গা এই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। বিস্তৃর্ণ শালবনের ভিতর প্রাচীর ঘিরে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সাফারি পার্ক। ভেতরে ঢুকতেই রয়েছে সরু পাকা রাস্তা। দুদিকে বিস্তৃত নানা প্রজাতির গাছ। এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই সাফারি পার্কটি অনেকটাই গড়ে তোলা হয়েছে থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। চলতে চলতে অনেক ধরনের প্রাণীই সেখানে দেখতে পাবেন। সাফারি পার্কটিতে বন্যপ্রাণীরা বিচরণ করে স্বাভাবিকভাবে। জেব্রা, জিরাফের মতো তৃণভোজী নিরীহ প্রাণী ছাড়াও সেখানে রয়েছে বাঘ, সিংহের মতো মাংসাশী প্রাণীও। তবে, সেখানে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। দুই ইঞ্চি পুরু স্বচ্ছ কিন্তু শক্ত প্লাস্টিকের দেয়াল দিয়ে এসব প্রাণীকে আলাদা করে রাখা হয়েছে অন্যান্য জায়গা থেকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567144136672.jpg
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গেলে দেখা যাবে এরকম আকর্ষণীয় সব বন্যপ্রাণী


পার্ক সম্পর্কে যে কোনো তথ্য জানার জন্য এখানে প্রথমেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু চত্বর, একটি তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র। এরপর পার্কের গাড়িতে চড়ে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পারেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ, জলহস্তি, নীল গাইসহ আরো অনেক ধরনের বন্যপশু। তবে, সেটা করতে গেলে জনপ্রতি ফি দিতে হবে ২০০টাকা। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ প্রজনন স্পট ও পেলিক্যান আইল্যান্ড। শুধু তাই নয়, বিশাল জায়গা নিয়ে রাখা হয়েছে পাখিদেরও। ওয়াচ টাওয়ার থেকেও উপভোগ করতে পারবেন সাফারি পার্কের মনোরম ও আকর্ষণীয় দৃশ্য। ওঠার ব্যবস্থা আছে হাতির পিঠেও। 

ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী যে কোনো বাসে চড়ে প্রথমে যেতে হবে গাজীপুরে। এরপর টেম্পুজাতীয় যানে করে সেখান থেকে যেতে হবে বাঘের বাজার এলাকায়। সেখান থেকে আরো কিছুদূরে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রবেশপথ।

৫। সাদুল্লাপুর গোলাপ বাগান

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামটি বর্তমানে পরিচিত ‘গোলাপ গ্রাম’ নামে। এখানে বছরজুড়েই গোলাপের গন্ধে ভরে থাকে সারা গ্রাম। বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান ছাড়াও এখানে রয়েছে রজনীগন্ধা, জারভারা ও গ্লাডিওলাসের বাগান। ঢাকার সিংহভাগ গোলাপের চাহিদা এই গ্রামের উৎপাদন থেকেই মেটানো হয়। এক দিনের অবসরে বেড়িয়ে আসতে পারেন গোলাপের এই রাজ্য থেকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567144208723.jpg
আপনার মন ও চোখের প্রশান্তি হিসেবে কাজ করতে পারে এই বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান


হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এখানকার কয়েকটি জমিদারবাড়ি থেকে। এছাড়া বিরুলিয়া ব্রিজের কাছে রয়েছে প্রাচীন ও বিশাল একটি বটগাছ। 

এখানে আসতে হলে প্রথমে, উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় নর্থ টাওয়ারের কাছ থেকে লেগুনায় করে দিয়াবাড়ি আসতে হবে। সেখান থেকে মেইনরোড ধরে এগিয়ে লোকাল গাড়িতে বিরুলিয়া ব্রিজ পর্যন্ত গিয়ে আরেকটি অটো ভাড়া করে যেতে হবে সাদুল্লাহপুর গোলাপ গ্রামে।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;